এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সভাপতি নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বড়সড় অভিযোগ সাংসদের বিরুদ্ধে

সভাপতি নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্যে বিজেপির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বড়সড় অভিযোগ সাংসদের বিরুদ্ধে

দীর্ঘদিন থেকেই মন্ডল সভাপতি থেকে শুরু করে সাংগঠনিক সভাপতি, জেলা পরিষদ সভাপতি ইত্যাদি পদাধিকার বন্টন নিয়ে প্রকাশ্যে চলে এসেছে ভারতীয় জনতা পার্টির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। আর সেই দৃশ্যের আরেকটি ঝলক দেখা গেল নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রে। সেখানে দলীয় বিধায়কের অভিযোগ, তাকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে কৃষ্ণগঞ্জ এলাকায় তিনজন মন্ডল সভাপতিকে পরিবর্তন করেছে নেতৃত্ব।

যা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে। সেই কারণেই দলীয় নেতৃত্বের কাছে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন জানিয়েছেন ওই বিধায়ক। তবে ভারতীয় জনতা পার্টি সূত্রে জানা যাচ্ছে, শুধু ওই তিনজন মন্ডল সভাপতি নয়, আরও একজন মন্ডল সভাপতিকেও খুব তাড়াতাড়ি পদ থেকে সরানো হতে পারে। ইতিমধ্যেই শান্তিপুর শহরের দুইজন মন্ডল সভাপতি এবং বীরনগরের মন্ডল সভাপতিকে পরিবর্তন করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি।

এক্ষেত্রে শান্তিপুর এক নম্বর মন্ডল কমিটির সভাপতি হিসেবে সুভাষ মন্ডলকে পরিবর্তন করে তার জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিপ্লব করকে। আবার শান্তিপুর 2 নম্বর মন্ডল সভাপতি পদে আগের সভাপতি আশীষ দত্তের জায়গায় নতুন সভাপতি হিসেবে এসেছেন সুব্রত কর। তিন নম্বরের ক্ষেত্রে মন্ডল সভাপতি হিসেবে সুজন বালাকে সরিয়ে স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন শংকর দাস। অন্যদিকে আবার শান্তিপুর 29 নম্বর মন্ডল সভাপতি নির্মল বিশ্বাসকে পরিবর্তন করে ব্রজগোপাল দাসকে নতুন সভাপতি বানানো হয়েছে।

কিন্তু এক্ষেত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির একটি বিশেষ অংশ অভিযোগ তুলতে শুরু করে দিয়েছেন। তাদের মতে, নতুন মন্ডল সভাপতিদের সকলেই রানাঘাট এলাকার বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকারের গোষ্ঠীর সদস্য বলে পরিচিত। এক্ষেত্রে দলীয় পদে স্বজনপোষণ করে ভারতীয় জনতা পার্টির বর্তমান জেলা সভাপতিকে সামনে দাঁড় করিয়ে আগের জেলা সভাপতি জগন্নাথবাবু নিজের কর্তৃত্ব জেলায় কায়েম করতে চাইছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে ভারতীয় জনতা পার্টির জগন্নাথবাবুর বিরোধী গোষ্ঠির পক্ষ থেকে এরকম অভিযোগ নতুন নয়। এর আগে যখন অশোক চক্রবর্তীকে নদিয়া দক্ষিণ জেলার সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পদে বসানো হয়েছিল, কার্যত তখন থেকেই বিজেপির একটি অংশও অভিযোগ করছিল যে, পুনরায় জগন্নাথবাবু নেপথ্যে থেকে দলকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে ভারতীয় জনতা পার্টির নদীয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার বর্তমান সভাপতি অশোক চক্রবর্তী মন্তব্য করেন, “এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। যাদের সরানো হয়েছে, তাদের কারও মেয়াদ শেষ হয়েছে। আবার কারও বয়স হয়ে গিয়েছে। এটা একটা সংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে পড়ে।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তবে অশোকবাবুর সঙ্গে একমত নন কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা এলাকার সদ্য প্রাক্তন সভাপতিদের একাংশ। তাদের বক্তব্য, ওই বিধানসভা উপনির্বাচনের আগে তৎকালীন জেলা সভাপতি জগন্নাথবাবু নিজের ঘনিষ্ঠ একজনকে দলীয় প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে বিরোধিতা করেন এলাকার চারজন মন্ডল সভাপতি। তারা আশিস বিশ্বাসকে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী পদে দাবি করেন। অবশেষে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্ব আশিসবাবুকে প্রার্থী করার পর থেকেই জগন্নাথবাবুর সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় ওই সমস্ত মণ্ডল সভাপতিদের।

