প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – মাত্র চার মাসের মাথায় ফের বদল ঘটল ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনার পদে। এইবার নতুন কমিশনার হিসাবে দায়িত্বে এলেন কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা। এতদিন তিনি ব্যারাকপুর ট্রেনিং সেন্টারে ছিলেন। গত বছর তাঁকে লালবাজারের গোয়েন্দাপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে পাঠানো হয়েছিল সেই দায়িত্বে। অন্যদিকে, বিদায়ী সিপি অজয় ঠাকুরকে নতুন করে ডিআইজি, সিআইডি পদে বদলি করা হয়েছে। রাজ্যের পুলিশ মহলে এই রদবদলকে ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে, কারণ এটি ২০১৯ সালের পর থেকে ব্যারাকপুরে সপ্তমবারের মতো সিপি পদে বদল।

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতি, অশান্তি এবং প্রাণহানির ঘটনা একাধিকবার ঘটেছে। সেই সময় থেকেই লাগাতার পুলিশ কমিশনার বদল লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুনীল চৌধুরী, তন্ময় রায়চৌধুরী, মনোজ বর্মা, অজয় ঠাকুর, অলোক রাজোরিয়া – একে একে অনেকেই এসেছেন ও গিয়েছেন এই পদে। মনোজ বর্মা ছাড়া আর কেউ বিশেষ সাফল্য দেখাতে পারেননি বলে পুলিশের একাংশের অভিমত। চলতি বছরের শুরুতে নৈহাটিতে এক তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনার পরেই অলোক রাজোরিয়াকে সরিয়ে ফের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অজয় ঠাকুরকে। কিন্তু এবার চার মাসের মধ্যেই তাঁকেও সরানো হল, যা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

পুলিশ প্রশাসনের কিছু সূত্রের মতে, এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে রয়েছে আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি। বিরোধীদের একাংশের অভিযোগ, অজয় ঠাকুর শাসক দলের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। ভোটের সময়ে এই অভিযোগকে ভিত্তি করে নির্বাচন কমিশন তাঁকে সরিয়ে দিতে পারে— এমন সম্ভাবনা প্রশাসনের পক্ষেও উড়িয়ে দেওয়া হয়নি। সে কারণেই, তুলনায় ‘নিরপেক্ষ’ ভাবমূর্তির অধিকারী মুরলীধরকে ফের দায়িত্বে আনা হল বলে মত বিশেষজ্ঞদের। উল্লেখ্য, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান হিসেবে লম্বা সময় কাজ করার পর তাঁকে হাওড়া সিটির সিপি করার কথা ভাবা হলেও, পরে ট্রেনিং সেন্টারে পাঠানো হয়েছিল মুরলীধরকে। এখন তাঁকে দেওয়া হল গুরুদায়িত্ব— ‘অশান্ত’ ব্যারাকপুরকে নিয়ন্ত্রণে আনা।

মুরলীধরকে ঘিরে বিতর্কের ইতিহাস থাকলেও, তাঁর কাজের ধারায় প্রশ্ন তোলেননি অধিকাংশ আন্দোলনকারী। বিশেষ করে, গত বছর আলোড়ন ফেলা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ ও খুনের মামলার তদন্তে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন থেকে শুরু করে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করা এবং তদন্তের যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা— সব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সামনে। পরবর্তীতে সেই মামলার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে গেলে তাঁদের রিপোর্টও মুরলীধরের দাবিকে সমর্থন করে। যদিও কসবা গুলি কাণ্ডের পর তাঁর গোয়েন্দা বিভাগীয় নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল এবং তারপরেই তাঁকে বদলি করা হয়। তবে এবার তাঁর ফেরত আসা এবং গুরু দায়িত্ব পাওয়া ভোটের মুখে নবান্নের কৌশলী প্রশাসনিক পদক্ষেপ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।