প্রিয়বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট – তৃণমূলের ওপর সাধারণ মানুষ বিরক্ত। কারণ তৃণমূল মানেই এখন চুরি এবং দুর্নীতি। রাজ্যের মানুষের ওপর লাগাতার অত্যাচার চালিয়ে বেকারদের সঙ্গে বঞ্চনা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার দলের নেতাদের ভান্ডার পরিপূর্ণ করছেন। তেমনটাই অভিযোগ বিরোধীদের। আর তৃণমূলের অনেক নেতা বিরক্ত দলেরই কিছু নেতার ওপর। যার ফলে মাঝেমধ্যেই দলের ভেতর থেকে শোনা যায় যে, এক নেতার জন্য অন্য নেতা কাজ করতে পারছেন না। আর তার ফলে দুই নেতার অনুগামীরা জড়িয়ে পড়ছেন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে। কিন্তু এবার আর অনুগামীরা নয়, এবার একেবারে তৃণমূলেরই হেভিওয়েট সাংসদ অপর এক সাংসদের বিরুদ্ধে রীতিমত বোমা ফাটালেন। জল্পনা বাড়িয়ে দিয়ে এটাও জানিয়ে দিলেন যে, দলের কাজ নয়, এরপর থেকে তিনি রাজ্যসভার সাংসদ হিসেবে সাধারণ মানুষের কাজ করবেন।

 

কি ঘটনা ঘটেছে? সামনেই তৃণমূলের একুশে জুলাই। সোমবার গোবরডাঙ্গা টাউন হলে সেই একুশে জুলাই নিয়ে একটি প্রস্তুতি সভা হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান তথা রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর। আর সেখানেই তিনি ব্যারাকপুরের সাংসদ পার্থ ভৌমিককে রীতিমতো তুলোধোনা করেন। দলেরই সাংসদ পার্থবাবুর বিরুদ্ধে মমতাদেবী বলেন, “আগের বৈঠকে আমি ছিলাম না। কেন ছিলাম না, সেটা কি আপনারা জানেন?” তারপরেই বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসের নাম উল্লেখ করে মমতা বালা ঠাকুর বলেন বিশ্বজিৎ আমাকে ফোন করে বলেছিল বৌদি একটা বৈঠক করতে হবে মঙ্গলবার করি আমি জানাই ঠিক আছে। কি জন্য বৈঠক করতে হবে সেটা আমিও জিজ্ঞেস করিনি, আর বিশ্বজিতও বলেনি। এরপরেই আধা ঘন্টার মধ্যে আমার কাছে দিল্লি থেকে ফোন আসে, দিল্লিতে যেতে হবে। এরপর আমি বিশ্বজিৎকে ফোন করে বলি, আমি দিল্লি থেকে ফিরি, তারপর বৈঠক হবে। কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশ্বজিৎ আমায় ফোন করে বলে, পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে কথা বলেছি বৌদি। উনি আমায় বৈঠক করতে বলেছেন। বৌদি থাকলে ভালো কথা, না হলে দ্বিতীয় বৈঠকে থাকবে।” আর এই কথা শুনেই রীতিমত তিনি চটে গিয়েছেন এবং পার্থ ভৌমিকের কথায় কেন এখানে দল চলবে তা নিয়ে একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা থেকেই প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন মমতাবালা ঠাকুর।

 

তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর আরও বলেন, “পার্থ ভৌমিক কোন দায়িত্বে আছেন, আমি জানি না। বিশ্বজিৎ ওনাকে কেন ফোন করলো, আমার জানা নেই। যদি দায়িত্ব নিতে হয়, তাহলে পার্থ ভৌমিক এসে বৈঠক করবেন। আমি সেখানে থাকবো না। কারণ পার্থ ভৌমিক ওখান থেকে বলবেন, আর এখানে বৈঠক হবে, আমি সেখানে থাকব, সেটা হবে না। এর চেয়ে আমি দলকে বলব, রাজ্যসভার সাংসদ হয়ে আমি মানুষের জন্য কাজ করে যাব।”

 

আর মমতাবালা ঠাকুর যেভাবে পার্থ ভৌমিকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন এবং প্রকাশ্য সভা থেকে তার বিরুদ্ধে মন্তব্য করলেন, তাতেই স্পষ্ট হচ্ছে যে, পার্থ ভৌমিকের এইভাবে ছড়ি ঘোরানো তিনি মোটেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই বক্তব্য রাখতে গিয়ে মমতাবালা ঠাকুর এমন কথা বলে দিলেন, যাতে তিনি আভাস দেওয়ার চেষ্টা করলেন যে, সাংসদ হিসেবে তার যতটুকু কাজ, তিনি এখন সেটাই করবেন। কিন্তু অন্য কেউ এসে ছড়ি ঘোরাবে, এটা তিনি মেনে নিতে পারবেন না। এর ফলে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যেমন মাথাচাড়া দিলো, যা আগামী বিধানসভা নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে, ঠিক তেমনই একুশে জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভার আগে তৃণমূল সংঘবদ্ধ হতে গিয়ে আরও‌ বেশি করে তাদের ফাটল সামনে নিয়ে চলে এলো। পাশাপাশি আর একটা প্রশ্ন উসকে উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহলে, যা জল্পনার পরিবেশ তৈরি করছে, সেটা হলো যে, পার্থ ভৌমিক যদি এই ভাবেই গুরুত্ব পেতে শুরু করে দলের কাছে এবং তাতে যদি তার গুরুত্ব কমে, তাহলে কি শেষ পর্যন্ত দলত্যাগের মতো রাস্তা বেছে নেবেন মমতা বালা ঠাকুর? কারণ এদিন যেভাবে তিনি প্রকাশ্যেই দলের আরেক সাংসদকে আক্রমণ করেছেন, তাতে বোঝাই যাচ্ছে যে, তিনি কতটা ক্ষিপ্ত। ফলে এটা তৃণমূলের কাছে যথেষ্ট চিন্তার কারণ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।