এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > চাইল্ড কেয়ার লিভ নেওয়ায় শিক্ষিকার এক মাসের বেতন আটকে, হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনা কর্তৃপক্ষকে

চাইল্ড কেয়ার লিভ নেওয়ায় শিক্ষিকার এক মাসের বেতন আটকে, হাইকোর্টের তীব্র ভর্ৎসনা কর্তৃপক্ষকে

স্বাধীনতার পর ৭১ বছর পেরিয়ে গেলেও পুরুষতান্ত্রিকতা থেকে সমাজ আজও মুক্তি পায়নি। সংবিধান লিঙ্গসাম্যের কথা বললেও সমাজ আজও মহিলাদের দ্বিতীয় শ্রেণী নাগরিক হিসাবেই ভাবছে। সন্তানের জন্যে ছুটি বা সিসিএল (চাইল্ড কেয়ার লিভ) নেওয়ার ব্যবস্থার মধ্যে সমাজের প্রতিটি কোনে সেকেলে পুরুষতান্ত্রিক ধারণা আজও স্বমহিমায় বর্তমান।

সন্তানের প্রয়োজনে ছুটি নেওয়ার কারণে এক শিক্ষিকার এক মাসের বেতন কেটে নেওয়ার জন্যে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তীব্র ভর্ৎসনা করতে গিয়ে উক্ত কথাগুলোই বললেন কোলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি প্রতীকপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত খারিজ করে শিক্ষিকার আবেদনটি পুর্নবিবেচনা করার আদেশ দিলেন তিনি।

আদালত সূত্রের খবর, শিক্ষিকা শিখা সরকারের ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের পুরো বেতনটাই কেটে নিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইল্ড কেয়ার লিভ নেওয়ার জেরে। এরপর এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শিখা দেবী আদালতে মামলা রজু করলে সাফাইতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়,শিখা দেবী ১৪ ফেব্রুয়ারী ছুটির জন্যো আবেদন করলেও তা অনুমোদন করার আগেই তিনি ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪২ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। এর পরও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে তাকে সেরকম শাস্তি দেওয়া হয়নি।

এরপর আদালত শিক্ষিকার আবেদনটি পুর্নবিবেচনা করতে বলেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এরপর বিদ্যালয় জানায়,এই ধরনের ‘লিভ’ নেওয়া আইন স্বীকৃত নয়। সেইমতো বিদ্যালয়ের প্রশাসককে সিদ্ধান্ত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপরও সমস্যা মেটেনি বলে শিক্ষিকা ফের আদালতে অবমাননার মামলা করে। এই দ্বীতিয় মামলার সূত্রেই বিচারপতি বলেন,ভারতীয় সংবিধান লিঙ্গসাম্যের কথা বললেও পরিবারের যাবতীয় দায়িত্ব সামলানোর দায় আজও মহিলাদেরই। এই ধারনাকে ‘সেকেলে’ বলে ব্যাখ্যাও করলেন তিনি।

যে কোনো পরিস্থিতিতে সন্তানের ভালো-মন্দ দেখার দায় আজও মহিলাদের,পেশাগত ক্ষতি হলেও কেবল মহিলাদের উপরই এই দায়ভার চাপানো হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি মহিলাদের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করছে। সমাজকে বুঝতে হবে,পুরুষ মহিলা সমান সমান। আজ মহিলাদের কোনোদিক থেকেই পুরুষদের থেকে পিছিয়ে নেই।

তাই এবার খাতায় কলমে নয়,বাস্তবেও এই লিঙ্গসাম্যের বহিঃপ্রকাশ দরকার। প্রাচীন গোষ্ঠীপতি শাসিত সমাজের বিপ্রতীপেই রয়েছে গণতন্ত্র। আর গণতন্ত্র লিঙ্গবৈষম্য স্বীকারই করে না। ঐতিহ্যগত,শারীরিক,মানসিক বিভেদ থাকলেও তা দূর করার নিয়ম সংবিধানে রয়েছে। তবে প্রচীন পন্থা আদতে গনতন্ত্র রক্ষার পক্ষে ক্ষতিকারক। রায়ে এমনটাও অভিমত দিল আদালত।

আদালত এই মামলা প্রসঙ্গে এমনটাও বলেছে,সন্তান হঠাৎ করে দুর্ঘটনার মুখে পড়লো তখনও কি কর্তৃপক্ষের ছুটি দেওয়ার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে? ছুটি মঞ্জুর করার নীতি একরকম থাকাই বাঞ্ছনীয়, কিন্তু এই মামলায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেটা করেনি,এমনটাই মনে করছে আদালত। তাই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ‘একপেশে,যান্ত্রিক এবং ভ্রান্ত’ বলেই ব্যাখ্যা করে ওই শিক্ষিকাকে সামান্য কারণে আদালতে টেনে আনার জন্যে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ভর্ৎসনা করল হাইকোর্ট। এবং সমাজের উপর দায়িত্ব দিলেন পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা আমাদের সমাজে কী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে তা খতিয়ে দেখার।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!