এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > মুকুলকে কয়লা মন্ত্রকে দেওয়া অনেক ভাবনা চিন্তার ফসল? মমতাকে মাত দিতে শাহের মাস্টারস্ট্রোক?

মুকুলকে কয়লা মন্ত্রকে দেওয়া অনেক ভাবনা চিন্তার ফসল? মমতাকে মাত দিতে শাহের মাস্টারস্ট্রোক?


মুকুল রায় বিজেপিতে যোগদানের পর থেকেই জল্পনা কল্পনা চলছিল যে তাঁকে হয় গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হবে অথবা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায় ঠাঁই দেওয়া হবে। কিন্তু, বারবার জল্পনা উঠলেও শেষপর্যন্ত তা দিনের আলোর মুখ দেখছিল না। কিন্তু অবশেষে বিজেপিতে যোগদানের প্রায় আড়াই বছর পর – অবশেষে তিনি জায়গা পেতে চলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভায়। সবকিছু ঠিক থাকলে, আগামীকালই কেন্দ্রীয় সরকারের পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে শপথ নিতে চলেছেন বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য।

কিন্তু, এই খবর সামনে আসার সাথেসাথেই প্রশ্ন উঠছে – হঠাৎ করে কয়লা মন্ত্রক কেন? অভিজ্ঞ মহল বলছেন, মুকুল রায়কে কয়লা মন্ত্রকে দায়িত্ব দেওয়ার পিছনে আসলে রয়েছে অমিত শাহের এক সুচতুর পরিকল্পনা। ২০২১-এর বিধানসভা মহাযুদ্ধের অনেক আগেই কার্যত তৃণমূল নেত্রীর জমি অনেকটা কেড়ে নেওয়ার জন্যই এই মাস্টারস্ট্রোক দিচ্ছেন ভারতীয় রাজনীতির চাণক্য হিসাবে পরিচিত অমিত শাহ। মুকুল রায়কে এই দায়িত্ব দিয়ে কার্যত তিনি এক ঢিলে অনেক গুলি পাখিই মেরে দিলেন।

প্রথমত, মুকুল রায় যখন অনেক অভিমান নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়েছিলেন, তখন ঘাসফুল শিবির থেকে আওয়াজ তোলা হয়েছিল – মুকুল রায় কাঁচরাপাড়ার অখ্যাত গলি থেকে উঠে এসে ভারতের রেলমন্ত্রী হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বদান্যতায়! এখন দল ছাড়ায়, মুকুল রায় কার্যত ফুরিয়ে যাবেন, রাজনৈতিকভাবে শেষ হয়ে যাবেন! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়া মাথা থেকে সরে যাওয়ায় তাঁকে নাকি আর রাজনীতির ময়দানে খুঁজেই পাওয়া যাবে না! কিন্তু মুকুল রায়, বিজেপিতে গিয়েই পদ বা মন্ত্রীত্ব পেলেন না!

তিনি পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনে রীতিমত অঙ্ক কষে বিজেপিকে সাফল্য দিয়ে, নিজের যোগ্যতাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীত্ব ছিনিয়ে নিলেন। অর্থাৎ, কেউ আঙুল তুলতে পারবেন না, যে শুধুমাত্র তৃণমূল থেকে এসেছেন বলেই তিনি কিছু ‘পেয়ে’ গেলেন! তাছাড়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে থাকার সময় তিনি হয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী বা স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু, এবারে তাঁকে করা হচ্ছে পূর্ণমন্ত্রী। অর্থাৎ, বিক্ষুব্ধ তৃণমূলীদের স্পষ্ট বার্তা – বিজেপিতে এস, নিজের যোগ্যতা প্রমান কর, তৃণমূল করে যতটা পেয়েছ, তার থেকে অনেক বেশি কাজের সুযোগ ও পরিধি পাবে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এ তো গেল মন্ত্রীত্বের কথা – এবার আসা যাক কয়লা মন্ত্রকের প্রসঙ্গে। রাজনৈতিক মহলের মত, আগামী বছরে হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে দুটি আক্রমণের ঢেউ সবথেকে বেশি তাড়া করবে তা হল – কর্মসংস্থান ও রাজ্যের অর্থনৈতিক হাল। আর এই দুই সমস্যার সমাধানে তৃণমূল নেত্রী দিয়েছিলেন এক মহাচাল! বীরভূমের দেউচা-পাঁচামি কয়লা খাদান! মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছিলেন, এই কয়লা খাদান হলে, কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি – দুই নাকি বদলে যাবে। এমনকি, এর উদ্বোধনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত দিয়ে আসেন।

