এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > পুজোর মুখেই বড়সড় ধাক্কা খেলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা, হারালেন পদ,জোর শোরগোল

পুজোর মুখেই বড়সড় ধাক্কা খেলেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা, হারালেন পদ,জোর শোরগোল


উত্তরবঙ্গে বিগত লোকসভা নির্বাচনে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে চলে গেছে তৃনমূল কংগ্রেস। এখানে আটটি লোকসভা সিটের মধ্যে সিট দখল করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। অন্যদিকে মালদা দক্ষিণে একটি সিট দখল করে টিমটিম করে জ্বলছে জাতীয় কংগ্রেস। কিন্তু উত্তরের রাজনৈতিক রনাঙ্গনে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু পর্যন্ত নেই শাসকদলের।

যে সাতটি লোকসভা আসনে উত্তরবঙ্গে জয়যুক্ত হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি, তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য লোকসভা আসন হল কোচবিহার। বাংলার সীমান্তবর্তী এই জেলা বারবারই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। কখনও তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ কারণে, কখনও বা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে। আর এই অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বারবার ভুগিয়েছে রাজ্যের শাসক দলকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের হারের নেপথ্যে রয়েছে তথাকথিত সেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। এই জেলায় প্রায়শই ধরা পড়ত তদানীন্তন জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ের অন্তর্ঘাতের ছবি। যার কারণে বারবার হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে রাজ্য তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বদেরকে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পাননি প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বস্তুত, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষনা পর্বের আগআগ দিয়ে পার্থপ্রতিম রায়ের নাম উচ্চারণ করে ফেলেন বিজেপির চাণক্য বলে খ্যাত মুকুল রায়। আর এরপরই কার্যত ভাটা দেখা দেয় পার্থবাবুর রাজনৈতিক ভবিষ্যতে। কিন্তু নিজে লোকসভার টিকিট না পেলেও দলের হয়ে প্রচার করতে কোনোরকম কার্পণ্য দেখাননি ভূতপূর্ব এই সাংসদ।

দলের স্বার্থে কখনও ছুটে গেছেন পুরুলিয়ায়, কখনও বা বালুরঘাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রচার করে গেছেন দলীয় প্রার্থীর হয়ে। আর যার কারণে পরবর্তীতে নেত্রীর কিছুটা স্নেহের পাত্র হয়ে পড়েছিলেন কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ। যার ছবি ধরা পড়েছিল বিগত দিনে দলের একাধিক সিদ্ধান্তে। সম্প্রতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের কমতে থাকা জনপ্রিয়তাকে লক্ষ্য করে তাকে একমত কোণঠাসা করে দিয়েছে রাজ্য তৃণমূল কংগ্রেস বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

পাশাপাশি বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে রবীন্দ্রনাথবাবুর জায়গায় জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিনয়বাবুর পাশাপাশি পার্থপ্রতিম রায়কেও গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিতে কার্পণ্য করেনি তৃণমূল। তাকে জেলার কার্যকারী সভাপতির পদে অভিষিক্ত করা হয়েছে। আর এই স্থান যে পার্থবাবুর কষ্টার্জিত, সেই বিষয়ে সংশয় নেই বিশ্লেষকদের মনে।

কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পার্থবাবুর রাজনৈতিক পরিসরে। এতদিন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতির পাশাপাশি কোচবিহার জেলা যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতির পদও সামলাচ্ছিলেন। কিন্তু এবার তার জায়গায় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কোচবিহার জেলার নতুন সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল বিষ্ণুব্রত বর্মনকে।

যদিও বিশেষ সূত্রে জানা যাচ্ছে, মাসখানেক আগেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু গত বুধবার এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় বলে খবর। যা নিয়ে কিছুটা চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলের আনাচে কানাচে। তবে বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, পার্থবাবুকে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দিলেও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোনরকম আচড় পড়বে না। কারণ তাকে যখন জেলার মূল সংগঠনের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়, এক মত তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতির পদে আসতে চলেছে নতুন মুখ। কাজেই এই সিদ্ধান্ত শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তৃণমূল সূত্রে জানা গেছে, পার্থপ্রতিম রায়ের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে বিষ্ণুবাবুর। আর এতে করেই স্পষ্ট হয়, পার্থবাবুর পরামর্শ মতনই নতুন যুব সভাপতি বেছেছে রাজ্য তৃণমূল। গোটা বিষয়ে বলতে গিয়ে জেলার প্রাক্তন জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “দলীয় নেতৃত্ব যাকে দায়িত্ব দেবেন, তিনিই কাজ করবেন। দলে এই ব্যাপারে কোনো দ্বন্দ্ব নেই।”

অপরদিকে এই প্রসঙ্গে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “রাজ্য নেতৃত্ব এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রসেনজিৎ বর্মন দলের শুরুতে দায়িত্ব সামলেছিলেন। তার ছেলে বিষ্নু দলের যুব সংগঠনকে চাঙ্গা করবেন বলেই আশা রাখি।” কিন্তু যাকে নিয়ে এত জল্পনা, সেই পার্থপ্রতিম রায় প্রসঙ্গে জেলার বর্তমান তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “পার্থ বর্তমানে দলের কোচবিহার জেলার কার্যকরী সভাপতি।”

এদিকে এই প্রসঙ্গে পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “বিষ্ণুব্রত বর্মনকে স্বাগত জানাই। তিনি সংগঠন আরও এগিয়ে নিয়ে যাবেন। সব রকম ভাবে তার পাশে থাকব।” আর পার্থবাবুর এই কথাতেই স্পষ্ট, জেলায় আগামীদিনে যুব সভাপতি সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে চলেছেন মূল সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিষ্ণুবাবুর সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে জেলার বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠনগুলোর। তিনি দীর্ঘ সময় ধরেই জেলার বিভিন্ন ক্রীড়া সংসদের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন। এছাড়াও সাংগঠনিক অভিজ্ঞতাও রয়েছে বিষ্ণুবাবুর। তিনি পার্থপ্রতিম রায়ের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক রূপে তৃণমূল যুব কংগ্রেসের কাজও করেছেন বলে জানা গেছে। কাজেই তার এই অভিজ্ঞতা আগামীদিনে তৃণমূল যুব সংগঠনকে শক্তিশালী করবে বলেই মত তৃণমূল ঘনিষ্ঠদের।

এদিন এই বিষয়ে বলতে গিয়ে নব দায়িত্বপ্রাপ্ত কোচবিহার যুব কংগ্রেসের সভাপতি বিষ্ণুব্রত বর্মন বলেন, “নেতৃত্ব যা দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করার জন্য সবরকম চেষ্টা করব।” রাজনৈতিক মহলের মতে, এখন দেখার বিষয় জেলার নতুন যুব সভাপতি হওয়ার পরে মূল সংগঠন এবং যুব সংগঠন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে পারে, নাকি কোচবিহার জেলার ট্রেডিশন অনুযায়ী থেকেই যায় সেই মাদার-যুবর লড়াই! এই বিষয়েই প্রখর দৃষ্টি থাকবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!