এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > নীচুতলার ক্ষোভে দলে চূড়ান্ত অস্থিরতা! স্বয়ং দলনেত্রীর কানে তুলতে চান হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা

নীচুতলার ক্ষোভে দলে চূড়ান্ত অস্থিরতা! স্বয়ং দলনেত্রীর কানে তুলতে চান হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা

 

জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল যেন তার নামই নিচ্ছে না পরিস্থিতি এমন কোন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছে যে, তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং তৃণমূল বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তীকে সমগ্র ব্যাপারটি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অবগত করার কথা বলতে হচ্ছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের। বস্তুত, এবারের লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে তৃণমূলের ভাঁড়ে মা ভবানী দশা। সমগ্র উত্তরবঙ্গে আটটি লোকসভা আসনের মধ্যে একটি আসনও জোটেনি রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কপালে।

যদিও জলপাইগুড়ি লোকসভা আসনটি তৃণমূলের সেফ সিট বলেই মনে করা হচ্ছিল। তবু এবার এই নির্বাচনের ফলপ্রকাশ হলেই দেখা যায়, সেই আসনে পদ্ম ফোল ফোটাতে সক্ষম হয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের সাংগঠনিক দুর্বলতার ছবি ফুটে ওঠে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে দিয়েই বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

এদিকে নির্বাচনের পরে কালবিলম্ব না করে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীকে সরিয়ে তার জায়গায় স্থলাভিষিক্ত করেন জলপাইগুড়ি জেলার তৃণমূল কংগ্রেসের পুরাতন কর্মী হিসেবে পরিচিত কিষাণ কল্যানীকে। আর এর পরেই বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রাক্তন জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তীর অনুগামীরা দাবি করতে থাকেন যে, তাদের প্রতি দ্বিচারিতা করা হচ্ছে

। ব্লক সভাপতি থেকে শুরু করে অঞ্চল সভাপতি, টাউন সভাপতি ইত্যাদি দলের দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে নিচুতলার কিছু তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা যার জেরে রীতিমতো গোষ্ঠী কোন্দলের জের বার হতে হয় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। সৌরভ চক্রবর্তী সভাপতি থাকাকালীন যে সমস্ত ব্লক সভাপতি এবং টাউন সভাপতি ছিলেন, তাদেরকে দলের কোনোরকম সভা সমিতির বিষয়ে অবগত অবগত করা হচ্ছে না, এই অভিযোগ উঠতে থাকে। তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি কিষাণ কল্যানীর বিরুদ্ধে যার জেরে কোন্দল চরমে পৌঁছে যায় বলে মত রাজনৈতিক মহলের।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আর এবার সেই সৌরভবাবুর অনুগামীদের ক্ষোভের কথা তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভানেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানান পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। যার কাছে দরবার করেন উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং জলপাইগুড়ি জেলার প্রাক্তন সভাপতি তথা বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী বলে খবর।

প্রসঙ্গত, জলপাইগুড়ি জেলার মধ্যে ক্রমে বাড়তে থাকা অসন্তোষকে অনুভব করে গত সোমবার জলপাইগুড়িতে বৈঠক করতে আসেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী তথা তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেব এই মিটিংয়ে দলীয় কর্মীদেরকে সঙ্গে নিয়ে সমগ্র পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করেন। গৌতমবাবুর সভা চলাকালীন তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন উত্তরবঙ্গ তৃণমূল কংগ্রেসের কোর কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ি জেলার প্রাক্তন জেলা সভাপতি সৌরব চক্রবর্তী।

উল্লেখ্য, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি কিষান কল্যাণী এবং জলপাইগুড়ি জেলায় সৌরভ চক্রবর্তীর অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতিদেরকে নিয়ে সোমবার দিন সাংগঠনিক একটি বৈঠক করেন। সূত্রের খবর, এই মিটিংয়ে আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়ে কোনোরূপ সমাধানসূত্র মেলেনি। তাই এদিনের এই সভা থেকে বেরিয়ে যান জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কিষান কল্যাণী। আর এরপরে কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় সেখানে আসেন জেলার প্রাক্তন সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী।

জানা যায়, সৌরভবাবু দলের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের কথা মুখ্যমন্ত্রীর কানে বলেছেন দেওয়ার জন্য মন্ত্রী গৌতম দেবকে। এদিন এই বিষয়ে বলতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের ধুপগুড়ি শহরের প্রাক্তন সভাপতি অরূপ দে বলেন, “আমরা বুথস্তরের কর্মী। নতুন জেলা সভাপতি বুথ স্তর থেকে রাজনীতি করেছেন, তা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। উনি কি করতে চাইছেন, সেটা উনি নিজেই জানেন না। আমাদের ক্ষোভের বিষয়গুলি পর্যটন মন্ত্রীকে মিটিংয়ে জানিয়েছি। আশা করি, আমরা এর সুরাহা পাব।”

এদিকে এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গ কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ি জেলার প্রাক্তন তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি বিধায়ক সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “দলের কেউ ব্রাত্য নয়। তবে শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে নিচুতলা কর্মীদের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু দূরত্ব তৈরি হয়েছে। সেটা মেটাতে গত সোমবার সকলকে নিয়ে মিটিং করেন। মিটিং চলাকালীন চেয়ারম্যান আমাকে এসএমএস করে আসতে বলেন। আমি সেখানে যাই। উপস্থিত কর্মীদের ক্ষোভ শুনে তাদের সমস্যাগুলো নিয়ে দলের বার্তা কি, সেটা আমি গৌতমবাবুর কাছে জানতে চাই। আমি মন্ত্রীকে অনুরোধ করেছি, কর্মীদের ক্ষোভের কথা দলনেত্রী পর্যন্ত পৌঁছে দিন। মন্ত্রী আমাকে বলেছেন তিনি দলনেত্রীকে গোটা বিষয়টি জানাবেন। দলনেত্রী পরামর্শে আর তার নির্দেশে চলবে।”

যদিও গোটা বিষয়ে কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করেন জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি কিষান কল্যাণী। তিনি বলেন, “দলের মধ্যে কিছু অস্বচ্ছ লোক ছিল বলেই লোকসভা ভোটে আমাদের এখানে পরাজয় হয়েছে। আমি দায়িত্ব পাওয়ার পরে এখন সেই ড্যামেজ কন্ট্রোল করছি। কে কি বলল, তাতে আমি কান দিচ্ছি না।” আবার পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটনমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট নেতা বলেন, “দলের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। সেসব জেলা সভাপতির সঙ্গে বৈঠক করেছি। আমি বলেছি, সবাইকে একসঙ্গে চলতে হবে।”

জানা যায়, এদিনের বৈঠকে দলীয় অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কোনো সমাধান ঘটেনি। তাই এবার গোটা বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ জানাতে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবকে অনুরোধ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তরবঙ্গ কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী। সবকিছু মিলিয়ে এখন জলপাইগুড়ি জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের আগামী দিনের পথ কন্টকাকীর্ণ হয় নাকি কুসুমরঞ্জিত হয়, সেদিকেই নজর থাকবে ওয়াকিবহাল মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!