প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট- অবশেষে আজ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেলেন সুবক্তা বলে পরিচিত দলের দীর্ঘদিনের নেতা রাজ্যসভার সদস্য শমীক ভট্টাচার্য। তাকে জমকালো ভাবে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। আর সেখানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে নতুন সভাপতিকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি বিদায়ী সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দিলেন বড় বার্তা। তৃণমূলের পক্ষ থেকে বিজেপির এই নয়া রাজ্য সভাপতিকে নিয়েও বিভিন্ন কথা বলা হয়েছিল। তার সম্পর্কে বিভিন্ন অভিযোগ করার পাশাপাশি তৃণমূল এখন আবার বলতে শুরু করেছে যে, অনেক যোগ্য ব্যক্তি ছিল, তারপরেও কেন তাদের বঞ্চিত করে শমীক বাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হলো? আসলে তৃণমূল খুব ভালো মতই বুঝতে পেরেছে যে, সুকান্ত মজুমদারের পর শমীক ভট্টাচার্যের মত বিজেপির দীর্ঘদিনের নেতা দায়িত্ব পাওয়ার কারণে আগামী ২৬ এর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া তাদের কাছে আরও চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাই বিজেপির মধ্যে যাতে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়িয়ে দেওয়া যায়, তার জন্য সুকৌশলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে একটা চেষ্টা হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর সেটা ধরতে পেরেই দলকে রীতিমত ঐক্যবদ্ধ করে বড় বার্তা দিলেন সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার।

এদিন বিজেপির পক্ষ থেকে নয়া সভাপতির নাম ঘোষণা করা হয়। বাংলার ক্যাপ্টেন হিসেবে ২৬ এর নির্বাচনী বৈতরণী যার নেতৃত্বে হবে, সেখানে দায়িত্বে বসেন শমীক ভট্টাচার্য। আর তাকে সংবর্ধনা জ্ঞাপনের অনুষ্ঠানেই বক্তব্য রাখতে গিয়ে সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দলীয় কর্মীদের আরও বেশি করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে যেভাবে বিজেপিতে আদি এবং নব্যের গন্ডগোল রয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, তাকে কার্যত খণ্ডন করে বিজেপি কতটা ঐক্যবদ্ধ, মঞ্চ থেকেই তা বুঝিয়ে দেন সুকান্তবাবু। কি বলেছেন তিনি?

সুকান্তবাবু বলেন, “বিজেপি পরিবারতান্ত্রিক দল নয়। বরং বিজেপি একটি পরিবার। আমরা সকলে দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজ কে এসেছেন, কাল কে এসেছেন, আমরা সবাই বিজেপি। বাড়ির মেয়ের বিয়ে হলে মা লকার থেকে ঠাকুমার সোনার হার বের করে আনেন। কেউ সেই হারকে পুরোনো বলে না। কারণ সোনা সোনাই থাকে। বিজেপি তেমনই খাঁটি সোনা। নতুন, পুরনো বলে এখানে কিছু নেই। আদি, নব্য বলে কিছু নেই। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা লড়াই করতে চাই।”

আর সুকান্তবাবু এদিন যে বক্তব্য রাখলেন, তা দেখে রীতিমত উজ্জীবিত হয়ে উঠছেন গেরুয়া শিবিরের কর্মী সমর্থকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজ্য সভাপতি থাকার সময়ও এত পরিণত হতে দেখা যায়নি সুকান্তবাবুকে। তৃণমূলের পক্ষ থেকে এমন কিছু পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়া হচ্ছে, যেখানে বোঝানো হচ্ছে যে, সুকান্ত মজুমদারকে সরিয়ে দেওয়া হলো, তিনি অত্যন্ত দুঃখিত। কিন্তু বিজেপির মত দলে কোনো পদ চিরস্থায়ী নয়। এটা তো আর তৃণমূলের মত প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি নয়। নিজেদের ভাবনা থেকে না বেরোতে পেরেই এই ধরনের কথা বলে বিজেপিকে কালিমা লিপ্ত করার চেষ্টা করছে বলেই দাবি গেরুয়া শিবিরের। তবে সেই সমস্ত কিছুকে পাত্তা না দিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করাই যে সব থেকে বড় কাজ, এক্ষেত্রে নতুন-পুরোনো বলে, দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে তৃণমূলের পক্ষ থেকে যে সমস্ত কথা ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাতে যে কর্মীদের পা দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, দলকে ক্ষমতায় আনাই যে এখন প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত, তা রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরে যাওয়ার পরেও যেভাবে জোরের সহকারে শমীকবাবু সূচনা পর্বে দলীয় কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করলেন সুকান্ত মজুমদার, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, তৃণমূল বিজেপিকে যতই ভাঙানোর চেষ্টা করুক না কেন, ২৬ এর আগে আরও ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে গেরুয়া শিবির। যার ফলে তৃণমূল নিজেদের ঘর কতটা সামলাতে পারবে, নিজেরাই ভেঙে খানখান হয়ে যাবে না তো? সেই নিয়েই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।