বিজেপি সূত্রে জানা যায়, কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়কের সঙ্গে জগন্নাথবাবুর সম্পর্ক আগের থেকেই ভালো নয়। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রাক্তন জেলা সভাপতি মানবেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিল কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়কের বলে মত একাংশের। যেহেতু এলাকার চারজন মন্ডল সভাপতি বরাবরই প্রাক্তন জেলা সভাপতি এবং কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়কের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিল, সেই কারণেই জগন্নাথ বাবু নিজের প্রভাব খাটিয়ে তাদেরকে অপসারিত করেছেন। এদিন এই ঘটনা প্রসঙ্গে 37 নম্বর মণ্ডল কমিটির অপসারিত সভাপতি বলেছেন, “আমাদের অপরাধ, আমরা জগন্নাথ সরকারের পছন্দের লোকের পরিবর্তে আশিস বিশ্বাসকে প্রার্থী হিসাবে চেয়েছিলাম। আর সেই কারণে উনি নানা কলকাঠি নেড়ে আমাদের সরিয়ে দিলেন।”

একই অভিযোগ করেছেন 35 নম্বর মণ্ডল কমিটির অপসারিত সভাপতি। তবে কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক আশিস বিশ্বাস রীতিমতো আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, “আমায় অন্ধকারে রেখে মন্ডল সভাপতিদের বদল করা হয়েছে। আমি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলছি। তাদের কি করে সরিয়ে দেওয়া হল, সেটা তো পরিষ্কার হওয়া দরকার।” তবে গোটা ব্যাপারে মত প্রকাশ করতে গিয়ে জগন্নাথ সরকার বলেন, “একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মন্ডল সভাপতিদের নির্বাচন করা হয়েছে। এতে বিধায়ক অথবা সাংসদের কোনো ভূমিকা থাকে না। যারা এসব কথা বলছেন, তারা মনে হয়, নিজের দলের সাংগঠনিক বিষয়টা ঠিক জানেন না।” তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মন্ডল সভাপতিদেরকে পরিবর্তন করার এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছে না দলের অনেক নেতা কর্মীরাই।

এক্ষেত্রে অনেকেই দাবি করেছেন, সাংগঠনিক শক্তির উপর ভর করেই কয়েকমাস আগে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা উপনির্বাচনে 31 হাজার ভোট এবং লোকসভা নির্বাচনে 22 হাজার ভোটে এগিয়ে ছিল ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু এরকম গোষ্ঠী কোন্দল চলতে থাকলে 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনে তার একটা বড় প্রভাব পড়বে। আবার দলের আরেক অংশ দাবি করেছে, কোনো কোনো মন্ডল সভাপতি এতটাই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গিয়েছিল যে, তাদেরকে না সরিয়ে আর কোনো উপায় ছিল না দলের কাছে। এক্ষেত্রে দলীয় সংসদ কে সমর্থন করতেই দেখা গেছে নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার ভারতীয় জনতা পার্টির নির্বাচনী আধিকারিক বিজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

তিনি বলেন, “সব পরিবারেই মতপার্থক্য থাকে। তবে এটা দলের সিদ্ধান্ত। কারও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়।” ওয়াকিবহাল মহল মনে করছেন, যদি 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নদীয়া জেলায় ভারতীয় জনতা পার্টির নিজেদের কোন্দল সঠিকভাবে মিটিয়ে ফেলতে না পারে, তাহলে সত্যিই এই গোষ্ঠী কোন্দলের প্রভাব পড়তে পারে নির্বাচনে। তাই এখন রাজ্য নেতৃত্ব এবং শীর্ষ নেতৃত্ব এই সমস্যা সমাধানে কি উপায় বের করেন! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

ট্যাগড
Top
error: Content is protected !!