এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > বেদনাতুর দীর্ঘ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে এবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ের পথে রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষাবন্ধু

বেদনাতুর দীর্ঘ যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে এবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত লড়াইয়ের পথে রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষাবন্ধু


যতদিন যাচ্ছে ততই যেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উপচে পড়ছে রাজ্যের সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কর্মীদের মধ্যে। এতদিন রাজ্য সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে বড়সড় আন্দোলনের পথে হেঁটেছিলেন রাজ্য সরকারি কর্মচারী ও রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা। আর এবার রাজ্য সরকারের অস্বস্তি বহুগুন বাড়িয়ে তীব্র আন্দোলনের পথে রাজ্যের হাজার হাজার শিক্ষাবন্ধুরা।

আজ ও আগামীকাল – কলকাতার গান্ধীমূর্তির পাদদেশে দুদিনব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনে বসছেন রাজ্যের বেশ কয়েক হাজার শিক্ষাবন্ধু। দীর্ঘদিন ধরেই তীব্রভাবে বঞ্চিত থাকার পর আর চুপ করে বসে থাকতে রাজি নন রাজ্যের শিক্ষাবন্ধুরা। গান্ধীমূর্তির পাদদেশে সাত দফা দাবি নিয়ে তাঁরা রাজ্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বসছেন।

কি তাঁদের সেই দাবি? এই প্রসঙ্গে শিক্ষাবন্ধু ঐক্য মঞ্চের রাজ্য সহ-সভাপতি নন্দদুলালবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান –
১. সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অনুসারে অবিলম্বে রাজ্যের সমস্ত শিক্ষাবন্ধুর জন্য সমকাজে সমবেতন চালু করতে হবে
২. শিক্ষাবন্ধুদের পদমর্যাদা নির্ধারণ করতে হবে
৩. যেহেতু এই পদে নিয়োগকালীন বয়স ৩৫ – ৫০ ছিল – তাই, অবসরকালীন বয়স ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করতে হবে
৪. অবসরকালীন গ্র্যাচুইটি ৫ লক্ষ টাকা করতে হবে
৫. কর্মরত অবস্থায় কোন শিক্ষাবন্ধুর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারের একজনকে চাকরি দিতে হবে
৬. অবিলম্বে কেন্দ্রীয় হারে বকেয়া ডিএ ও পে-কমিশন চালু করতে হবে
৭. সমস্ত অস্থায়ী কর্মীর স্থায়ীকরণ করতে হবে

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না – তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

কিন্তু, কেন হঠাৎ করে শিক্ষাবন্ধুরা এইভাবে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটছেন? এই প্রসঙ্গে, নন্দদুলালবাবু জানান, আমরা বছর দেড়েক আগে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষাবন্ধুদের প্রাপ্য জানার জন্য আরটিআই করি। যেহেতু, এটি কেন্দ্রীয় প্রকল্প এবং কেন্দ্র শিক্ষাবন্ধুদের প্রাপ্যের ৬৫% ও রাজ্য ৩৫% দেয় – তাই, অন্য রাজ্যে বেশি দিচ্ছে বলেই আমরা কেন দেব – এই কথা কোন রাজ্য সরকার বলতে পারে না। আমাদের করা আরটিআই অনুযায়ী কয়েকটি রাজ্যের শিক্ষাবন্ধুদের প্রাপ্য নিম্নরূপ –
তামিলনাড়ু – ৪৬,৯৩৩ টাকা
হরিয়ানা – ৪৫,০৩৮ টাকা
ত্রিপুরা – ৩৮,০৯৯ টাকা
মধ্যপ্রদেশ – ২৬,২৮১ টাকা
দিল্লি – ২৭,৮০০ টাকা

