এখন পড়ছেন
হোম > আন্তর্জাতিক > CAA চালু হতেই কাতারে কাতারে বাংলাদেশী সীমানা পেরিয়ে পালাচ্ছে! নিশ্চিত করল BSF-BGB

CAA চালু হতেই কাতারে কাতারে বাংলাদেশী সীমানা পেরিয়ে পালাচ্ছে! নিশ্চিত করল BSF-BGB

দেশের জনসাধারণের মধ্যে ইতিমধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন ও জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নিয়ে নানান বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। শুধু বিরোধী নয়, সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দেশের অস্থির পরিস্থিতিতে এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কোন রকম নাকি চেষ্টা করছেন না! বরং, পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব ধরা পড়ছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের গলায়। যদিও পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যে, এনআরসি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।

তৃণমূলের তরফ থেকে জোর প্রচার চালানো হচ্ছে রাজ্যে – নো এনআরসি, নো সিএএ। তবে পশ্চিমবঙ্গে এখনো পর্যন্ত এনআরসি বা সিএএ লাগু না হলেও, সীমানা পেরিয়ে প্রচুর মানুষ বাংলাদেশে পালাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। আর গেরুয়া শিবিরের দাবি – এই জন্যেই নাকি দেশে সিএএ চালু হয়েছে। সিএএ-এর ভয়েই এখন প্রচুর বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ভারত ছেড়ে চলে যাচ্ছেন বলে দাবি করা হয়েছে।

গেরুয়া শিবিরের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, সংশোধিত নাগরিকপঞ্জি বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পরেই বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের মনে একটা ভয় চেপে বসেছে। যে কারণে তাঁরা বিশাল সংখ্যায় ভারত ছেড়ে আবার বাংলাদেশের দিকে পা বাড়িয়েছেন। আর গেরুয়া শিবিরের এই দাবির পিছনে অন্যতম সহায় সীমান্তরক্ষীরা। ভারত থেকে বাংলাদেশে ‘অনুপ্রবেশকারীদের’ পলায়নের জোরালো প্রমান মিলেছে বিএসএফের তরফে।

এ বিষয়ে মেঘালয় বাংলাদেশ সীমান্তের দায়িত্বে থাকা বিএসএফের আইজি কুলদীপ সাইনি জানাচ্ছেন, ‘গত কয়েকদিনে আমরা দেখছি যে অনেক বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীরা সেদেশে ফিরে যাচ্ছে।’ অন্যদিকে সিএএ এর সাথে তাঁদের মনে এনআরসির ভয়ও চেপে বসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত থেকে ইতিমধ্যে বাংলাদেশে যেতে গিয়ে গত কয়েক দিনের মধ্যে প্রায় 268 জন বেআইনি অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ধরা পড়েছেন বিএসএফের হাতে বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশ বনগাঁ পেট্রাপোল সীমান্তে 60 জন আটক হয়েছে বাংলাদেশ বিজিবির হাতে। এই ঘটনা সম্পর্কে তথ্য জানিয়েছেন দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের বিএসএফ-এর আইজি ওয়াইবি খুরানিয়া। এ প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, ‘সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীরা অনেক সংখ্যায় ফিরে যাচ্ছে সেদেশে। মূলত গত এক মাসে এই ফইরে যাওয়ার সংখ্যাটি বেড়েছে।’

তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘শুধুমাত্র জানুয়ারিতেই আমরা ২৬৮ অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছি। তাদের বেশিরভাগই প্রতিবেশী দেশে পালানোর চেষ্টা করছিল।’ ধরা পড়ার পর ধৃত 268 জন বাংলাদেশিকে তুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর থানার পুলিশের হাতে। জানা গেছে, এই অনুপ্রবেশকারীরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে বসবাস করছেন। যার ফলে তাঁদের হাতে ভারতীয় নাগরিক পত্র পাওয়া গেছে।

বিপুল পরিমানে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীরা ধরা পড়ার পর এ ব্যাপার নিয়ে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশ ও ভারতীয় বর্ডারে থাকা অফিসাররা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের তরফে বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই বৈআইনি ভাবে সীমান্ত পার করতে গিয়ে আমাদের হাতে ৪৪৫ বাংলাদেশী আটক হয়েছে।’