কিন্তু, গেরুয়া শিবিরের অন্দরে কান পাতলে শোনা যায়, এই কয়লা খাদান করতে গিয়ে পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র ঠিকমত নেওয়া হয় নি। তাছাড়াও, এখানকার আদিবাসীদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও ঠিকমত করা হয় নি। এখন, মুকুল রায় কয়লামন্ত্রকে আসা মানে – বিধানসভার আগে যদি তা চালু করে নির্বাচনী ইস্যু বানাতে হয়, তাহলে মুকুল রায়ের দপ্তরে বারবার ছুটতে হবে। তাঁর কাছেই নিতে হবে ছাড়পত্র! এদিকে এই প্রকল্পে যা জট তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া নাকি ছাড়ানো মুশকিল।

ফলে, বিধানসভার আগে দেউচা-পাঁচামি চালু হলে যতটা ক্রেডিট মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাবেন, ঠিক ততটা ক্রেডিট মুকুল রায়ের হাত ধরে বিজেপিও পাবে। সুতরাং, বিধানসভার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি বড় অস্ত্র কার্যত ভোঁতা করে দিতে চলেছেন অমিত শাহ। রাজনৈতিক মহলের আরেক অংশের মতে, সেক্ষেত্রে দেউচা-পাঁচামি চালুই হয়ত হল না! তৃণমূলের প্রচার হবে, কেন্দ্রের অসহযোগিতায় এত বড় কর্মযজ্ঞ চালু করা গেল না! সেক্ষেত্রে তো ব্যাকফুটে বিজেপি?

কিন্তু, অনেকেই আবার জানাচ্ছেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের ক্ষমতাও কিন্তু কম নয়। সেক্ষেত্রে, কেন্দ্র সরকার আগ বাড়িয়ে রাজ্যের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেও পারে। আর সেই হাত ধরলে – আবারো ক্রেডিট ভাগ ৫০-৫০। আর না ধরলে, বিজেপির প্রচারের অস্ত্র হবে রাজ্যের অসহযোগিতা! যা স্বাভাবিকভাবেই বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপিকে ‘এক্সট্রা মাইলেজ’ দেবেই! কিন্তু, এর থেকেও বড় একটি কারণ রয়েছে বলে প্রায় সকলেই মনে করছেন – যা নিয়ে সরকারিভাবে কেউই মুখ খুলছেন না।

তবে, আকারে-ইঙ্গিতে যে কথা জানাচ্ছেন, তার নির্যাস – যে বিশেষ নেতার কারণেই মুকুল রায়কে একদিন দলত্যাগ করতে হয়েছিল, তাঁর নাকি পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত কয়লা খনির সঙ্গেই একটা ‘বিশেষ সম্পর্ক’ আছে। মুকুল রায়ের মত পোড়খাওয়া লোক সেই মন্ত্রকের শীর্ষে বসা মানে – অনেক কিছুই আর এত সহজে হবে না! তাঁর মত পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ খুব ভালো করেই জানেন – বাংলার রাজনীতিতে কে কোন গলি দিয়ে কিভাবে ঘুরপাক খান। সুতরাং, সেই ‘বিশেষ সম্পর্কের’ সুতো কাটতেই কি অমিত শাহের এই মাস্টারস্ট্রোক? কৌতূহলী চোখে চেয়ে রয়েছে রাজনৈতিক মহল!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!