এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > জিওর গ্রাহকদের জন্য আবার বড়সড় ধাক্কা – জেনে নিন বিস্তারিত

জিওর গ্রাহকদের জন্য আবার বড়সড় ধাক্কা – জেনে নিন বিস্তারিত


রিলায়েন্স জিও টেলিকম বাজারে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রাহক দুনিয়ায় হৈচৈ পড়ে গেছিল। একটা সময় অসাধারণ সব অফার নিয়ে এসেছিল জিও। সেই সময় খুব স্বাভাবিকভাবেই অন্য টেলিকম সংস্থাগুলি একটু পিছিয়ে পড়তে থাকে। প্রতিযোগিতায় ফিরে আসতে তাঁরাও বিভিন্ন রকম সুবিধা যুক্ত অফার দিতে থাকে। ফলে মানুষ কথা বলা এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রতি খুব তাড়াতাড়ি আসক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু এবার সুবিধার দিন বোধহয় শেষ হতে চলল। ইতিমধ্যে আগামী মাস থেকে ভোডাফোন ও এয়ারটেল তাঁদের মাসুল বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছে। আর এদিন রিলায়েন্স জিও সেই একই পথে হাঁটার কথা ঘোষণা করল।

এবার থেকে আর সস্তা হচ্ছেনা মোবাইল পরিষেবা। রীতিমত ভালো দাম দিয়ে পরিষেবা পেতে হবে। উল্লেখ্য, ভারতেই সবথেকে কম খরচ মোবাইল পরিষেবায়। মাসুল বাড়ানোর প্রসঙ্গে গ্রাহকদের তরফ থেকে প্রশ্ন উঠেছে, মাশুল বাড়ার সাথে সাথে মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে গড়ে ওঠা মোবাইল কতটা মহার্ঘ হবে? তবে মাশুল কতটা কি পরিমানে বাড়বে সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত দেশের তিনটি প্রধান টেলিকম সংস্থা কেউই খোলসা করে বলেননি।

মঙ্গলবার মাশুল বৃদ্ধির কথা বলার পাশাপাশি রিলায়েন্স জিও দাবি করে, ভারতে তাঁরাই ডেটা পরিষেবার সুবিধা এনে দিয়েছিল মানুষের হাতে। তবে জিওর তরফ থেকে জানা গেছে, পরিষেবা মূল্য বাড়লেও ডেটা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন তাঁরা বলে দাবি করে জিও। সূত্রের খবর, জিও তাঁদের মাশুল টেন পার্সেন্ট বাড়াতে পারে। তবে সব ধরনের মাশুল বাড়বে নাকি কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মাশুল বাড়বে, তা নিয়ে এখনো কোনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, টেলিকম ব্যবসার বাজার যেকোনো দাম নির্ধারণ করলেও তা সঠিকভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কিনা তা নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ট্রাই। এক্ষেত্রে সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত কোন টেলিকম কোম্পানি মাসুল বৃদ্ধির কথা সরকারিভাবে ট্রাই এর কাছে জানায়নি। ইন্টারনেট ব্যবস্থায় প্রথম সস্তার খরচে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিষেবা এনে হাজির করে রিলায়েন্স জিও। সেসময় জিও নেওয়ার জন্য গ্রাহককুলে কার্যত সুনামি এসেছিল। তবে মনে করা হচ্ছে, ব্যবসায়িকভাবে যাত্রা শুরু করার পর জিওর তরফ থেকে খুব কম টাকার যে রিচার্জ প্যাকগুলো ছিল, সেগুলি উঠে যায়। পাশাপাশি অন্যান্য টেলিকম সংস্থাগুলি সিম চালু রাখার জন্য 28 দিনের ন্যূনতম মাশুল চালু করে।

অন্যদিকে ইতিমধ্যে ভোডাফোন আইডিয়া ও এয়ারটেল দাবি করেছে তাঁরা জিওর কারণে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভোডাফোনের প্রায় 50 হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে সংস্থা জানিয়েছে। এয়ারটেল এর তরফ থেকে জানা গেছে, তাদের ক্ষতি 30 হাজার কোটি টাকা। তবে, জিওর তরফ থেকে জানা গেছে, এই ত্রৈমাসিকে তাদের ক্ষতি হয়নি, বরং লাভ হয়েছে 990 কোটি টাকার। অন্যদিকে, মাসুল বৃদ্ধির কথা শুনে গ্রাহকরা তাদের ক্ষোভ আড়াল করেননি। তার সাথে গ্রাহক কুলের প্রশ্ন, মোবাইল সংস্থাগুলি এতদিন ধরে সস্তার পরিষেবা দেওয়ার কথা বলে গ্রাহক টেনেছে। এখন কেন তাঁরা বিপরীত পথে হাঁটবে?

