প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – এই রাজ্যে ভাতা, ভর্তুকি দিয়ে সমস্ত ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্তত তেমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। এক্ষেত্রে ২০২৬ এর ভোট বৈতরুণী পার হতে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মত প্রকল্পকে যে সামনে এনে মহিলাদের ভোট নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করবে তৃণমূল, সেই সম্পর্কেও নিশ্চিত বিরোধীরা। তবে যে লক্ষ্মীর ভান্ডারকে হাতিয়ার করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছেন, সেই লক্ষ্মীরা রাজ্যে নিরাপদ আছে তো? এই প্রশ্ন বারবার করে উঠছে। শুধু তাই নয়, তৃণমূল তো লক্ষীর ভান্ডারের মত প্রকল্প এনেছে। তাহলে তাকে কুপোকাত করতে তো পাল্টা বিজেপিকে কিছু একটা আনতে হবে! তাহলেই তো মানুষ তাদের প্রতি ভরসা রাখবে! আর এবার সেই রকমই একটি ঘোষণা করে রীতিমত বড় চমক দিয়ে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।

 

জানা গিয়েছে, এদিন সন্দেশখালির ন্যাজাটে সভা করতে যান রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর সেখানে বর্তমান তৃণমূল সরকার মহিলাদের যেভাবে পাঁচশো-হাজার টাকা করে ভাতা দিচ্ছে, তা যে ভিক্ষা ছাড়া আর কিছু নয়, তা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন তিনি। তবে এই প্রথম নয়, শুভেন্দু অধিকারী এর আগেও প্রত্যেকটি সভা থেকে এই কথা বলেছেন যে, এই সামান্য ভাতা, ভিক্ষার কাছে আপনারা মাথা নত করবেন না। নিজেদের সম্মান যদি রক্ষা করতে চান, তাহলে মাথা উঁচু করে তৃণমূলের এই ভাতা ফিরিয়ে দিয়ে বিজেপিকে ভোট দিন। তাহলেই রাজ্যে সুশাসন আসবে, ছেলে মেয়েরা চাকরি পাবে। আর আপনাদের এই সামান্য ভাতার জন্য তৃণমূল নেতাদের দরজায় দরজায় ঘুরতে হবে না। এই কথা আগেও শুভেন্দু অধিকারীর মুখ থেকে শোনা গিয়েছে। কিন্তু এবার এই কথা বলার পাশাপাশি এই কথা বোঝানোর পাশাপাশি তিনি আরও একটা মারাত্মক চমক রাজ্যের সাধারণ মা, বোনেদের সামনে প্রতিশ্রুতি মারফত নিয়ে এলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।

 

সন্দেশখালির সভা থেকে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় এলে বাংলার মহিলাদের মাসে তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হবে।” এখন তৃণমূল প্রশ্ন করতেই পারে যে, যে ভাতাকে ভিক্ষা বলে শুভেন্দু বাবুরা আক্রমণ করছেন, তারাও তো সেই একই পথেই হাঁটছেন! তারাও তো সামান্য টাকা দিয়ে মা-বোনেদের ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছেন! তবে তৃণমূলের এই যুক্তি অবশ্য বিজেপির যুক্তির কাছে খাটছে না। কারণ গেরুয়া শিবিরের দাবি, আজকালকার দিনে ৫০০-১০০০ টাকায় কারও দিন চলে না। তৃণমূল এই রাজ্যে কারও চাকরি দেয় না, শিল্প নেই, কারও বাড়িতে কর্মসংস্থান নেই। সেই জায়গায় শুধুমাত্র মহিলাদের ভোট পাওয়ার জন্য তাদের ৫০০-১০০০ টাকা করে দেওয়া আসলে ভিক্ষা ছাড়া আর কিছু নয় বলেই দাবি গেরুয়া শিবিরের।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই রাজ্যে মহিলাদের নিরাপত্তা ঠিক কোন জায়গায় আছে, তা তো সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন। ৫০০-১০০০ টাকা দিয়ে কি মহিলাদের ভোট একেবারে সম্পূর্ণরূপে কিনে নেওয়ার কথা ভাবছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তা তো নয়। আজকে তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের জন্য পুলিশকর্তার মা, বউকে হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে। ফলে সাধারণ বাড়ির মা, বোনেদের কি অবস্থা, তা তো সহজেই অনুমেয়। কিভাবে আরজিকরের তরুণী শেষ হয়ে গেল, তা তো গোটা রাজ্যের মানুষ দেখেছে। সন্দেশখালিতে কি চলেছে, তার তো ভয়াবহ তথ্য সেখানকার মানুষরা ফাঁস করে দিয়েছেন। ফলে এই রাজ্যে মা-বোনেদের নিরাপত্তা ৫০০-১০০০ টাকার বিনিময়ে যে ধুলুন্ঠিত হয়ে যাচ্ছে, সেটা কি তৃণমূল নেতারা দেখতে পাচ্ছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৃণমূলকে চাপে রাখতে গেলে তার ফর্মুলাই প্রয়োগ করতে হবে। তৃণমূল যে ফর্মুলা প্রয়োগ করেছে, তার পাল্টা ফর্মুলা প্রয়োগ করে রাজ্যের মানুষের মন জয় করতে ভাবে বিজেপিকে। তাই সঠিক জায়গাটাই সঠিকভাবে ধরেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্য যে রাজ্যের মহিলাদের কাছে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে, আগামী দিনে যে মহিলা ভোট পাওয়া যথেষ্ট সমস্যার কারণ হবে তৃণমূলের কাছে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।