প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট-
রাত পোহালেই রথযাত্রা। আর তার আগে কে রথযাত্রায় সব থেকে বেশি অংশগ্রহণ করবে, কতটা হিন্দুদের মন জয় করা যাবে, তা নিয়ে বাংলায় শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি। কিছুদিন আগেই দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন হয়েছে। যাকে অবশ্য মন্দির বলে নয়, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলেই আখ্যা দিতে বেশি পছন্দ বিজেপির। বারবার করে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দাবি করছেন, এটা কোনো মন্দির নয়, এটা একটা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। তবে পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই দীঘাতে পৌঁছে গিয়ে রথযাত্রা যাতে ভালোমত সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সমস্ত রকম প্রস্তুতি খতিয়ে দেখছেন। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রায় রশি টানবেন, ঠিক তখনই একই দিনে কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় পাল্টা কর্মসূচি নিতে চলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। যে কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে তিনি এই বার্তাও দেওয়ার চেষ্টা করবেন যে, দীঘার জগন্নাথ মন্দির থেকে যে প্রসাদ বিতরণ হচ্ছে, সেটা আদতে প্রসাদ নয়, সেটা হচ্ছে হালালের মিষ্টি। কিন্তু তিনি যে উদ্যোগ নিচ্ছেন, সেটা সম্পূর্ণরূপেই ভগবানের প্রসাদ। আর সেই প্রসাদ মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাবে।
বলা বাহুল্য, ইতিমধ্যেই দীঘাতে সাজো সাজো রব শুরু হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেখানে পৌঁছে প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে শুরু করে মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করে রথযাত্রা যাতে প্রথমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাই সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য সমস্ত দিক দেখভাল করছেন। তবে এর পাল্টা রথযাত্রায় নিজের বড় কর্মসূচির কথা ঘোষণা করে দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানিয়েছেন, বেলা বারোটার সময় তিনি কলকাতায় থাকবেন। আর বেলা তিনটের সময় তমলুকে গৌরাঙ্গ প্রভুর যে মন্দির, সেখানে পুরী থেকে জগন্নাথ দেবের মহা প্রসাদ আসছে। সেই মহাপ্রসাদ আগামী পাঁচ দিন ধরে বাড়ি বাড়ি বিতরণ করা হবে। আর এই কথা বলার পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী শাসকদলকে খোঁচা দিয়ে এই কথাও বলে দিয়েছেন যে, এটা কোনো চাচার দোকানের হালালের মিষ্টি নয়।
আর শুভেন্দু অধিকারীর এই বক্তব্যের পরেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, তিনি হিন্দু সংস্কৃতিকে তুলে ধরার পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রচার অনেকটাই কেড়ে নিলেন। দীঘায় যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমবার জগন্নাথ দেবের মন্দির উদ্বোধন হওয়ার পর রথযাত্রায় অংশ নেবেন, তখন কলকাতা থেকে শুরু করে তমলুকের মত জায়গায় দাপিয়ে বেড়াবেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। শুধু তাই নয়, যে দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসাদ নিয়ে এত বিতর্ক তৈরি হয়েছে, অনেকেই বলছেন যে, সেটা মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দোকান থেকে তৈরি হওয়া হালালের মিষ্টি। এক্ষেত্রে সেই রকম কোনো প্রসাদ নয়। মানুষের কাছে প্রকৃত জগন্নাথ দেবের প্রসাদ পৌঁছে দিতে পুরী থেকে আসা মহাপ্রসাদ, তিনি তমলুকের গৌরাঙ্গ প্রভুর মন্দির থেকে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন বলে জানিয়ে দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। আর বিরোধী দলনেতার এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়েই সনাতনী সংস্কৃতির মানুষরা যেমন উজ্জীবিত হবেন, ঠিক তেমনই যতই দীঘাতে মন্দির উদ্বোধন করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার সরকার হিন্দুপ্রেমী বলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করুন না কেন, তাদের সম্পর্কে মানুষের মনে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের মনে একটা বড় প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি হবে এবং তারা সকলেই শুভেন্দু অধিকারীর মত সনাতনী মুখকেই সব থেকে বেশি ভরসা করবেন বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।