প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- সম্প্রতি বাংলায় এসে নরেন্দ্র মোদী তৃণমূল সরকারের মুখোশ খুলে দিয়েছেন। যেভাবে তিনি উত্তরবঙ্গের সভা থেকে তৃণমূল সরকারকে দুর্নীতি থেকে শুরু করে রাজ্যের অরাজকতা নিয়ে আক্রমণ করেছেন, তাতে গাত্রদাহ শুরু হয়ে গিয়েছিল এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, এবার আর কেন্দ্র তাদেরকে ছেড়ে কথা বলবে না। তিনিও পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রীকে এমন সমস্ত ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন, যা কার্যত রুচিহীন বলেই দাবি করেছিল বিশেষজ্ঞরা। তবে যে তৃণমূলের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, বাংলা কারও ভিক্ষা চায় না, বাংলা কেন্দ্রের কাছে মাথা নত করবে না, সেই তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবার রাজ্যের বকেয়া চাইতে যাচ্ছেন দিল্লিতে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে। এই খবর সামনে আসতেই নানা মহলে নানা চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, আগামী সোমবার দিল্লি যেতে পারেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেখানে আগামী মঙ্গলবার বাংলার যে বকেয়া অর্থ, ১ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে একটি বৈঠক করতে পারেন তিনি। আর এখানেই অনেকে বলছেন যে, হঠাৎ করে এই সময়টাকেই কেন বেছে নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তিনি কি সত্যিই বাংলার জন্য বকেয়া অর্থ নিতে যাচ্ছেন, নাকি প্রধানমন্ত্রীকে যে সমস্ত ভাষায় তিনি আক্রমণ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী যেভাবে রাজ্যে এসে তৃণমূল সরকারের মুখোশ খুলে দিয়েছেন, তাতে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের পেছনে সেটিং তত্ত্বকে খাড়া করছেন অনেকে। তবে বিজেপি অবশ্য তা মানতে নারাজ।
গেরুয়া শিবিরের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনো প্রশাসনিক বৈঠক হলে সেখানে বিরোধী জনপ্রতিনিধিতের ডাকেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিজেপি বিরোধী শাসিত রাজ্য হলেও তাদের সম্মান দেন। প্রত্যেকটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন প্রশাসনিক স্বার্থে। অতীতেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেছেন। এবারেও যদি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বকেয়া নিয়ে দেখা করতে চান, তাহলে অবশ্যই দেখা করতেই পারেন। এর সঙ্গে রাজনীতিকে গোলানোর কোনো কারণ নেই। তৃণমূল সরকার মানুষের সমস্ত টাকা নয়ছয় করেছে, এটা কেন্দ্র ভালো মতই জানে। আগে রাজ্যকে হিসাব দিতে হবে, তারপরেই তারা টাকা পাবে। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই এখন কেন্দ্রের কাছে গিয়ে প্রাপ্য বকেয়া অর্থের দাবি করুন না কেন, ২০২৬ এ পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকার হবে এবং তারা কেন্দ্রের পক্ষ থেকে আনা টাকা সঠিক কাজে লাগাবে এবং তখনই রাজ্যের মানুষ সুশাসন পাবে বলেই দাবি পদ্ম শিবিরের।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বর্তমান সময়ে এই দিল্লি সফর যদি সত্যিই হয়, তাহলে তা রাজনৈতিক হোক বা প্রশাসনিক, দুই দিক থেকেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ সম্প্রতি বাংলা দখলের যে সুর নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে অমিত শাহ বেঁধে দিয়েছেন, তাতে কিন্তু তৃণমূলের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তারা বুঝতে পারছে যে, ২০২৬ তাদের পক্ষে কতটা কঠিন। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যে তিক্ত সম্পর্ক কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের তৈরি হয়েছে, সেই সময়টাকে বেছে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই দিল্লি সফর খুব একটা সরল, স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিতে পারছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।