এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > মৃণালিনীর প্রেম -(লাভ স্টোরি)- কলমে অপরাজিতা – পর্ব ৩

মৃণালিনীর প্রেম -(লাভ স্টোরি)- কলমে অপরাজিতা – পর্ব ৩


না,নামের ব্যাপারটা মৃণালিনী আর অভি ছাড়া আর কেউ শুনতে পায়নি। নাহলে এটা নিয়েও বাড়িতে সবাই খেপাতো। একেই বন্ধুরা নাম নিয়ে কম খোঁটা দেয়না।নামটা নিজেরও এমন কিছু আহামরি লাগে না, কিন্তু করবে টা কি? যাই হোক মোটে তো এই দুটো দিন সহ্য করে নেবে এই ছেলেটাকে। কি ভেবেছিল আর কি হলো। ভাবলো একটু সাজুগুজু করে ঘুরবে। বিভাসদাও বলেছিলো ওদের বাড়িতে কয়েকটা ছেলে আছে বেশ তাদের সাথে বন্ধুত্ত্ব করবে, না প্রেম নয়,এই ফেসবুকে বন্ধু। ফেসবুকে যত ছেলে বন্ধু থাকবে ততই নাকি মেয়েদের ভাও বাড়ে, এমনটাই বলেছে অনিন্দিতা। সত্যি মিথ্যা জানে না। কিন্তু অনিন্দিতার মতে এটাই নাকি এখনকার ট্রেন্ড। ছেলেদের মেয়ে বন্ধু বেশি হবে আর মেয়েদের ছেলে বন্ধু। শুধু তাই নয় ইম্পর্টেন্স বাড়াতে গেলে তদেরকে ট্যাগ করে পিকচার পোস্ট করতে হবে। দাদা, কাকা, জামাইবাবু এসব ঠিক আছে কিন্তু ব্যাচেলর হলে ভালো। শুনে মন খারাপ হয়েছিল মৃণালিনীর। না মৃণালিনীর প্রোফাইল ঘাঁটলে দিদি ,জামাইবাবু, ,আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ছাড়া তেমন খুব একটা ছেলে বন্ধু নেই. মেয়েই সব। যারা আছে তারা দাদা, ভাই কিংবা জামাইবাবু বড়জোর জামাইবাবুর ভাই, কিংবা বৌদির কোনো এক দূর সম্পর্কের ভাই। না ছেলের সংখ্যা বাড়াতে হবে প্রোফাইলে। তাই ভরসা ছিল ছোটদির বিয়েটা। বিভাসদা বলেওছিলো ওদের বাড়িতে কয়েকটা ছেলে আছে , কিন্তু এলো কে? না এটা? দেখতে ভালো হলে কি হবে? বড্ডো ব্যাঁকা ব্যাঁকা কথা বলে। আর দেখতে ভালোইবা কি এমন কিছু আহামরি নয়, হ্যাঁ বাইরে থাকে একটু স্মার্ট এই যা। বিয়েবাড়িতে একা দ্বায়িত্ব নিয়ে ঘেঁটে দিলো মৃণালিনীর সব প্ল্যান – ভালো লাগে না।

মৃণালিনীর স্বপ্নের রাজকুমার অন্যরকম , সে কখনো মৃণালিনীকে ছোট করে না, মৃণালিনী মোটা বলে তাতে তার কোনো অসুবিধা নেই ,তার সাজগোজে, তার কেনাকাটায় কোনো না নেই। মৃণালিনী যা চায় তাই দেয়,যা করতে চায় তাই করার অনুমতি দেয়। সবসময় আগলে রাখে। মৃণালিনী জানে ঠিক সময়ে সেই রাজকুমার তার সামনে এসে হাজির হবে। মৃণালিনীর রাজকুমারের সাথে অভির কোনোদিকে কোনো মিল নেই।।

