এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > বর্ধমান > পুরসভা ভোটের মুখে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বড়সড় সমালোচনার মুখে তৃণমূল

পুরসভা ভোটের মুখে প্রকাশ্যে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বড়সড় সমালোচনার মুখে তৃণমূল

পশ্চিমবঙ্গের বুকে ইতিমধ্যে বেজে উঠেছে নির্বাচনের দামামা। সামনে আসতে চলেছে রাজ্যের পুরসভা নির্বাচন, আর তারপরেই আগামী বছর রাজ্যের মসনদ দখলের লড়াই। এই নির্বাচনগুলিকে লক্ষ্য রেখে ইতিমধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বারেবারেই বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এসে পড়ছে। লোকসভা নির্বাচনের পর দলের শৃঙ্খলা আনা যে জরুরি তা অনুধাবন করে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জেলায় জেলায় দলীয় গোষ্ঠীকোন্দল বন্ধ করার বার্তা দেওয়া হয়। তবে বেশ কিছু জেলায় তৃণমূল নেতারা একত্রিত হয়ে চললেও এখনো বহু জেলা থেকেই গোষ্ঠীকোন্দল এর খবর আসছে।

পুরসভা নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তৎপরতা শুরু হলেও নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে এখনো পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন দিন ধার্য করা হয়নি। অন্যদিকে, পুরসভা নির্বাচনের টিকিট পাওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল চরমে উঠেছে। এবার এই পরিপ্রেক্ষিতে গোষ্ঠীকোন্দলের ছবি ধরা পরল বর্ধমানের 10 নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর পরেশ সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপকমাত্রায় অভিযোগ এনেছে তাঁর দলেরই একাংশ। সূত্রের খবর, এই অভিযোগকারীদের মধ্যে অনেকেই একসময় প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর পরেশ সরকারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিল বলে জানা যায়।

গত রবিবার প্রাক্তন কাউন্সিলর পরেশ সরকার বা তাঁর পরিবারের কেউ যাতে পুরসভা নির্বাচনে প্রার্থী হতে না পারে, সে ব্যাপারে পরেশ সরকারের বিক্ষুব্ধরা সভা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। পাল্টা প্রাক্তন কাউন্সিলর পরেশ সরকারও অভিযোগ জানাতে পিছপা হননি। তিনিও তীব্র ক্ষোভ সহযোগে অভিযোগ জানিয়েছেন। এলাকায় দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ার ফলে যে তাঁর বিরুদ্ধে পৌরসভা নির্বাচনে না দাঁড়াতে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে তা জানাতে ভোলেননি তিনি।

তবে এদিন পরেশ সরকার অভিযোগের আঙুল তুললেন এলাকার শাসকদলের এক প্রভাবশালী নেতার দিকে। এ প্রসঙ্গে পরেশ বাবু জানিয়েছেন, ‘দলের ওই নেতা প্রতিটি ওয়ার্ডে এইভাবে চক্রান্ত করছে। গত লোকসভা ভোটে দায়িত্ব নিয়ে শহরে দলকে ডুবিয়েছিল। পুরভোটেও তাই করতে চাইছে। শুধু আমি নই, শহর তৃণমূল সভাপতি অরূপ দাস, জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত, প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা চিকিত্‍সক শঙ্খশুভ্র ঘোষ, সকলেরই বিরুদ্ধেই ওই নেতা কারসাজি করছেন, হেনস্তা করার চেষ্টা করছেন।’

এদিকে বর্ধমানের 10 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর পরেশ সরকার সম্পর্কে জানা যায়, তিনি দীর্ঘদিনের তৃণমূলের কর্মী ও নেতা। আরও জানা গেছে গত পৌরসভা নির্বাচনে তিনি 10 নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হয়েছিলেন। এবারের পৌরসভা নির্বাচনে 10 নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলা সংরক্ষিত হয়ে গেছে। ফলে তিনি নিজের ওয়ার্ডে এবার দাঁড়াতে পারবেননা নিশ্চিত। তবে আশা করা যায়, শাসকদলের পক্ষ থেকে যদি বিবেচিত হন তিনি তাহলে তাঁকে অন্য কোন ওয়ার্ড থেকে দাঁড় করানো হবে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

