এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > নতুন পে কমিশনের ভবিষ্যৎ – কি বলছেন সরকারি কর্মচারী আন্দোলনের রথী-মহারথীরা?

নতুন পে কমিশনের ভবিষ্যৎ – কি বলছেন সরকারি কর্মচারী আন্দোলনের রথী-মহারথীরা?

বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে – যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে ষষ্ঠ পে কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার নতুন বেতন কাঠামো সংক্রান্ত তাঁর মতামত ইতিমধ্যেই জমা দিয়ে দিয়েছেন। সেই পোস্টে আরো দাবি করা হয়েছে আগামী ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে নতুন পে কমিশন ঘোষণা করা হবে এবং তা ‘এফেক্টিভ’ হবে ১ লা জুলাই, ২০১৯ সাল থেকে। ওই পোস্ট অনুযায়ী, আরও জানা যাচ্ছে, নতুন বেতন কাঠামো অনুযায়ী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বেতন প্রায় ৪০% বৃদ্ধি পেতে চলেছে।

আরও পড়ুন: কবে চালু হবে নতুন বেতন কমিশন? কি হতে চলেছে নতুন বেতন কাঠামো? জানুন বিস্তারিত

কিন্তু, এই প্রসঙ্গে কোন সরকারি বিবৃতি এখনো পর্যন্ত আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি। এমনকি, এই প্রসঙ্গে আমরা অভিরূপবাবুর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারি নি। আর তাই সেই খবরের পরিপ্রেক্ষিতে – এই মুহূর্তে রাজ্য জুড়ে যে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠন রয়েছে এবং তাদের মধ্যে যেসব সংগঠন এই সরকারি কর্মচারী আন্দোলনে সামনে থেকে লড়াই করছে তাদের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে কথা বলি। এই নতুন বেতন কমিশন সংক্রান্ত পোস্ট নিয়ে তাঁদের প্রতিক্রিয়ায় কি জানিয়েছেন বর্তমান রাজ্য সরকারি আন্দোলনের রথী-মহারথীরা দেখে নিন একনজরে –

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

নতুন বেতন কমিশন নিয়ে আমরা এই ধরনের অনেক গুজব শুনতে পাচ্ছি – কিন্তু এর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই। এগুলি আসলে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন সংগঠন এবং অতি-উৎসাহী তৃণমূল-ভক্তদের তরফ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আপনারা যদি লক্ষ্য করে থাকেন – এই ধরনের পোস্ট গত এক বছর ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরছে। আগে, রাজ্য মন্ত্রীসভার এক গুরুত্ত্বপূর্ন মন্ত্রীর নাম দিয়ে এই ধরনের পোস্টকে ভাইরাল করা হত – আর এখন যতই পে কমিশনের মেয়াদ শেষের দিকে এগিয়ে আসছে ততই এই ধরনের পোস্টের সংখ্যা বাড়ছে। তবে, এর কোন বাস্তব ভিত্তি নেই – আমরা এখনও পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি, তা হল – পে কমিশন যথাসময়েই তার রিপোর্ট পেশ করবে।

আমরা, আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে যা ইঙ্গিত পাচ্ছি – তাতে বোঝা যাচ্ছে পে কমিশনের যে রিপোর্ট জমা পড়বে, তাতে চমক ছাড়া ইতিবাচক কিছু থাকবে না। তবে একটা কথা বলতে পারি – এই পে কমিশনের মেয়াদ নজিরবিহীনভাবে বাড়িয়ে তিন বছর করা হয়েছে। কিন্তু, হাইকোর্টে রাজ্য সরকার ডিএ মামলায় যা গুঁতো খেয়েছে – তাতে আর পে কমিশনের মেয়াদ বাড়বে বলে মনে হয় না। কিন্তু, এই রাজ্য সরকার যেভাবে দিনের পর দিন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চনা করেছে – তাতে করে খুব একটা আশাপ্রদ কিছু নতুন পে কমিশনে থাকবে বলে মনে হয় না।


– দেবাশিস শীল, সরকারি কর্মচারী পরিষদ

এই পে কমিশন প্রথমে ৬ মাসের জন্য বসানো হয়েছিল – তখন মুখ্যমন্ত্রী ৬ মাসের মধ্যে পে কমিশনকে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেন। পরে সেই মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করে মোট ১ বছর করা হয়। তারপর আরও ২ বার ১ বছর করে এই পে কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করে মোট ৩ বছর করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই আমরা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীকে আবেদন করেছিলাম আলোচনায় বসার জন্য – উনি কর্নপাত করেননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষায় আমাদের নবান্ন অভিযান পর্যন্ত করতে হয়েছে। এমনকি আমরা পে কমিশনে গিয়েও এই নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছি – কিন্তু, মুশকিল হল বর্তমান সরকার রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষায় মোটেই উৎসাহী নয়।

বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যে পে কমিশন হয়েছিল তা ৬ মাসের মধ্যে নিজেদের সুপারিশ জমা দিয়েছিল এবং তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ডঃ অসীম দাশগুপ্ত সেই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার ১০ দিনের মধ্যে তা কার্যকর করেছিলেন। অর্থাৎ, রাজ্য সরকারের যদি সদিচ্ছা থাকে তাহলে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষা করতে গোটা দেশে বা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের যে হারে বেতন দেওয়া হচ্ছে তা করতে ৬ মাস সময়ই যথেষ্ট। এখানে যখন তা হচ্ছে না, তখন তো রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু, এই ঘটনায় সরকারি কর্মচারীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন – তাই এই পে কমিশনের মেয়াদ আগামী ২৬ শে নভেম্বর শেষ হচ্ছে। যদি তারমধ্যে সুপারিশ জমা না পরে – তাহলে আমরা রাস্তায় নেমে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটব।


– বিজয় শঙ্কর সিনহা, কো-অর্ডিনেশন কমিটি

যতক্ষন পর্যন্ত না পে কমিশন সরকারের কাছে নিজেদের সুপারিশ জমা দেবে – তখন পর্যন্ত এই সব জল্পনার কোন অর্থ হয় না। পে কমিশন ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলেছে এবং সেখানে আমরা নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছি। তার ভিত্তিতে আগে পে কমিশন সুপারিশ জমা দিক – এখনও পর্যন্ত যা খবর, তাতে এই সুপারিশ জমা পড়ে নি। অর্থাৎ, সেক্ষত্রে এই ধরনের পোস্ট একেবারেই ‘ভুয়ো’ বলে ধরে নিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে যতবার পে-কমিশন বসেছে – কোনোবারই এত সময় লাগে নি বা এতবার তার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয় নি। তবে, এটাও ঠিক যে নতুন পে-কমিশন দিতে হলে মুখ্যমন্ত্রী যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেন-অনুদান করছেন তা হয়ত বন্ধ হয়ে যাবে। সেক্ষত্রে, সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চনা করেই পে-কমিশনের দীর্ঘসূত্রিতা বেড়ে চলেছে।

তবে, একটি কথা আমলা মহলে শোনা যাচ্ছে যে – ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। সেক্ষেত্রে, সেই ক্ষোভকে প্রশমিত করতে ২০১৯-এর জানুয়ারী বা এপ্রিল মাসে এই নতুন পে কমিশন কার্যকর হয়ে যেতে পারে – যদিও এর কোন প্রামাণ্য আলোচনা বা নথি পাওয়া যায় নি। তবে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অনেক কিছুই ঘটে – সেক্ষত্রে যেহেতু লোকসভা নির্বাচন শিয়রে, সুতরাং একটা আশার আলো দেখা দিচ্ছে। তবে, অন্য্ একটি আলোচনা থেকে যা মনে হচ্ছে – লোকসভা নির্বাচনের আগে কিছু হবে না। বর্তমান শাসকদল যদি দেখে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সরকারি কর্মচারী ভোট ক্ষতিগ্রস্ত – সেক্ষত্রে হয়ত আগামী বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০২০ সালের শেষের দিকে তা কার্যকর হতে পারে।


– সুবীর সাহা, কনফেডারেশন অফ গভর্নমেন্ট এমপ্লয়ীজ

আমাদের রাজ্য-সরকার কি সত্যিই রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের উপর সহানুভূতিশীল? রাজ্যজুড়ে বিভিন্ন ‘শ্রী’ প্রকল্প চলছে – চলছে খেলা-মেলা-উৎসব। শুধু টাকা নেই – যখন রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ বা কেন্দ্রীয়হারে বেতন দিতে হয়। আগে আমরা দেখতাম – বিভিন্ন পুজো কমিটি পুজোর চাঁদার টাকা বাঁচিয়ে – হয় গরিবদের বস্ত্র-কম্বল বিতরণ করছে অথবা মুখ্যমন্ত্রীর ট্রেন তহবিলে জমা দিচ্ছে। একমাত্র বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেই দেখা গেল পুজোর ‘উৎসব’ করার জন্য সরকারি কোষাগার থেকে কোটি-কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হচ্ছে।

তবে, এই না পাওয়ার বঞ্চনায় ক্ষত-বিক্ষত হতে হতে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। এতদিন যে ডিএ ‘দয়ার দান’ বলে সরকারি কর্মীদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চনা করা হচ্ছিল – মহামান্য কলকাতা আদালতের ঐতিহাসিক রায়ের পরে তা বন্ধ হয়ে গেছে। সুতরাং, পে-কমিশনের এই দীর্ঘসূত্রিতা বন্ধ হয়ে যদি না ২৬ শে নভেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা পড়ে – তাহলে বৃহত্তর বাম-ঐক্যের তীব্রতর আন্দোলন শুরু হবে রাজ্যজুড়ে। আমরা, সমস্ত বাম-মনোভাবাপন্ন সংগঠন একত্রিত হয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলনের পথে যাব এবং সেখানে অবশ্যই বৃহত্তর কর্মচারী ঐক্যের কথা ভেবে অন্যান্য সরকারি কর্মচারী সংগঠনকেও সেই আন্দোলনে শামিল হওয়ার কথা জানাবো।


– সঙ্কেত চক্রবর্তী, স্টিয়ারিং কমিটি

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!