অন্যদিকে বিএসএফ জানিয়েছে, ‘লোকেরা চাকরির সন্ধানে আইনত বা অবৈধভাবে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায়। এটি সারা বিশ্বেই ঘটে থাকে, এটা স্বাভাবিক। এখানেও শ্রমজীবীরা ভারতে (বাংলাদেশ থেকে) কাজ করতে আসে। তাদের বেশিরভাগই কাজ করে বড় বড় শহরগুলিতে। তবে তাদের এখানে কাজ করতে এসে বসতি স্থাপনের উদাহরণ হ্রাস পেয়েছে গত কয়েক মাসে।’

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এই মুহূর্তে নতুন করে যে আইন লাগু হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধিত আইনের নামে, সেই আইনের প্রধান কিছু শর্ত আছে। শর্তগুলি হল, 31 ডিসেম্বর 2014 বা তার আগে বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে অত্যাচারিত হয়ে যদি ভারতে প্রবেশ করে অমুসলিম শরণার্থীরা, তাহলে তাঁদের প্রত্যেককে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

ইতিমধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি আইনে পরিণত হওয়ার পথে 311-80  ব্যবধানে পাস হয়েছে লোকসভায়। অন্যদিকে, রাজ্যসভায় পাস হয়েছে 125-82 ব্যবধানে। এবং এই আইনটি পাস হওয়ার পরেই সারা দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বিভেদের রাজনীতি করার। আর সেই সূত্র ধরেই সারা দেশ আজ তুমুল আন্দোলনের পথে নেমেছে।

অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই আইন নিয়ে যতই বাধা বিপত্তি আসুক, যতই আন্দোলন প্রতিবাদ চলুক, এই আইন প্রণয়নে কেউ কোনো বাধা সৃষ্টি করতে পারবেনা। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা শশী থারুর এবং কপিল সিব্বল জানিয়েছেন, সিএএ আইনের যতই বিরোধিতা করুক রাজ্য, কিন্তু এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই সর্বাত্মক হবে।

কারণ নাগরিকত্ব বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে কেন্দ্রের অধীনস্থ। এই মুহূর্তে হয়তো দেশের অবিজেপি রাজ্যগুলি সিএএ বিরোধী রেজোলিউশন পাস করছে তাঁদের বিধানসভায়, কিন্তু এর ফলে রাজ্যের কোন অধিকার জন্মাবেনা নাগরিকত্ব আইন আটকানোর ব্যাপারে।

বিগত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি এই নাগরিকত্ব ইস্যু নিয়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগত বেড়ে উঠছে প্রতিবাদ, আন্দোলন। বিরোধী দলগুলি একজোট হয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। নাগরিক সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করছে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এনআরসি নিয়ে যেভাবে সারাদেশে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে উঠেছে তা সামাল দিতে বিজেপি সরকারকে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে। এই অবস্থায় দেশের শান্তি বজায় রাখা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আপাতত দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নাগরিকত্ব ইস্যুতে কোন দিকে মোড় নিতে চলেছে, সেদিকে লক্ষ্য থাকবে দেশের ওয়াকিবহাল মহলের।

কিন্তু, সিএএ চালু করার সময়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ দাবি করেছিলেন, এই আইন এই দেশের কোনো মানুষের জন্য নয়। তা তিনি হিন্দু, মুসলমান বা অন্য যে কোন ধর্মেরই হন না কেন – সকলেই ভারতের নাগরিক। এর সঙ্গেই পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা আফগানিস্তান থেকে ধর্মীয় কারণে যাঁরা অত্যাচারিত হয়ে এ দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন, এই আইন তাঁদেরও নাগরিকত্ব দেবে।

কিন্তু, একই সঙ্গে তিনি দাবি করেছিলেন, এই দেশে প্রচুর পরিমানে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী আছে। বিশেষ করে রোহিঙ্গারা – যারা এই দেশে সমস্ত জঙ্গিমূলক কার্যকলাপ করছে। দেশের অভ্যন্তরীন সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে এই সকল অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হবে এবং কিছুতেই তাদের এ দেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। আর সিএএ চালু হওয়ার পর – এক শ্রেণীর মানুষ দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করতেই – ক্রমশ হাসি চওড়া হচ্ছে অমিত শাহের মুখে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!