প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- উত্তরবঙ্গে তৃণমূল এবার আরও ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে, তা তারা খুব ভালোমতোই বুঝতে পারছে। সেই জন্য যারা রিজেক্টেড নেতা, যাদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, বেছে বেছে তাদেরকে নিয়ে তৃণমূল বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, উত্তরবঙ্গে তারা কতটা শক্তিশালী। সবাই তাদের দিকে আসছে। গতকাল এরকমই একজন নেতা কংগ্রেসের শঙ্কর মালাকার, তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর থেকেই তৃণমূলের পক্ষ থেকে এমন একটা ভাব দেখানো হচ্ছে, যেন তারা বিশাল কোনো এক নেতাকে নিজেদের দলে যোগদান করিয়েছে। আসলে এই সমস্ত কিছুই যে বিধানসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গের মাটি দখল করার একটা প্ল্যানিং, তা কারোরই বুঝতে বাকি নেই। অন্যদিকে শংকরবাবুও দলবদল করার পর বলেছেন যে, তিনি যখন বিধায়ক ছিলেন, তখন তিনি কাজ করতে পারছিলেন না। কারণ বিরোধী দলে থেকে মানুষের নাকি কাজ করা যায় না। পাশাপাশি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে গেলে নাকি তৃণমূলই একমাত্র বিকল্প। তাই তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে এসেছেন। আর একদিকে শংকরবাবুর এই প্রত্যেকটা কথা ধরে ধরে উত্তর এবং অন্যদিকে এই ছোট মাপের নেতাকে নিয়ে যে নাচানাচি তৃণমূল দিনভর করেছে, তাতে তৃণমূলের সেই নাচানাচি বন্ধ করে দিলেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ।

এদিন উত্তরবঙ্গের কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক শঙ্কর মালাকারের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে বিজেপির শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে প্রশ্ন করা হয়। আর সেই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “রাজ্যে কংগ্রেসের কোনো অস্তিত্ব নেই। গোটা দেশে কংগ্রেস সাফ হয়ে যাওয়ার মুখে। সেই হতাশা থেকেই শঙ্করদা তৃণমূলে যোগদান করেছেন। ওনার বয়স হয়েছে, তৃণমূলকে টক্কর দেওয়ার ক্ষমতা আর ওনার নেই। তাই এত বছর তৃণমূলের সঙ্গে লড়াই করে এখন তাদের সামনে আত্মসমর্পণ করলেন। উনি হয়ত তৃণমূলের কৃপায় আর এক দফা বিধায়ক হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন সত্যি হবে না। দার্জিলিং জেলার যে কোনো আসনে দাঁড়ালে আমরা ওনাকে হারাব।” তবে এখানেই থেমে থাকেননি বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। তৃণমূলে যোগদানকারী শংকর মালাকারকে কটাক্ষ করে তিনি এটাও বলেছেন যে, যে তৃণমূল কংগ্রেসে তিনি যোগদান করেছেন, সেটা শুধু দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে। উত্তরবঙ্গের মানুষকে তারা মানুষ বলে ভাবে না। আর সব থেকে বড় কথা, তৃণমূলে যোগদান করে কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা শঙ্কর মালাকার বিরোধী দলে থেকে কাজ করা যায় না বলে যে সমস্ত কথা বলেছেন, তাকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করেছেন বিজেপির শঙ্করবাবু। তিনি নিজের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, “বিরোধী দলে থেকে কাজ করা যায় কিনা, সেটা শিলিগুড়ির মানুষকে জিজ্ঞাসা করে দেখা উচিত।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শংকর মালাকার একসময় প্রভাবশালী নেতা ছিলেন, এটা অত্যন্ত ঠিক কথা। কিন্তু কালের নিয়মে এখন তার গুরুত্ব কমেছে। তিনি বুঝতে পারছেন যে, কংগ্রেসে থেকে নিজের স্বার্থ সুরক্ষিত হবে না। তাই ২০২৬ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলকে বেছে নিয়ে যদি একটা টিকিট পাওয়া যায়, যদি একটু লড়াই করা যায়, তার জন্যই যে তার এই দলবদল, সেই ব্যাপারে সকলেই নিশ্চিত। তবে তার মত নেতাকে দলে নিয়ে তৃণমূল যে নাচানাচি সকাল বেলা থেকে শুরু করেছিল, তাতে একেবারে জল ঢেলে দিলেন বিজেপির শংকর ঘোষ।

পর্যবেক্ষকদের মতে, উত্তরবঙ্গে যত দিন যাচ্ছে, ততই তৃণমূলের অবস্থা শোচনীয় হচ্ছে। তারা এখন সেখান থেকে যারা রিজেক্টেড বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা রয়েছেন, তাদেরকে নিজেদের দলে টানার চেষ্টা করছে। কিছুদিন আগে জন বার্লার মত নেতাকে তারা নিয়েছে। আর এখন শংকর মালাকারকে নিয়ে তারা দেখানোর চেষ্টা করছে যে, উত্তরবঙ্গের সবাই তৃণমূল মুখী হচ্ছে। কিন্তু মানুষ জানে যে, উত্তরবঙ্গে তৃণমূল আর সমর্থন পাবে না। তাই বাইরে বাইরে নেতাদের দলে নিয়েও, মানুষের মন কাড়ার মত ক্ষমতা যে তৃণমূলের নেই, তা বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ দিনের আলোর মত পরিষ্কার করে দিলেন। যার ফলে এক ঢিলেই এই শংকর মালাকারের তৃণমূলে যোগদান নিয়ে তাদের যে নাচানাচি, সেই নাচানাচি অনেকটাই স্তিমিত হতে হতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।