জীবনে কত শখ ছিল মৃণালিনীর। প্রেম করবে, বয় ফ্রেন্ড এর হাত ধরে ঘুরবে  হলো না আর হবেও না। এই বাড়িতে প্রেম করা মানে মহাপাপ। মৃণালিনী একটু ছটফটে টাইপের বলে বাবা খুব চোখে চোখে রাখে। একটু বেফাঁস হলেই দুটো চোখ বড় বড় করে থাকে ব্যাস সব সাহস ফুস হয়ে যায় মৃণালিনীর। সাথে বিরক্তও লাগে। অবশ্য শুধু মৃণালিনীর ক্ষেত্রে নয় এই বাড়ির সব ছেলেমেয়েদের  জন্যই প্রেম মানে পাপ। তাই সবার বিয়েই দেখাশোনা করে হয়েছে আর যারা বাকি আছে তাদেরও হবে। তবে লোকে বলে প্রেম করলে নাকি সব করা যায়। বাড়ির অমতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়ে বিয়ে করা যায়, না এত সাহস নেই মৃণালিনীর। তাই ওসব প্রেম ট্রেমের ধরে কাছে যায়নি আর যাবেনা। তবে খুব একটা যে অফার পেয়েছে তা নয়। গুনে গেথে ৫-৬ টা,অনিন্দিতা, শ্রাবনী, পিয়ালী, ওরা প্রায় ১৮,১৯ টা। আর সোমালি তো ২৮ না ২৯ ,যেখানেই যায় সেখানেই অফার করে ছেলেরা , হুম ফিগারটাও তো তেমন, দেখতেও তেমন। যাই হোক ৫- ৬ টাই বা কম কিসে? আর তাছাড়া অফার পেলেই বা কি ? প্রেম করা তো হবে না। তাই ঠিকই আছে – এই নিয়ে নিজেকে বোঝায়।

 

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

যাই হোক এবার গায়ে হলুদ হবে, বুকু বসেছে দিদির পাশে, সে নিতকনে। তার জন্য একটা শাড়ীও কেনা হয়েছে হলুদ রঙের ,সেটাই পড়েছে সে। খুব ভালো লাগছে। অনেকগুলো পিকচার তুলেছে অভি বুকুর। শুধু বুকুর নয় গায়ে হলুদেরও। তবে বেশিরভাগেতেই হবু বৌদি সুভাষিণী আর মৃণালিনী আর বুকু। হবু বৌদি সুভাষিণী আর বুকুর পিকচার তুলছিলো কিন্তু মৃণালিনী তাদের কাছে থাকায় সে পিকচার এ ঢুকে পড়েছে। অভি জেনে বুঝে তার পিকচার তোলেনি। এদিকে কনের গায়ে হলুদ দেওয়ার পরে এবার হলুদ নিয়ে গোটা বাড়ির লোক একে অপরকে হলুদ মাখাচ্ছে। না বয়স্করা নয়,কম বয়সীরাই ,তবে সবচেয়ে এগিয়ে মৃণালিনী,সে গালে হলুদ মেখে নানা পোজ দিয়ে সেলফি তুলছে ,শুধু তাই নয় নিজে পিকচার তুলে হচ্ছে না যাকে পারছে তাকে ডেকে মোবাইল দিয়ে পিকচার তুলে দিতে বলছে। পুরো কার্টুন একটা ,অভি সিওর যে কালকে এই মুখে গোবর মেখেছিলো। যাই হোক গায়ে হলুদ মিটেছে। অনেক করে খেয়ে যেতে বলেছে হবু বৌদির বাড়ির লোকজন কিন্তু অভিরা থাকেনি, লগ্ন একটু তাড়াতাড়ি , তাই সেই মতো বের হতে হবে, ফলে দেরি করলে বের হতেও দেরি হবে।

 

অভিরা বাড়ি এসেছে , দাদার কাছে জেনেছে যে ওই মৃণালিনীই হলো দাদার ছোট শালী, কালকে যে মুখে ঐসব মেখেছিলো।আর আজকে ওই গাদা গাদা হলুদ, সত্যি পারে বটে, যার কপালে জুটবে সে পাগল হয়ে যাবে। যাই হোক, সবার সাথে অনেকদিন পর দেখা, এদিকে গায়ে হলুদ বেরিয়ে যাবার পরে অনেকে এসেছে, তাদের সাথে জমিয়ে আড্ডায় বসলো অভি মৃণালিনীকে ঝেড়ে ফেলে। অন্যদিকে মৃণালিনীও ঝেড়ে ফেলেছে অভিকে , বেশি চিন্তা করবে না , যতই রাগ হোক না কেন? রাত্রে সাজগোজ করতে হবে , চিন্তা করলে মুখে তার সবটা প্রকাশ পাবে। সে ব্যাস্ত রাত্রে তার সাজগোজ নিয়ে চিন্তায়, আর এদিকে অভি ব্যাস্ত আড্ডায়।

 

