এখন পড়ছেন
হোম > বিশেষ খবর > কি হতে চলেছে ২০২১ এর হিসেব? কোন অঙ্কে কে দখল করতে পারে বাংলার মসনদ?

কি হতে চলেছে ২০২১ এর হিসেব? কোন অঙ্কে কে দখল করতে পারে বাংলার মসনদ?


২০২১ এর প্রশ্নে এখনই জল মাপতে শুরু করেছে সমস্ত রাজনৈতিক দল । এগ্রিকালচারাল বিশেষণে যদি বর্তমান পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে বলেন, বলতে পারি রাজনৈতিক উর্ব্বর জমির যত্ন নিচ্ছে তৃণমূল, ছড়াচ্ছে কীট নাশক, বাঁজা জমিকে চাষযোগ্য বানানোর চেষ্টা চালাচ্ছে বাম, চাষের জমি খুঁজছে বিজেপি এবং নিজের জমিতে উচ্ছে বসিয়ে বামের বাঁজা জমি লিজ নিয়ে ধান চাষের ছক কষছে কংগ্রেস !

এদের মধ্যে নতুন খিলাড়ি বিজেপি; ২০২১ এ যারা বাংলার ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছেন । কিন্তু সমস্যা প্রচুর ! এগুলিকে ওভারকাম করার মত স্ট্র্যাটেজী বিজেপির আছে কি ?

বিজেপির একটি প্রধান সমস্যা হল বাংলাকে রিড করতে না পারার ক্ষমতা । শুধুমাত্র সাংবাদিক সম্মেলন ও সোস্যাল মিডিয়াতে টাকা ঢেলে যে রাজ্য জয় সম্ভব না, তা বিজেপি নেতারাও আড়ালে স্বীকার করেন । দু একটি জায়গায় ঘটে যাওয়া দাঙ্গাকে ভর করে যদি বিজেপি ভাবে রাজ্যকে মেরুকৃত করে ফেলা সম্ভব, তবে এরূপ ভাবনাকে মূর্খের স্বর্গে বাস করা ছাড়া আর কারুর সাথেই তুলনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় । বাংলার রাজনীতিতে অল্টারনেটিভ ডেভলপমেন্ট মডেল মানুষের সামনে তুলে ধরতে না পারলে জমি দখল সম্ভব নয় । ২০১১ সালে সমগ্র পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি পেশ করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করেছিলেন । আবার ২০১৬ তে বাম কংগ্রেস জোট নারদা, সারদা, উড়ালপুল ইত্যাদিকে নেগেটিভ হাতিয়ার করলেও, ক্ষমতায় এলে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের থেকে কি আলাদা করতে পারে তার কোনো নিদর্শন উল্লেখ করা হয়নি জোটের তরফে । ফলাফল আমরা দেখেছি; তৃণমূল ২১১ । ঠিক তেমনই বিজেপিকেও অল্টারনেটিভ মডেল পেশ করতে হবে ।

কিন্তু কিভাবে ? চরম সফল প্রকল্প কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, খাদ্যসাথির বিরোধিতা কি কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষেই করা সম্ভব ? এতে হিতে বিপরীত হতে পারে । আবার বিজেপিরই কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের ভূয়সী প্রশংসা, কেন্দ্রীয় বানিজ্য বন্ধু তালিকায় বাংলার প্রথম হাওয়া সহ ডিজিটাইজেসনে সেরা স্থান দখল করার মত বহু কড়া সত্যও কিন্তু বিজেপির বাংলা দখলের পক্ষে বড়ো অন্তরায় ! এরূপ শাখের করাত পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়ে বিজেপির পথ কিন্তু খুব একটা সুগম হাওয়ার ইঙ্গিত দেয় না । তার উপর যদি সংগঠনের করুন দশা, বুদ্ধিজীবির স্পর্শ না পাওয়া সহ কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যবিত্ত বিরোধী কিছু পদক্ষেপকে যোগ করি, খালি চোখেই দেখা সম্ভব বিজেপির বঙ্গ তরী কতটা প্রতিকূল স্রোতে যাত্রা করছে ।

এবার অঙ্কের হিসেবটা একটু দেখে নেওয়া যাক ;

তৃণমূলের ভোট কিন্তু ১% ও কমেনি ২০১১ থেকে । বরং ১ বছর আগের এ যাবৎ কালের সব চাইতে ফ্রি ভোটে নারদ, সারদ, উড়াল্পুল, জোট ইত্যাদির পরেও ৬% বেড়েছে । বাই ইলেকশন গুলোতে আরো বাড়ছে । গতদিনের উপনির্বাচনে উলুবেড়িয়ার ৪০ নম্বর বুথে শুধু মাত্র ছাপ্পার অভিযোগ তুলেছে বিরোধিরা । বাকিটা কিন্তু শান্তিপূর্ণই ছিল ।

