এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > শুভেন্দুর খাসতালুকে বিপুল ভোট বাড়লেও, কর্মীর অভাবে ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির!

শুভেন্দুর খাসতালুকে বিপুল ভোট বাড়লেও, কর্মীর অভাবে ব্যাকফুটে গেরুয়া শিবির!

সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকেই রাজ্যের বর্তমান শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক জয়যাত্রা শুরু হয়, একথা প্রায় সকল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরাই এক বাক্যে স্বীকার করেন। কিন্তু রাজনীতিতে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তাই যে সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম আন্দোলন থেকে তৃণমূলের ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের পথ প্রশস্ত হয়েছিল, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে সেই নন্দীগ্রামে ভারতীয় জনতা পার্টি রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে।

এবারের নির্বাচনে প্রায় 30 শতাংশ ভোট পেয়ে রীতিমতো ঘাসফুল শিবিরের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলতে থাকে পদ্মফুল শিবির। কিন্তু এত কিছু সত্ত্বেও এলাকায় সাংগঠনিকভাবে নিজেদের প্রসারের দিক থেকে রীতিমতো পিছিয়ে রয়েছে বঙ্গ বিজেপি। নন্দীগ্রামে পার্টি অফিস খুঁজে পাচ্ছে না ভারতীয় জনতা পার্টি। গোটা তল্লাট খুঁজলেও কোথাও গেরুয়া ঝান্ডার খোঁজ মেলা ভার। যদিও এবারের লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তবুও বিজেপি কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উচ্ছ্বাস বা আবেগের চিহ্নমাত্র পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ নন্দীগ্রামের মাটিতে তৃণমূল বিরোধী সাংগঠনিক কর্মসূচি নেওয়া যে রীতিমতো কঠিন ব্যাপার, তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে গেরুয়া শিবির।

পরিস্থিতি এমন যে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে লড়াই করার মতো নেতা পাওয়াও কঠিন। যার ফলস্বরূপ লক্ষ করা যায় রাজ্যের অন্যান্য বিধানসভা এলাকার মতো নিজেদের অবস্থান বিক্ষোভ বা কর্মসূচি কোনটাই স্বাচ্ছন্দে গ্রহণ করতে পারছে না বিজেপি। আর এরকম পরিস্থিতিতে মানুষের পাশে থাকার জন্য বা জনসংযোগ রক্ষা করার জন্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান, মন্দির সংস্কার ইত্যাদি কাজের মধ্যে দিয়ে জনসংযোগ রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। সম্প্রতি এলাকায় একটি মন্দির তৈরি নির্মাণ করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব অস্বস্তিতে পড়েছিলেন।

যদিও লোকসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তৃনমূল প্রায় 1 লক্ষ 30 হাজার 659 ভোট পেয়েছিল। তবুও 62 হাজার 268 ভোট পেয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী। সিকিমের কাছ দুই নম্বর স্থান ছিনিয়ে নেয় ভারতীয় জনতা পার্টি। তাই নন্দীগ্রামে রাজনীতির মাটিতে এখন তৃণমূল কংগ্রেসের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ যে ভারতীয় জনতা পার্টি, সেই বিষয়ে একমত প্রায় সকলেই। রাজনৈতিক মহলের মতে, এলাকায় জমি আন্দোলন থেকে শুরু করে দীর্ঘদিনের বাম অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। কাজেই জনসংখ্যার দিক থেকে এবং ভোটের দিক থেকে তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে থাকবে, সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জমি আন্দোলন থেকে শত যোজন দূরে থেকে কি করে বিজেপি 30 শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে পৌঁছে গেল, তা রীতিমতো পর্যালোচনা করার বিষয়।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

যদিও সাংগঠনিক ক্ষমতা না থাকায় পার্শ্ববর্তী খেজুড়িয়া বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে ক্ষমতার লড়াই করলেও নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে কার্যত অস্তিত্বহীন অবস্থায় রয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এলাকার বিডিও অফিস, বাসট্যান্ড, রাস্তাঘাট কোথাও তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া অন্য কোনো পতাকা দেখতে পাওয়া ভার। জোড়াফুলের পতাকায় ঢেকে রয়েছে সমগ্র নন্দীগ্রাম। এই বিষয়ে নন্দীগ্রামের বিজেপি মন্ডল সভাপতি শতদল বল জানান, নন্দীগ্রামে আমাদের কোনো পার্টি অফিসে টেঙ্গুয়া বাজারে একজনের বাড়িতে আমি বসি। ঘরের চাবি আমার কাছে থাকে। আমি নিজেই তালা খুলে বসি। নন্দীগ্রাম এলাকায় আমাদের তিনটি মণ্ডল কমিটি আছে। তবে এখানে সাংগঠনিক কাজকর্ম করার ব্যাপারে বাধা বিপত্তি আছে। তাই মানুষের সমর্থন কিংবা ইচ্ছা থাকলেও বাইরে বেরিয়ে এসে তারা কর্মসূচিতে শামিল হতে পারে না।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নন্দীগ্রামের কুড়িঘাটা থেকে বামনচক যাওয়ার রাস্তার পাশে শ্যামসুন্দরী চক মৌজার 63 ফুট উচ্চতার সুসজ্জিত একটি শিব মন্দির রয়েছে। স্থানীয় রাজারামচক, হোসেনপুর, মির্জাপুর এবং শ্যামসুন্দরী চকের বহু বাসিন্দারা একযোগে ওই মন্দির তৈরিতে সহযোগিতা করেছিলেন। মন্দিরের 35 জন বিশিষ্ট একটি নির্মাণ কমিটি রয়েছে। প্রথমবার মন্দির নির্মাণের বাজেট 13 লক্ষ থাকলেও এখন তা ছাপিয়ে কুড়ি লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। শোনা যাচ্ছে, এই মন্দির তৈরির পিছনে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হাতে রয়েছে। এই কথা স্বীকার করে নিয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব। এদিন এই বিষয়ে মন্ডল সভাপতি শতদল বাবু বলেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ওই মন্দির নির্মাণের কাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

যদিও শতদলবাবুর এই দাবিকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দির নির্মাণ কমিটির সদস্য তরুণ দাস এবং আরেক সদস্য অরুণ প্রামানিক অভিযোগ করেন, মন্দির তৈরীর নাম করে স্থানীয় দুই বিজেপি নেতা নিজের দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে টাকা আদায় করেছেন। তারা অভিযোগ করেন, আমাদের কাছে খবর এসেছে মন্দির তৈরীর অজুহাতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন দুজন নেতা। কিন্তু সেই টাকা কোনভাবেই মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেনি।

তৃণমূলের স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত স্থায়ী সমিতির কর্মদক্ষ স্বদেশ দাস বলেন, নন্দীগ্রামে বিজেপি নেই। তাই এখানে ওদের কর্মসূচিও নেই। কোনো পার্টি অফিস পর্যন্ত নেই। কিন্তু এলাকার সংগঠন করতে না পেরে যখন নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইছে ভারতীয় জনতা পার্টি, তখন সেই মন্দির নির্মাণ প্রকল্পের টাকা শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে নিয়ে কমিটিকে তা না দাওয়া যে রীতিমতো প্রশ্নের মুখে ফেলতে পারে এলাকার পদ্মফুল শিবিরকে, সেই বিষয়ে একমত প্রায় সকল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এখন নিজেদের সংগঠন রক্ষায় ভারতীয় জনতা পার্টি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন, সেদিকেই নজর সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!