এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > মালদা-মুর্শিদাবাদ-বীরভূম > গনি খানের অন্দরমহলে ঘাসফুল থাবা বসাতেই অর্ধশতাব্দী পুরোনো কোতোয়ালি-কর্তৃত্ব শেষ? নতুন সিদ্ধান্তে বাড়ছে জল্পনা

গনি খানের অন্দরমহলে ঘাসফুল থাবা বসাতেই অর্ধশতাব্দী পুরোনো কোতোয়ালি-কর্তৃত্ব শেষ? নতুন সিদ্ধান্তে বাড়ছে জল্পনা


প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে মালদা জেলা কংগ্রেসে রাজ করছিল কোতোয়ালি। লোকসভা ভোটের মুখেই সেই অবিসংবাদিত কর্তৃত্বের অবসান হল কোতোয়ালির বর্ষীয়ান সদস্য তথা সংসদ সদস্য আবু হাসেম খান চৌধুরীর (ডালু) নাম খারিজ করে তাঁর স্থানে জেলা সভাপতির পদে মোস্তাক আলমকে দায়িত্বে আনার জেরে। গতকালই জেলা সভাপতি এবং দুই কার্যকারী সভাপতি হিসাবে হিসাবে ভূপেন্দ্রনাথ হালদার (অর্জুন) এবং কালীসাধন রায়ের কাঁধে দায়িত্ব দিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এর জেরে কোতোয়ালিভবনের গনিখান চৌধুরীর পরিবারের রাশ আলগা হল জেলা রাজনীতি থেকে বলে তীব্র জল্পনা ছড়িয়েছে।

প্রায় বিশ বছর আগে কিছু সময়ের জন্যে জেলা সভাপতির পদটি কোতোয়ালির বাইরে গিয়েছিল, তবে সেটাও প্রতাপশালী গনিখান চৌধুরীর পরিকল্পনা মতোই। এবার ফের কোতোয়ালির বাইরের মানুষ মোস্তাক আলমকে জেলা সভাপতি করা হল। তবে উল্লেখ করার মতো বিষয় হল, দু’জন কার্যকারী সভাপতি নিয়োগ করা হলেও তাতে জায়গা দেওয়া হয়নি কোতোয়ালির নবীন সদস্য ইশা খান চৌধুরীকে। নবীন-প্রবীন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মুখে ছাই দেওয়ার জন্যেই প্রবীণ কালীসাধন রায়কে দায়িত্বে আনা হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে। মৌসম নূর দল থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর অপেক্ষাকৃত দূর্বল কোতোয়ালি যে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে – এমন সম্ভাবনা ছিলই।

আর সেই সম্ভাবনাকে সত্যি করেই ডালুবাবুর হাত থেকে কোতোয়ালির রাশ আলগা হল। গত ২ ফেব্রুয়ারি দলের নতুন জেলা সভাপতি নিয়ে আলোচনায় বসেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। সেখানে প্রবীণ নেতা ডালুবাবু, তাঁর বিধায়ক পুত্র ইশা খান চৌধুরী সহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ডালুবাবু সেই বৈঠকে জেলা সভাপতি হিসাবে নিজের নাম প্রস্তাব করতেই মোস্তাক আলম সহ একাধিক নেতারা আপত্তির কথা জানান। শুধু সভাপতি হিসাবেই নয়, কোতোয়ালির নবীন নেতা ইশা খান চৌধুরীকে উত্তর মালদহের প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেও ডালুবাবুকে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। তবে দলীয় নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে ডালুবাবু নিজেকে সভাপতি ও কার্যকরী সভাপতি হিসাবে দু’জনের নামে প্রস্তাব নেতৃত্বর কাছে পাঠিয়ে দেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

কিন্তু হাইকমান্ড তাতে শেষপর্যন্ত রাজি হলেন না। ডালুবাবুর প্রস্তাব খারিজ করে রাহুল গান্ধী কোতোয়ালির বাইরে থেকে মোস্তাক আলমকে সভাপতির দায়িত্বে আনলেন। এদিকে, সদ্য জেলা সভাপতির দায়িত্বে এসে মোস্তাক আলম পরোক্ষভাবে ডালুবাবুর বিরুদ্ধ অসন্তোষ জানিয়ে বলেন, মালদা কংগ্রেসের সংগঠনকে পোক্ত করাই তাঁর একমাত্র কর্তব্য এখন। দলে থেকে কিছু মানুষ দলের ক্ষতি করে গিয়েছেন। সেই ক্ষত মেরামত করতে হবে। কোতোয়ালির কর্তৃত্ব খর্ব করার প্রশ্নটি সম্পূর্ণ এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরাও বহুদিন ধরে সক্রিয় রাজনীতিতে আছি, বহু লড়াই আন্দোলনের সাক্ষী। রাজনীতিতে পারিবারিক ঐতিহ্য হয়তো আমার নেই। কিন্তু দলে আমার অবদান বহু মানুষের থেকে বেশি আছে। সেই বিষয়টিকেই হয়তো সর্বভারতীয় নেতৃত্ব গুরুত্ব দিয়েছে’।

তবে প্রকাশ্যে ডালুবাবু কংগ্রেস সভাপতির সিদ্ধান্তটাকেই মান্যতা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাব পাঠাতে বলা হয়েছিল। সকলের মত নিয়ে তা পাঠানো হয়েছিল। সর্বভারতীয় কংগ্রেস যা ভালো মনে করেছে সেটি করেছে। এনিয়ে কিছু বলার নেই। কোতোয়ালির ঐতিহ্য মানুষের ভালোবাসায় গড়ে উঠেছে। মানুষ যতদিন ভালোবাসবে ততদিন তা থাকবে’। তবে ডালুবাবু যতই অস্বীকার করুন, লোকসভা ভোটের মুখে কোতোয়ালির রাশ তাঁর হাত থেকে আলগা হয়ে যাওয়াটাকে মোটেই ঠিকভাবে মেনে নেননি তিনি – এমনটাই দাবী রাজনৈতিক মহলের।

কংগ্রেসের অন্দরমহল সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধীর কাছে কোতোয়ালির মৌসম নূরই সবথেকে বেশি গ্রহনগ্রহনযোগ্য ছিলেন। প্রমাণ স্বরূপ বলা যায়, অতীতে জেলা সভাপতি এবং সংসদ সদস্য হওয়ার প্রশ্নে ডালুবাবুর বিরোধিতা এড়িয়ে মৌসম নূরকেই কোতোয়ালির দায়িত্ব দিয়েছিল কংগ্রেস হাইকমান্ড। কিন্তু মৌসম নূরের তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর কোতোয়ালির চেহারাই পাল্টে গেল। এখন মৌসম-হীন কোতোয়ালি লোকসভা ভোটে ক্যারিশ্মা দেখাতে পারে কিনা তা নিয়েই জোর চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিকমহলে। এমনকি, কর্তৃত্ব হারিয়ে ডালুবাবু বা তাঁর পুত্র ভবিষ্যতে কি পদক্ষেপ নেন সেদিকেও তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!