এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা! রাজ্যের ঘুম ওড়াচ্ছেন রাজ্যপাল? তীব্র ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর!

সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা! রাজ্যের ঘুম ওড়াচ্ছেন রাজ্যপাল? তীব্র ক্ষোভ মুখ্যমন্ত্রীর!


 

যত দিন যাচ্ছে, ততই রাজ্য বনাম রাজ্যপালের দ্বন্দ্ব বাড়তে শুরু করেছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে জাগদীপ ধনকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে তার মন্তব্য অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছিল রাজ্যের শাসকদলকে। কখনও যাদবপুরের ঘটনা, কখনও জিয়াগঞ্জ কান্ড, আবার কখনও বা দুর্গাপুজোর কার্নিভাল, সরকার বনাম রাজ্যপালের সম্পর্কের তিক্ততা ক্রমশই বৃদ্ধি পেয়েছে।

সরকারের তরফে কখনও পার্থ চট্টোপাধ্যায় আবার কখনও বা সুব্রত মুখোপাধ্যায়, নজিরবিহীন ভাবে রাজভবনের প্রধান ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। তবে দীপাবলির রাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে রাজ্যপালের যাওয়া নিয়ে অনেকেই ভেবেছিলেন, এবার হয়ত বা সরকার বনাম রাজ্যপালের সম্পর্কের তিক্ততা কমতে শুরু করবে। কিন্তু তা আর হল কই!

এতদিন মন্ত্রীরা পরোক্ষে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হলেও এবার নাম না করে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরব হতে দেখা গেল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। যে ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি করল বলেই মত বিশেষজ্ঞ মহলের। বস্তুত, মহারাষ্ট্রে সরকার গঠন নিয়ে যখন টালমাটাল পরিস্থিতি চলছে, ঠিক তখনই এদিন এই বিষয়ে সাংবাদিকদের তরফে তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়। আর সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই পরোক্ষে “বিজেপির মাউথপিস” হিসেবে রাজ্যপালকে আখ্যা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে দাবি একাংশের।

সূত্রের খবর, এদিন নবান্ন সভাগৃহে রাজ্যস্তরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সেখানেই মহারাষ্ট্রের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের তরফে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। আর সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “মনোনীত কিছু ব্যক্তি মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছেন। মনে রাখা উচিত, কেন্দ্র সরকার নির্বাচিত, রাজ্য সরকারও নির্বাচিত। যুক্তরাষ্ট্র কাঠামো কীভাবে চলবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে সংবিধান। আমাদের রাজ্যে কি হচ্ছে, আপনারা দেখছেন। কয়েকটি ক্ষেত্রে মনোনীত ব্যক্তিরা কেন্দ্রকেও এড়িয়ে চলছেন। কেন্দ্রের বিষয়টা দেখা উচিত। কিছু মানুষ আছেন, যারা সাংবিধানিক পদে থেকেও বিজেপির মাউথপিস হয়ে কাজ করে চলেছেন। এ রাজ্যেও একজন আছেন। যিনি সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন।”

আর সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর দায়ে যে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান জাগদীপ ধনকারকেই বিধলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত রাজনৈতিক মহল। আর এতদিন মন্ত্রীদের মুখ থেকে রাজ্যপালের সম্পর্কে নানা মন্তব্য শোনা গেলেও এবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী সেই রাজ্যপালকে পরোক্ষে বিজেপির “মাউথপিস” বলায় রাজনৈতিক জটিলতা আরও বৃদ্ধি পেল বলে মত রাজনৈতিক মহলের। আর গোটা পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে সাংবিধানিক বনাম প্রশাসনিক তরজা যে কোনো মুহূর্তে ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করতে পারে বলেই মনে করছে একাংশ।

এদিকে এদিন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে এই ধরনের মন্তব্য করার পাশাপাশি বিজেপিকেও একহাত নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানা যায়, এদিন কলকাতা পৌরসভার সামনে বিজেপির যুব মোর্চার পক্ষ থেকে “পুরসভা চলো” অভিযান করা হয়। যেখানে কার্যত তুলকালাম পরিস্থিতি তৈরি হয় বলে অভিযোগ। আর সেই প্রসঙ্গেই এদিনের নবান্নের সভাগৃহ থেকে সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপিকে তুলোধোনা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি বলেন, “অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে কিছু লোক রাজনৈতিক বিতর্ক করছেন, রাজনীতি করছেন, ভাঙচুর চালাচ্ছেন। তাদের বলব, মানুষের পাশে দাঁড়ান। রাজনীতি সারা জীবন থাকবে। ভাঙা সহজ, কিন্তু গড়া অত্যন্ত কঠিন। এখন গড়ার সময়। সাইক্লোন বিধ্বস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই এখন একমাত্র কর্তব্য। নোংরা রাজনৈতিক খেলা বন্ধ হওয়া উচিত। মানুষের স্বার্থ আগে, মানবিকতা আগে।”

এদিকে এদিন প্রশাসনিক বৈঠকে নবান্নের সভাগৃহ থেকে রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বুলবুল ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে একদিকে বিজেপিকে কটাক্ষ, আর অন্যদিকে রাজ্যের উন্নয়ন তুলে ধরে সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর অভিযোগে রাজ্যপালকে বিধে সোরগোল তুলে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!