আর এরপরেই, নন্দদুলালবাবুর আক্ষেপ – আর আমাদের পশ্চিমবঙ্গে আমরা শিক্ষাবন্ধুরা যে টাকাটা পাই বলতে রীতিমত লজ্জা করি। অনার্স সহ গ্র্যাজুয়েট করে মাস্টার করা লোকেরা পান ৫,২৪০ টাকা! তাও তো আপনাকে যে আরটিআইএর কথা বললাম সেটা বছর দেড়েক আগের কথা – বর্তমানে, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম থেকে আমরা জানতে পেরেছি হরিয়ানার শিক্ষাবন্ধুরা পাচ্ছেন প্রায় ৫৯ হাজার টাকারও বেশি। তাহলে বুজতে পারছেন – কতখানি যন্ত্রনাময় ও অপমানকর অবস্থার মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের – অথচ, রাজ্য সরকার নির্বিকার।

কিন্তু, শিক্ষাবন্ধুদের এই আন্দোলন আদৌ কতটা ছাপ ফেলবে রাজ্য-রাজনীতিতে। প্রশ্নের জবাবে নন্দদুলালবাবু সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক মহলের যে তালিকাটা দিলেন – যাঁরা শিক্ষাবন্ধুদের এই আন্দোলনকে পূর্ন সমর্থন জানিয়ে আগামী দুদিন ধর্ণা মঞ্চে সরাসরি উপস্থিত থাকবেন – তা রীতিমত চমকে দেওয়ার মত। রাজ্যের বুদ্ধিজীবীমহল ও বিরোধী রাজনৈতিক মহলের কে নেই সেই তালিকায়? নন্দদুলালবাবুর দেওয়া তালিকা অনুযায়ী এই আন্দোলনের মঞ্চে থাকতে চলেছেন –

১. অশোক গঙ্গোপাধ্যায়
২. বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য
৩. প্রদীপ ভট্টাচার্য
৪. সুজন চক্রবর্তী
৫. সোমেন মিত্র
৬. কবি শঙ্খ ঘোষ (উনি প্রচন্ড অসুস্থ বলে হয়ত স্বশরীরে উপস্থিত হতে পারবেন না)
৭. মনোজ চক্রবর্তী
৮. অম্বিকেশ মহাপাত্র
৯. পল্লব কীর্তনিয়া
১০. মইদুল ইসলাম
১১. সুখবিলাস বর্মা
১২. নেপাল মাহাতো
১৩. রঞ্জিত শুর
১৪. কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায়
১৫. শাশ্বতী ঘোষ
১৬. চঞ্চল চক্রবর্তী
১৭. মৌসুমী কয়াল
১৮. টুম্পা কয়াল
১৯. পার্থ ঘোষ
২০. দিবাকর ভট্টাচার্য
২১. বাসুদেব বসু

নন্দদুলালবাবুর দেওয়া তালিকা শেষ হওয়ার নয়! এই সকল বিশিষ্টজনের সঙ্গে থাকছেন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের শীর্ষনেতারা। থাকছে যাদবপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রাডিক্যাল – যাঁরা নিজেদের সাইকেল রালি নিয়েই আন্দোলনের মঞ্চে যোগ দেবেন। নন্দদুলালবাবু স্পষ্ট জানালেন – দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই যৎসামান্য অর্থ দিচ্ছে রাজ্য সরকার – কোনো বেতনের ‘রিভিশন’ নেই, ‘ইনক্রিমেন্ট’ নেই – মোর বেঁচে আছি কার্যত। তাই ইতিমধ্যেই, আমরা ৯৩ জন মাননীয় রাজ্যপাল, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন জানিয়েছি। আগামী দুদিনে আবেদনকারীর সেই সংখ্যাটা কম করে আড়াই হাজারে পৌঁছে যাবে। এখন দেখ যাক – এই তীব্র আন্দোলনের পরে রাজ্য সরকারের কানে আমাদের করুন আর্তি পৌঁছায় কিনা – নাহলে আমরা আগামীদিনে বৃহত্তর পদক্ষেপের পথে যেতে বাধ্য হব।

শিক্ষাবন্ধুদের আন্দোলনের সমর্থনে মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য।
আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!