প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – নির্বাচনের আগে কখনও কখনও আক্রমণ করতে গিয়ে যে শালীনতার মাত্রা পর্যন্ত অতিক্রম করে ফেলবেন নেতারা, তা সত্যিই কল্পনা করা যায়নি। এবার বিশিষ্ট অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে আক্রমণ করতে গিয়ে রীতীমত কুরুচিকর মন্তব্য করে বসলেন রাজ্য বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই বিশিষ্ট অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ এবং দেবলীনা দত্ত গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। ধর্মীয় অসন্তোষ সহ নানা বিষয়ে তাদের মুখ খোলাতে অস্বস্তিতে পড়তে শুরু করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি বলে দাবি একাংশের।

আর এই পরিস্থিতিতে প্রতিনিয়ত এই অভিনেত্রীকে গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। আর এমত পরিস্থিতিতে এবার নাম না করে সেই সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে গিয়ে রীতীমত বেলাগাম মন্তব্য করে বসলেন বিজেপি রাজ্য যুব মোর্চার সভাপতি সৌমিত্র খাঁ।

সূত্রের খবর, বুধবার পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ বিজেপির পক্ষ থেকে একটি সভার আয়োজন করা হয়। আর সেখানেই বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। আর সেই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রীতীমত কুরুচিকর মন্তব্য করে বসেন এই বিজেপি নেতা।

তিনি বলেন, “কিছু ফিল্ম আর্টিস্ট, যারা শুধু দক্ষিণ কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে 2 লক্ষ টাকা করে স্যালারি পায়, তারা কি বলছে জানেন! এই বর্ধমানের শিবমন্দিরে, এই বুয়াইচন্ডী কালী মন্দিরে, শিব মন্দিরের শিবলিঙ্গ থাকে। সেই শিবলিঙ্গতে বলছে কন্ডোম পরিয়ে শিব পুজো করা হোক। এত বড় নিস্কলঙ্ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, তার কবিরা বলছে, বলছে কি, মা সরস্বতী হল যৌনকর্মী। আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই, তাকে জবাব দেওয়ার সময় এসেছে। না হলে এখানে মন্দির একটাও থাকবে না। না হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের ঘাড় ধরে বের করে দেবে।”

আর এরপরই নাম সায়নী ঘোষের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন সৌমিত্রবাবু। তিনি বলেন, “আমি সায়নী ঘোষকে বলতে চাই, তোমরা এই ধরনের কথা বলছ। ধর্মতলায় বসে বসে নাটক করছ। অনেক কিছু বলছ। আমরা তো বলছি না, তোমরা যেদিন মসজিদে আজান পড়বে, আমরা কিছু খারাপ কাজ করব! কিন্তু তৃণমূলের চাকরের মতো কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বলছে, দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন গরুর মাংস খাবে। আমরা বলতে পারি দেখুন যে যার ধর্মে বিশ্বাস করি। কিন্তু আমাদের শিবলিঙ্গকে যারা অপমান করেছে, আমাদের মা মনসাকে যারা অপমান করে, তারা অরিজিনাল যৌনকর্মী বলে আমি মনে করি।”

স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি নেতার এই মন্তব্য যে যথেষ্ট বিতর্কের আবহ তৈরি করে দিল রাজ্যে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। একজন বিশিষ্ট অভিনেত্রী সম্পর্কে বিজেপি নেতার এই ধরনের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এখন রীতিমত নিন্দার ঝড় উঠতে শুরু করেছে গোটা বাংলা জুড়ে। একাংশ বলছেন, এর আগে 2011 সালের বিধানসভা নির্বাচনের সম্মুখে বামেদের অনেক নেতারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নাম না করে কুরুচিকর আক্রমণ করতে শুরু করেছিলেন। যার প্রভাব পড়েছিল ভোটবাক্সে। আর নির্বাচনের মুখে বাংলার বিশিষ্ট অভিনেত্রী সায়নী ঘোষকে আক্রমণ করতে গিয়ে যেভাবে যৌনকর্মীর সঙ্গে তুলনা করলেন বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ, তাতে নিঃসন্দেহে সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করেছে।

অনেকে বলছেন, সৌমিত্রবাবু এই মন্তব্য করে একদিকে যেমন যৌনকর্মীদের অপমান করলেন, ঠিক তেমনই সায়নী ঘোষের মত বাংলার বিশিষ্ট অভিনেত্রী তথা নারীজাতিকে অসম্মান করার চেষ্টা করলেন। স্বাভাবিকভাবেই সৌমিত্রবাবুর এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এখন গোটা সাংস্কৃতিক মহল যে সোচ্চার হয়ে উঠবে, তা বলাই যায়। নির্বাচনের আগে বিজেপি বাংলার মানুষের মনে যতই জায়গা করে নেওয়ার চেষ্টা করুক না কেন, বিজেপি সাংসসদের এই মন্তব্য যে তাদের অনেকটাই ব্যাকফুটে ফেলে দেবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত বিশেষজ্ঞরা।