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এদিকে, মোবাইল পরিষেবা নিয়ে তিতিবিরক্ত অনেকেই বলছেন, বাড়তি মাসুল অবশ্যই দেওয়া যাবে, কিন্তু পরিষেবা উন্নত হবে কি? কারণ বর্তমানে প্রতিটি টেলিকম সংস্থার পরিষেবাতেই কল ড্রপ একটা বড় সমস্যা। এর সাথে পুরনো দিনের ল্যান্ডলাইন এর মতন যুক্ত হয়েছে মোবাইলে ক্রস কানেকশন এর সমস্যা। কেউ কেউ আবার বলছেন, টেলিকম সংস্থাগুলি প্রথম থেকেই পরিকাঠামো সম্প্রসারণের কথা বলে আসছে। তাহলে এত তাড়াতাড়ি পরিষেবার কি করে এত খারাপ হয় যার ফলে তাঁরা মাসল বৃদ্ধি করার কথা ভাবছে।

অন্যদিকে, টেলিকম বিশেষজ্ঞদের দাবি মাশুল বৃদ্ধি না করলে টেলিকম সংস্থাগুলির পথে বসা কেউ আটকাতে পারবেনা। কারণ এখনো ভারতের মোবাইল পরিষেবা বিশেষ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করার খরচ সবথেকে কম‌। সে ক্ষেত্রে সস্তার পরিষেবা দিতে গিয়ে তাঁরা গ্রাহক টানতে সফল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু পরিষেবা দিতে গিয়ে গ্রাহক পিছু তাঁদের আয় কিন্তু কিছুই বাড়েনি। অথচ টেলিকম শিল্পে বিপুল লগ্নিও আসেনি। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে‌। সেক্ষেত্রে প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে প্রয়োজন নিয়মিত লগ্নির, যা হয় না বলেই জানা গেছে।

অন্যদিকে, কিছুদিন আগেই জিও তে চালু হয়েছিল আই ইউ সি চার্জ। কিন্তু এই চার্জ কিছুদিন নেওয়ার পরেই গ্রাহক মহলে ক্ষোভ দেখা যায়। যার ফলে জিওর তরফ থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এই চার্জ তুলে দেওয়া হবে। তবে এই চার্জ কবে তুলে দেওয়া হবে সে নিয়ে এখন আবার আলোচনা শুরু হয়েছে। সূত্রের দাবি, এই চার্জ উঠে গেলে টেলিকম সংস্থাগুলির আয়-ব্যয় হিসেবেও বিশাল প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের রায়ে লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম বাবদ বিপুল আর্থিক বোঝা ঘাড়ে চাপায়, টেলিকম জগতের পুরনো সংস্থাগুলি কেন্দ্রের কাছে আর্থিক সাহায্যের আর্জি জানিয়েছে। যদিও জিও এই তালিকায় নেই বলেই জানা গেছে।

টেলিকম সংস্থার একটি অংশের দাবি, সরকার সাহায্য করার আগেই টেলিকম সংস্থাগুলির নিজেদের দিক থেকে আয় বাড়াতে তৎপর হয়েছে। তবে তাঁদের আয় বাড়ানোর ভাবনায় বৃহৎ গ্রাহক অংশে কি প্রভাব ফেলে, তা পর্যবেক্ষণ করতে চাইছে সংস্থাগুলি। তবে এদিন মাশুল বৃদ্ধি ঘোষণার সাথে সাথে ভোডাফোন ও এয়ারটেলের শেয়ার দর বহুদিন পর আবার বেড়ে ওঠে।

আপাতত মাশুল বাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে টেলিকম সেক্টরে একটা চাপানউতোর চলছে। টেলিকম বিশেষজ্ঞদের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে যে বিপুল অর্থের ঋণের বোঝা ভোডাফোন আইডিয়া ও এয়ারটেল এর ঘাড়ে চেপেছে, তা থেকে তাঁরা কিভাবে বেরোবে, সেটা এখন ভাবার বিষয়। তবে জিও ছাড়া যে অন্যান্য টেলিকম সংস্থাগুলি এই মুহূর্তে টেলিকম সেক্টরে খুব একটা সুবিধাজনক জায়গায় নেই, তা স্বীকার করে নিচ্ছে টেলিকম সেক্টরের একাংশ। আপাতত এই মুহূর্তে মাসুল বৃদ্ধির কথা বলে টেলিকম সংস্থাগুলি আবার ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে বলেই মনে করা হচ্ছে। সমগ্র পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে দেশের তাবড় টেলিকম বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!