এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > ভেস্তে যাওয়ার পথে বিজেপির রথযাত্রার স্বপ্ন, ক্রমশ বাড়ছে হতাশা-ক্ষোভ নীচুতলার কর্মীদের – কোন পথে সামাল দেবেন রাজ্য নেতৃত্ত্ব?

ভেস্তে যাওয়ার পথে বিজেপির রথযাত্রার স্বপ্ন, ক্রমশ বাড়ছে হতাশা-ক্ষোভ নীচুতলার কর্মীদের – কোন পথে সামাল দেবেন রাজ্য নেতৃত্ত্ব?


বাংলায় নিজেদের দলীয় সংগঠনকে চাঙ্গা করতে এবং বঙ্গ রাজনীতির শীর্ষে থাকতে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এখন প্রায় সব সময়ই তোপ দাগছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু, ‘গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা’ পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়েও তা বিশবাঁও জলে চলে যাওয়ায় কার্যত হতাশ রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তর ৬ মুরলীধর সেনের ম্যানেজারেরা – হতাশ দলীয় কর্মীরাও। কিন্তু তার সঙ্গেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে এই কর্মসূচি নিয়ে ঠিকঠাক পরিকল্পনার অভাব নিয়েও।

প্রসঙ্গত, বাংলায় গেরুয়া ঝড় তুলতে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে গণতন্ত্র বাঁচাও নামক এক রথযাত্রা কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। যাকে ঘিরে বিজেপি কর্মী সমর্থক তো বটেই, সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্দীপনা ছিল তুঙ্গে। কিন্তু আইনি জটিলতার জেরে এবার কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চেও সেই রথযাত্রা নিয়ে প্রবল ধাক্কা খেলেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। আর একের পর এক এই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েও তা সফল না হওয়ায় রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ত্বের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমতে শুরু করেছে দলের অনেক কর্মী সমর্থকদের মধ্যে বলে সূত্রের খবর।

গেরুয়া শিবিরের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, অতীতে বিহার বা উত্তরপ্রদেশে বিজেপির রথযাত্রা চূড়ান্তরূপে সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু বিহার বা উত্তরপ্রদেশের রাজনীতির সঙ্গে বঙ্গের রাজনীতির তো আকাশ-পাতাল তফাৎ। সেখানে, গো-বলয়ের ফর্মুলা কি কাজ করবে? তা কেন ভেবে দেখা হয় নি? তাছাড়া, বাংলায় এই রথ বের করতে চাইলে রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে যে বাধা আসবে – তা তো জলের মতোই স্পষ্ট ছিল। তার জন্য কি যথাযথ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল?

শীর্ষনেতৃত্ত্বের কোপে পড়ার ভয়ে অনেক নেতাকর্মীই এখন প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। কিন্তু, এতবড় কর্মসূচি নিয়ে তা সফলভাবে রূপায়ন করার কোন দিশা এখনও দেখতে না পাওয়ায় ক্রমশই হতাশা বাড়ছে দলীয় কর্মীদের বলে সূত্রের খবর। এমনকি, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শীর্ষনেতার কথায়, রথযাত্রা সফলভাবে রূপায়িত না হতে পারে এমন পরিস্থিতি তৈরী হওয়ায়, এই নিয়ে পারস্পরিক একটা দোষারোপের যেন আবহ তৈরী হয়েছে। যা, অনেক সময়েই দলীয় নীচুতলার কর্মীদের কাছে ভুল বার্তা নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি, এই নিয়ে নাকি স্বয়ং দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহও কড়া প্রশ্নবাণ পাঠিয়েছেন রাজ্যনেতৃত্ত্বকে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে নিজেদের অনুকূলে রায় পাওয়ার পর, গতকাল হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চেও নিজেদের অনুকূলে রায়ের আশায় ছিলেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা। কিন্তু, সেখানে রাজ্য সরকার ও রাজ্য পুলিশকে প্রধান বিচারপতি ভর্ৎসনা করলেও, দিনের শেষে কিন্তু রথযাত্রার ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারে। তাই, হতাশা আরও বেড়েছে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমনিতেই গো-বলয়ে তিনটি রাজ্য হাতছাড়া হওয়ায় কিছুটা ব্যাকফুটে রাজ্য বিজেপি। অন্যান্য দলের যেসব নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগদান করবেন বলে কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন, তাঁদের অনেকেই এখন পিছিয়ে গেছেন।

