আজ রাজ্যে ষষ্ঠ দফার লোকসভা নির্বাচন চলছে। আর এই নির্বাচনের আগের রাতেই পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে তৃণমূল কর্মী সুধাকর মাইতির রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। যে ঘটনায় নিহত তৃণমূল কর্মীর পরিবারের তরফে খুনের অভিযোগ তোলা হলেও বাস্তবে তা খুন নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে, তা নিয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের বিবৃতি পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল প্রত্যেকেই।

আর এবার অবশেষে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে গিয়ে এই ব্যাপারে মুখ খুললেন তৃনমূলের হেভিওয়েট নেতা তথা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। সূত্রের খবর, রবিবার সকালে নিজের ভোট দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এই তৃনমূল নেতা। আর তখনই সুধাকর মাইতি খুনের ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি এই গোটা ঘটনাকে একটি দুর্ঘটনা বলে অভিহিত করেন।

শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “সুধাকর মাইতি মৃত্যু কোনো খুনের ঘটনা নয়। তিনি দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন।” আর নিহত তৃনমূল কর্মী সুধাকর মাইতির পরিবার যখন এই ঘটনায় খুনের তত্ত্বকে খাড়া করছেন, ঠিক তখনই জেলা তৃণমূলের শীর্ষ নেতা তথা মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী সুধাকর মাইতি মৃত্যুর ঘটনাকে “দুর্ঘটনা” বলে অভিহিত করায় তা এক অন্য মোড় নিল বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

এদিকে ভোটের আগের দিন ভগবানপুরে এলাকা দখলকে কেন্দ্র করে বিজেপির দুই কর্মী অনন্ত গুছাইত এবং রনজিৎ মাইতিকে গুলি করা হয়েছে বলে বিজেপির তরফে ব্যাপারে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা বলে এদিন সেই ব্যাপারেও মুখ খুললেন শুভেন্দু বাবু। তিনি বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।” পাশাপাশি এই গোটা ঘটনায় পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার সঙ্গে যোগাযোগ করারও পরামর্শ দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, এদিন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বাংলায় প্রচারে এসে দাবি করেছেন যে, শুভেন্দু অধিকারী নাকি বিজেপিতে যোগ দেবার জন্য বিজেপি নেতাদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। যদিও এই দাবি খন্ডন করেছেন তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী স্বয়ং। আর এর পরে তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু নিয়ে এই মন্তব্যে জোর জল্পনা ছড়িয়েছে রাজ্যে। রাজনৈতিকমহলের দাবি যেখানে তৃণমূল কারণে অকারণে বিজেপিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করে সেখানে তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুকে নেহাতই দুর্ঘটনা কেন বললেন তৃণমূল নেতা? উঠছে প্রশ্ন যদিও এই নিয়ে কোনো পতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি শুভেন্দুবাবুর তরফ থেকে।

শুভেন্দু অধিকারীর এই দুই মন্তব্যে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, ভোটের আগের রাতে কাথিতে তৃনমূল কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যখন অনেকেই এই ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগের সুর চড়া করেছিলেন, ঠিক তখনই শুভেন্দু অধিকারী এই ব্যাপারে বিজেপির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করে গোটা ঘটনাটিকে দুর্ঘটনা বলে আখ্যা দিলেন। যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।

অন্যদিকে নিজের ভোট দিয়ে গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহের আগেই নির্বাচন কমিশনের উচিত গোটা ভোট প্রক্রিয়া শেষ করে ফেলা বলেও জানিয়ে দেন শুভেন্দু অধিকারী। অন্যদিকে কাঁথি এবং তমলুক এই দুই কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থীরা ব্যাপক মার্জিনে জিতবেন বলে আত্মবিশ্বাসের সুর শোনা যায় রাজ্যের এই হেভিওয়েট মন্ত্রী গলাতে।