প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট– পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে অনুপ্রবেশ এবং রোহিঙ্গাদের স্বর্গরাজ্য হয়ে গিয়েছে। ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেছে বেছে হিন্দুদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কেটে কি করে রোহিঙ্গা এবং অনুপ্রবেশদের জায়গা দিতে হয়, তার মরিয়া চেষ্টা করছে তৃণমূল বলেই অভিযোগ বিজেপির। তবে তৃণমূলের পক্ষ থেকে পাল্টা দাবি করা হচ্ছে, সীমান্ত পাহারা দেয় বিএসএফ। তাই সেই সীমান্ত দিয়ে কেন অনুপ্রবেশ ঢুকছে, এর জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জবাব দিতে হবে। তবে এবার রাজ্যে এসে অনুপ্রবেশ কারা চাইছে এবং তাদের জন্য এই অনুপ্রবেশ হচ্ছে, তার ভাণ্ডা ফোর করে দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
বলা বাহুল্য, অতীতেও বারবার শোনা গিয়েছে যে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বারবার করে এই রাজ্যের কাছে জমি চাওয়া হয়েছে বিএসএফের জন্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই জমি দেয়নি রাজ্য সরকার। আর এখানেই প্রশ্ন যে, রাজ্য যদি জমি না দেয়, তাহলে সীমান্তের সুরক্ষা কি করে মজবুত হবে? কারণ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তো চাইছে যে, সীমান্ত দিয়ে যাতে কেউ অনুপ্রবেশ করতে না পারে। তাহলে রাজ্যের জমি না দেওয়াই কি সব থেকে বড় কাল হয়ে যাচ্ছে? রাজ্য জমি না দিয়ে কি নিজেরাই অনুপ্রবেশ ঢুকিয়ে ভোটব্যাঙ্ককে মজবুত করতে চাইছে? সরাসরি এই ব্যাপারে এক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই দায়ী করেছেন অমিত শাহ।
গতকাল নেতাজী ইন্ডোরের সভা থেকে অনুপ্রবেশ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমাকে একজন তৃণমূল সাংসদ সংসদে প্রশ্ন করেছিলেন, বিএসএফ কি করছে! মমতা দিদি আমরা আপনার থেকে জমি চেয়েছি। পুরো জমি দিয়ে দিন। কাজ শেষ করতে দিন। একটা পাখিও প্রবেশ করতে পারবে না। আপনি জেনে বুঝে সীমান্তে জমি দেন না। যাতে অনুপ্রবেশ চলতে থাকে এবং আপনার ভোটব্যাঙ্ক বাড়তে থাকে। যাতে আপনার পরে আপনার ভাইপোও মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু এমনটা হবে না।”
বিরোধীদের বক্তব্য, ঠিক কথাই বলেছেন অমিত শাহ। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ইচ্ছাকৃতভাবে কেন্দ্রীয় সরকারকে জমি দিচ্ছে না। আর তার ফলে সীমান্তের সুরক্ষা আঁটোসাঁটো করা সম্ভব হচ্ছে না। আসলে এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী খুব ভালো মতই জানেন যে, অনুপ্রবেশ না হলে তার ভোটব্যাংক সুরক্ষিত থাকবে না। তাই জমি না দিয়ে কেন্দ্রের ঘাড়ে এতদিন তিনি অনেক দোষারোপ চাপিয়েছেন। কিন্তু এবার আসল সত্যি যেভাবে অমিত সাহ ফাঁস করে দিলেন, তাতেই বোঝা গেল যে, এই রাজ্য সরকার অনুপ্রবেশকে কতটা প্রশ্রয় দিচ্ছে! আর এদের ভোটব্যাংক যে সেই অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের দ্বারা সুরক্ষিত, তা দিনের আলোর মত পরিষ্কার বলেই দাবি করছেন তারা।
পর্যবেক্ষকদের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভেবেছিলেন, এভাবেই বুঝি দিন কেটে যাবে। তিনি কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপাবেন, তার দল দোষ চাপাবে, তার দলের পক্ষ থেকে বলা হবে যে, বিএসএফ সীমান্ত সামলায়, তারা অনুপ্রবেশদের আটকাতে পারছে না। আর সাধারণ মানুষও তেমনটাই বুঝে থাকবেন। কিন্তু রাজ্যে এসে সকলের চোখ খুলে দিলেন অমিত শাহ। তিনি যে কথা বললেন, তারপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এখন বড় চ্যালেঞ্জ, এর উত্তর দেওয়া। তিনি কি পারবেন, অমিত শাহ অনুপ্রবেশ নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেই বক্তব্যকে খন্ডন করতে? যদি তা না পারেন, তাহলে অবিলম্বে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সীমান্তের সুরক্ষার জন্য যে জমি রাজ্যের কাছে চাইছে, সেই জমি দিয়ে দিক রাজ্য।
তাহলেই তো বোঝা যাবে যে, রাজ্য সরকার অনুপ্রবেশ আটকাতে চাইছে। আর যদি তারা এরপরেও জমি না দেয়, তাহলে এটাও স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বিরোধীরা যে অভিযোগ করে এই রাজ্যের সরকারের বিরুদ্ধে, নবান্নের বিরুদ্ধে যে, তৃণমূলের প্রশ্রয়ে অনুপ্রবেশকারীদের ভোটব্যাঙ্ক সুরক্ষিত রাখার জন্য কাজ করছে প্রশাসন, সেটাতেই কিন্তু শীলমোহর পড়বে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রবেশকারীদের ওপর ভরসা রেখে যে ভোটব্যাংক, তার পর্দাও ফাঁস হয়ে যাবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।