বিকাল থেকে মৃণালিনী সৌদামিনীর ঘরে আছে, পার্লার থেকে সাজাতে এসেছে , সৌদামিনীর সাজা হলে এবার মৃণালিনীকে সাজাবে পার্লারের দিদি। সৌদামিনীর সাজ হয়েছে সে বাইরে গেছে এবার মৃণালিনী সাজতে বসেছে। তাকে কোনো কাজে পাওয়া যায়না, যাবেনা সবাই জানে তাই তাকে কেউ ডিসটার্ব করেনি, বর আসার আগেই সাজ কমপ্লিট হয়েছে এবার। না খারাপ লাগছে না , তবে আহামরিও কিছু লাগছে না , বড়মা, মেজোমা অবশ্য বলেছে সাদামাটা সাজ, কি এত মেখেছিস মুখে , পুরো চক চক করছে, উত্তর এসেছে তোমরা বুঝবে না।

যায় হোক, মৃণালিনীর বন্ধুরাও এসে গেছে। তারা অবশ্য বলেছে বাব্বা গর্জিয়াস লাগছে। আসলে যারা বোঝার তারাই বুঝবে তাই না, মা , জেঠিমা,মেজোমা ওরা পুরোনো দিনের মানুষ, কি বোঝে সাজার। কিন্তু বন্ধুদের কয়েকটা প্রশ্নে ফের মুড্ অফ হয়ে গেছে। অনিন্দিতা,শ্রাবনী, পিয়ালী এমনকি সোমালি র মুখেও – এই ওই ছেলেটা কে রে? তোর পোস্ট করা পিকচার একটুখানি দেখাযাচ্ছিল, উফফ কি হ্যান্ডসম,তোদের বাড়ির? একটু পরিচয় করা না? কি নাম রে? প্রথমে বুঝতে না পারলেও পিকচার দেখে বুঝেছে অভির কথা বলছে , পাস্ থেকে একটু দেখা যাচ্ছে। মনজুর আবার বেশি বেশি, সে তো ওর হিস্ট্রি, জিয়োগ্রাফি, গোবর মাখা থেকে শুরু করে মৃণালিনীকে বুকুর মা মনে করা সব গল গল করে বলে দিলো ওদের।যত্তসব, আর ওরা হ্যা হ্যা করে হাসছে, অনিন্দিতারা ফের শুরু করলো – খাওয়াটা কম বুঝলি, রোগ হ, ব্যায়াম কর। প্রেস্টিজ পাংচার, এই জন্যই মঞ্জুকে দেখতে পারেনা মৃণালিনী। শুধু মাসির মেয়ে বলে সহ্য করে।

 

আর অভিকে নিয়ে এত আদেখলেপনা করার কি আছে, একটু দেখতে ভালো , এমন কিছু তো নয়। না আসলে অভিকে দেখতে খুব সুন্দর,সুঠাম চেহারা, লম্বা, মুখ চোখ ও বেশ শার্প ,কিন্তু মৃণালিনী র মতে ভালো নয়, সেও জানে সে জোর করেই বলছে ভালো নয়। আসলে মৃণালিনী একটু মোটা,খুব একটা লম্বা নয়,মুখশ্রী ভালো তাই তার ধারণা তার পাশে দেখতে এমন ভালো ছেলেকে মানাবে না। বা তাকে কোনো দেখতে ভালো ছেলে পছন্দ করবে না , সাদামাই হবে তার বড়, সুতরাং অমন হ্যান্ডসমদের কথা চিন্তা করে মন খারাপ করার কোনো মানে হয় না। ইচ্ছা করেই একটা পাঁচিল তুলে রেখেছে মৃণালিনী। আর তাই মনকে স্বান্তনা দিয়ে বলে দেখতে ভালো নয়।

চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে মৃণালিনী, বরযাত্রীরা এলে কি হবে, ওরা সব অভির উপরে হামলে পড়বে, ন্যাকা ,ন্যাকা সব, আর অভি সেও তো হামলাবে এত সুন্দরী মেয়েদের দিকে, যাকগে মরুকগে ওর কি ? শুধু বই একটাই যেন আবার উল্টোপাল্টা না বলে মৃণালিনীর সম্পর্কে , ফের যা তা হবে।

এই বর এসে গেছে , বর এসে গেছে, বিয়েবাড়িতে সানাই আরো জোরে বেজে উঠলো।

আগের পর্ব – মৃণালিনীর প্রেম -(লাভ স্টোরি)- কলমে অপরাজিতা – পর্ব ২

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!