যদিও তৃণমূলের পক্ষ থেকে জানা গেছে, কোনরকম সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। তবে দল কোনোরকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই পরেশ সরকারের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে তৃণমূলের একাংশ তুমুল বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে। এরকমই এক বিক্ষুব্ধ হলেন তৃণমূলের স্বপন দাস। তিনি বলেন,’আমরা প্রার্থী ঠিক করব। দল যাচাই করে প্রার্থী করুক। দল না মানলে আমরা বিরুদ্ধে যাব না। আমরা বসে যাব। যারা (প্রাক্তন কাউন্সিলর) বিজেপির সঙ্গে আঁতাঁত করে তাদের সঙ্গে আমরা নেই।’ অন্যদিকে আরেক বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের কালিদাস ভট্টাচার্য্য জানিয়েছেন, ‘প্রাক্তন কাউন্সিলর আপাদমস্তক দুর্নীতিতে ডুবে রয়েছেন। আমরা তাঁর সঙ্গে নেই। আমাদের এলাকার কোনও উন্নয়নই উনি করতে পারেননি।’

তবে এই সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন প্রাক্তন কাউন্সিলর পরেশ সরকার। এ প্রসঙ্গে পরেশবাবু তীব্র ক্ষোভ সহযোগে জানিয়েছেন, ‘শহরের ওই প্রভাবশালী পুরসভায় একাই ক্ষমতা ভোগ করেছেন। অন্য কোনও কাউন্সিলরকে উন্নয়ন করতে দেননি। সব নিজের ওয়ার্ডে করেছেন পুরসভার টাকায়। অশিক্ষিত ও দুর্নীতিগ্রস্ত ওই নেতাকে শহরের মানুষকে এখন শহরের মানুষ চাইছেন না। তাই বিভিন্ন ওয়ার্ডে আলাদা করে নিজে সংগঠন করে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছেন ওই নেতা।’

এদিন প্রাক্তন কাউন্সিলর প্রভাবশালী ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে আরও বলেছেন, তাঁর মতো আরো অনেক নেতাই তৃণমূলের ওই প্রভাবশালী নেতার চক্রান্তের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে কিছুদিন আগেই 15 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর শঙ্খশুভ্র ঘোষ তৃণমূল নির্দেশিত জনসংযোগে বেরিয়ে এলাকার জনগণের কাছে বেদম হেনস্থা হন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে আরো জানা গেছে, তৃণমূলের একাংশ 14 নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর যিনি ছিলেন তার বিরুদ্ধে গণ কনভেনশন করে সেই কাউন্সিলরের অজান্তে।

তবে এ প্রসঙ্গে বর্ধমান জেলার তৃণমূলের সভাপতি স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, 10 নম্বর ওয়ার্ড সম্পর্কে এই মুহূর্তে তাঁর কাছে কোন খবর নেই। সুতরাং কি ঘটেছে তা তিনি খোঁজ নেবেন আগে তারপর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। বারংবার গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঘিরে রীতিমতো সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে শাসকদল তৃণমূল। দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অস্বস্তি চরমে উঠেছে বলে খবর। এ প্রসঙ্গে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে নিয়ে রীতিমতো কটাক্ষ করে চলেছে বিরোধী দলগুলি।

লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই দলকে সংঘবদ্ধ করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রী বারংবার নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন গোষ্ঠীকোন্দল বন্ধ করার জন্য। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন ঘটনা সামনে আসার ফলে দেখা যাচ্ছে এই গোষ্ঠীকোন্দল তৃণমূল দলনেত্রীর নির্দেশেও বিন্দুমাত্র কমেনি বরং বেড়ে যাচ্ছে। যা নিয়ে তীব্র অস্বস্তি তৃণমূল শিবিরে। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আগামী দিনে রাজ্যের সামনে দুটি উল্লেখযোগ্য নির্বাচন। ঠিক এই সময় যদি দেখা যায় শাসক দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ব্যাপক প্রভাব, তাহলে তার সুযোগ অতি অবশ্যই বিরোধী দলগুলি নেবে। তাই এই মুহূর্তে গোষ্ঠীকোন্দলকে সামলানোর জন্য তৃণমূল সুপ্রিমো বিশেষ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন কিনা, সেদিকে লক্ষ্য রাখবে রাজ্যের ওয়াকিবহাল মহল।

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!