এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সরকারি আবাস যোজনার বাড়িতে মার্বেল, টাইলস থেকে এসি! তীব্র বিতর্ক অনুব্রত-গড়ে

সরকারি আবাস যোজনার বাড়িতে মার্বেল, টাইলস থেকে এসি! তীব্র বিতর্ক অনুব্রত-গড়ে


সরকারি আবাসন যোজনায় নেতাদের দুর্নীতির ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন আবাসন যোজনায় পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পৌরসভা সর্বত্র নেতাদের নামে বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এবার এক নতুন অভিযোগে রীতিমত চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গুসকরা পৌরসভার 6 নম্বর ওয়ার্ডে। সাধারণত গৃহহীন দরিদ্র জনগণের জন্য কখনও রাজ্য সরকার, কখনও কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে আবাসন যোজনা তৈরি করা হয়েছে।

পৌরসভার ক্ষেত্রে হাউসিং ফর অল যোজনার নিয়ম মোতাবেক যে সমস্ত পৌর নাগরিকদের বাৎসরিক উপার্জন 3 লক্ষ টাকার উর্ধে নয়, তারাই এই যোজনার সুবিধা লাভ করতে পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে পৌরসভার কাছে প্রথমে 25000 টাকা জমা করতে হবে। পরবর্তীতে কয়েকধাপে আবাস যোজনার বাড়ি তৈরীর জন্য তিন লক্ষ 68 হাজার টাকা সরকারি অনুদান পাবেন তালিকাভুক্ত পরিবারগুলি।

কিন্তু গরীব নাগরিকদের জন্য যে বাড়ির পরিষেবা সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়, তাতে যদি দেখা যায় মেঝেগুলো দামি মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি বাড়িতে লাগানো আছে এবং তা বিলাসবহুল, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। বন্টন ব্যবস্থা নিয়ে এরকম ঘটনাই সামনে এসেছে গুসকরা পৌরসভার 6 নম্বর ওয়ার্ডে শান্তিপুর এলাকার বাসিন্দা সেবানন্দ সরকারের সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত বাসভবনে। জানা যায়, 2017-18 অর্থবর্ষে সেবানন্দ সরকারের মা মনিকা দেবী নামে বরাদ্দ হয় হাউসিং ফর অল যোজনা বাড়ি। কিন্তু সেই বাড়ি তৈরি হওয়ার পরই তাজ্জব বনে যায় এলাকার বাসিন্দারা।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

দেখা যায়, বাড়ির মেঝেতে লাগানো হয়েছে বিলাসবহুল মার্বেল। ভেতর দিকে দেওয়ালগুলো চকচক করছে। ঝাঁ-চকচকে আবার একটি ঘরে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানো রয়েছে। যদিও বাড়ির বাইরে রঙের ক্ষেত্রে নিয়ম পালন করা হয়েছে। সরকারি নিয়ম মেনে নীল সাদা রং করা হয়েছে বাড়ির বাইরের দেওয়ালে। দেওয়ালে আবার হাউসিং ফর অল যোজনার অন্তর্ভুক্ত বাড়ি বলে সরকারি বিজ্ঞাপন লাগানো রয়েছে।

কিন্তু যেই বাড়ি সরকারি অনুদানে নির্মিত হয় অর্থাৎ নিজের বাড়ি তৈরি করার সামর্থ্য না থাকলে সরকার যে বাড়ি তৈরি করে দেয়, তার ভিতরে যদি বিলাসের এত বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়ে! তাহলে এলাকার মানুষের মনে তো প্রশ্ন উঠবেই। আর সেই কারণেই নবনির্মিত এই বাড়ি দেখে রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকার প্রতিবেশীদের মধ্যে। অনেকে বলে বসেন, যাদের বাড়ি তৈরি করার সামর্থ্য রয়েছে, তাদেরকে বাড়ি প্রাপকের তালিকাভুক্ত করে যে সমস্ত মানুষদের বাড়ি তৈরি করার সামর্থ্য নেই, তাদের প্রতি অন্যায় করছে পৌর প্রশাসন। এলাকায় এমনও অনেক গরীব পরিবার রয়েছে, যারা প্রশাসনের কাছে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও সরকারি প্রকল্প থেকে বাড়ি পাচ্ছেন না।

কিন্তু নিজের বাড়িতে মার্বেল পাথর লাগানো বা শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লাগানোর প্রসঙ্গে সেবানন্দবাবু বলেন, “আমাদের বসবাসের বাড়ি ছিল না। কাঠের দেওয়াল বা টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরে আমরা থাকতাম। আমার একটি মুরগির মাংসের দোকান রয়েছে। সেখান থেকে অল্প উপার্জনের টাকা ও কিছু টাকা ধার করে মায়ের নামে সরকারি প্রকল্পে পাওয়া ওই বাড়ির মেঝেতে মার্বেল বসিয়েছি। আর আমার মেয়ের একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। তাই মেয়ে আমাদের বাড়িতে রয়েছে। ছোট বাচ্চার গরমে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, সেই জন্য আমার জামাই বাড়িতে নিজের টাকায় মেশিন লাগিয়ে দিয়েছে।”

বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক ক্ষেত্রে প্রশাসনের কিছু করার থাকে না। অর্থাৎ গরিব দশায় যে ব্যক্তিকে সরকারি আবাসন যোজনা দেওয়া হয়, পরবর্তীতে যদি তার অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে তাহলে পৌর কর্তৃপক্ষের সেক্ষেত্রে বাড়িতে মার্বেল বসালে বা এসি লাগালে পৌরসভা কি করতে পারবে! তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। যদিও গোটা ব্যাপারে গুসকরা পৌরসভার এক্সিকিউটিভ অফিসার আকলিমা খাতুন বলেন, “এমন ঘটনার কথা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

আবার স্থানীয় প্রাক্তন সিপিএম কাউন্সিলর রজত সরকার বলেন, ” গরিব বলেই বাড়িটি পেয়েছিলেন। তাই বাড়ি তৈরীর পর কি করেছেন, বলতে পারব না।” তবে সেবানন্দ সরকার সরকারি প্রকল্পে পাওয়া বাড়ির ভিতর আসবাবের বহর থেকে শুরু করে টাইলস, এসি, দামি রং ইত্যাদি ব্যবহার করে এলাকায় যে একটি শোরগোল ফেলে দিয়েছেন, সেই বিষয়ে সন্দেহ নেই ওয়াকিবহাল মহলের। তবে এখন এই বিষয়ে স্থানীয় পৌর প্রশাসন ঠিক কি ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেন! সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!