এমনকি, কলকাতা পৌরসভায় সম্প্রতি ১১৭ নম্বর ওয়ার্ডের উপনির্বাচনেও বড় ব্যবধানে হেরেছে দল। তার থেকেও বড় কথা – এই ওয়ার্ডে বিজেপির সংগঠন বেশ শক্তিশালী বলে দাবি করা হয়। অথচ, নির্বাচনের দিন বুথে বুথে ঠিকমত এজেন্টও নাকি দেওয়া যায় নি বলে অভিযোগ উঠেছে দলের অন্দরেই। আর এসবেরই মাঝে রথ যাত্রার মতো রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়েও তা বারবার থমকে যাওয়ায় ক্ষোভ থেকে হতাশা, ক্রমশ চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছে নীচুতলার কর্মীদের। তাঁদের কথায়, এরপর লোকসভা নির্বাচনের সময় ‘ডোর-টু-ডোর’ প্রচারে গেলে সাধারণ মানুষ এইসব প্রসঙ্গ তুলে সংগঠন নিয়ে প্রশ্ন তুলেবন। সেখানে কি উত্তর দেওয়ার মত জায়গায় থাকা যাবে?

এমনকি, দলের অনেক নেতা-কর্মীর ক্ষোভ, বাংলায় রাজনীতিটা বাংলার মতোই করে করতে হয়। ভারতবর্ষের আর পাঁচটা রাজ্যের রাজনীতির সঙ্গে এর কোনো মিলই নেই। কিন্তু, তা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় নেতৃত্ত্বের তরফে যে সব নির্দেশ বা ফর্মুলা আসছে – তা আদতে অন্যান্য রাজ্যে সফল। কিন্তু, বাংলায় তা প্রয়োগ করার মত সংগঠনই তৈরী হয় নি। ফলে নীচুতলার অনেক কর্মীই দিশেহারা – কি করা উচিত আর কি নয়! অনেকেই আবার এইসব দেখে উৎসাহ হারিয়ে ঘরে বসে যাচ্ছেন। ফলে, রাজ্য নেতৃত্ত্ব বাংলার উপযোগী রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে যথাযথ দিশা দেখান এটাই এখন একমাত্র চাওয়া দলীয় কর্মীদের। এই অবস্থায় রথযাত্রা কর্মসূচি সফলভাবে করা হলে – অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়ে যেত বলে ধারণা গেরুয়া শিবিরের নেতাদের।

কিন্তু, শাসকদল যেভাবে প্রতি পদে পদে বাধা তাতে কি আদৌ সফল হবে রথযাত্রা? আদৌ দিনের আলো দেখতে পাবে গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা?এই ব্যাপারে এখনও বেশ আশাবাদী রাজ্যনেতৃত্ত্ব। এদিন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় বেরোনোর পর এই প্রসঙ্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, “হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে যাব। যতদিন না এই আইনি জটিলতা কাটছে ততদিন বিজেপির তরফ বিকল্প কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হবে”।

এদিকে এদিন কলকাতার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে বিজেপির এই প্রস্তাবিত রথযাত্রা নিয়ে গেরুয়া শিবিরের উদ্দেশ্যে তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা। তিনি বলেন, “বিজেপি হিন্দু আবেগ নিয়ে খেলা করছে। মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এমন কোন রাজ্যে যদি কোরান হাতে মিছিল বের করেন তাহলে সেটা কি ঠিক হবে”? বিজেপির এই কার্যকলাপে গোটা দেশের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সব মিলিয়ে এক দিকে বিরোধীদের আক্রমণ অন্যদিকে নিজেদের দলীয় কর্মীদের হতাশা-ক্ষোভ – সবকিছু নিয়েই চিন্তা বাড়ছে গেরুয়া নেতৃত্ত্বের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!