বাস্তব সত্য যদি ধরেন, বিজেপির কোনো এক্সট্রা হাওয়া বাংলায় নেই । একই মমতা বিরোধিরা রং বদলে ওদিকে গিয়ে ভিড়ছে মাত্র । মমতা বিরোধী হিন্দু বাম ভোট বিজেপিতে শিফ্ট করলেও, মমতা বিরোধী মুসলিম, যেটা বামের ভোট ব্যাংক, সেটা কিন্তু বাম ছেড়ে যাবে না কোনো ভাবেই । ভুলবেন না, রাজ্যের চারটি মুসলিম প্রধান জেলা মুর্শিদাবাদ, উ ও দ দিনাজপুর, মালদায় রাজ্যের টোটাল ২৮% মুসলিমের ১৫% ই থাকে । এই এলাকায় কিন্তু আজও তৃণমূল তৃতীয় শক্তি । ৪% এর বেশি মুসলিম ভোট তৃণমূল পায় না এখন থেকে । বাকি ১১% এর ৬% কংগ্রেস ও ৫% বাম পায় । ওই চার জেলা ব্যতিরেকে বাংলায় বাকি থাকে (২৮–১৫)= ১৩% মুসলিম ভোট । তার ম্যাক্সিমাম ৮% তৃণমূল পায় । বাকি ৪% বাম, ১% কংগ্রেস । অর্থাৎ মোট মুসলিম ভোটের ৮+৪= ১২% এর বেশি তৃণমূলের পাওয়া ইমপসিবল । ১৬ সালের তৃণমূলের ৪৫% থেকে এই ১২% বাদ দিলেও ৩৩% হিন্দু ভোট কিন্তু তৃণমূল আজও পায় ।

মমতা বিরোধী বাম হিন্দু ভোট বিজেপিতে যাচ্ছে । বাম মুসলিম ভোট পায় ওই মুসলিম প্রধান চার জেলার ৫% + বাকি বাংলার ৪% অর্থাৎ = ৯% । আরো মিনিমাম ৭% হিন্দু ওদের কমিটেড ভোটার । অর্থাৎ ৯+৭= এই ১৬% ভোট বামের থেকে মমতারও নেওয়া মুশকিল, বিজেপি তো কোন ছাড় । অর্থাৎ বামের ২৯% ভোটের ১৬% বাদ দিলে যে ১৩% বাকি থাকে, সেই ১৩% বাম হিন্দু ভোট পুরোপুরি বিজেপিতে গেলেও বিজেপি নিজের ১০ এর সাথে +১৩= অর্থাৎ ২৩, এখন আরও ২% যদি এক্সট্রাও দিই, ২৫% এর বেশি কিন্তু বিজেপি কোনো মতে পৌঁছবে না ।

অর্থাৎ মমতা ৪৫% (২০১৬ র ধরে, কিন্তু এই ভোট বাড়ছে আজও), বিজেপি ২৫%, বাম ১৬% । এই রেশিও ম্যাক্স টু ম্যাক্স হতে পারে । সেক্ষেত্রে মমতা আর বিজেপির মিনিমাম গ্যাপ থাকছে ২০% এর ! যেটা ভীষণ রকম বিরাট ! ২০২১ এ মমতাকে ২৯৪ এর মধ্যে ২৬৫ টা আসনও জিতিয়ে দিতে পারে প্রথম ও দ্বিতীয়র এই বিশাল শতাংশের গ্যাপ । এর পরেও যদি অসম্ভবটাকে ধরে নিই, যে মমতার আরও ৫% ভোট বিজেপি নিজেদের দিকে নিতে সক্ষম হল (যেটা হাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই । বিজেপির সাথে সাথে তৃণমূলও বাড়ছে ভীষণ ভাবে । তৃণমূলের ভোট ক্ষয়ের ইঙ্গিত নেই), তাও মমতা থাকছেন ৪৫–৫= ৪০% এ, বিজেপি ২৫+৫ = ৩০% এ । এই অসম্ভবটি ঘটলেও তাদের মাঝের গ্যাপ থাকছে ১০% এর !

এবার এই সমস্ত অড গুলিকে গোছাতে বিজেপির মিনিমাম আরও ৬–৭ বছর লাগবে । কিন্তু ভুললে চলবে না, মোদী হাওয়ায় ভর করেই কিন্তু বিজেপি বাংলায় জমি বৃদ্ধি করেছে এবং একথা সবাই জানেন, ২০২৪ এর পরে কেন্দ্রে বিজেপি সরকার থাকা অসম্ভব । ইন্ডিয়া টুডে বা এবিপি–সিএসডিএস এর সমীক্ষা গুলিকে যদি ধরেন, মোদীর জনপ্রিয়তা কিন্তু নিম্নমুখী । যদি ধরেও নি কোনো মতে ২০১৯ ও বিজেপি সার্ভাইভ করবে, তাও স্পষ্ট সেটা কিন্তু নিম্নমুখী জনপ্রিয়তায় ভর করেই । অর্থাৎ ২০২০ থেকে মোদী হাওয়া পুরোপুরি মুছে যেতে পারে । এখন এই পরিস্থিতিতেও যদি বিজেপি বাংলার ২০২১ মিস করে (যেটি হতে চলেছে) তবে বিজেপির বাংলা জয় অপূরণীয় স্বপ্নই থেকে যাবে । মমতা বিরোধী ভোটাররা আবার বামে ফিরবেন । তখন, মমতা গড় ভাঙা বিজেপির পক্ষে রূপকথা ছাড়া কিচ্ছু হবে না । রাজ্য বিজেপি, কেন্দ্র বিজেপি, বিশ্ব বিজেপি, মঙ্গল বিজেপি, নেপচুন বিজেপি সবাই নিজের ১০০% দিলেও স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

তাই আজকের পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে যদি দেবাংশু ভট্টাচার্যকে ভবিষ্যদ্বাণী করতে বলেন, নিঃসন্দেহে বলতে পারি, বিরোধী দলের তকমা নিয়ে জোর টক্কর চলতে পারে বাম, বিজেপি ও কংগ্রেসের । ২০২১ এ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত অপ্রতিরোধ্য । বরং অবাক হবো না যদি আসন সংখ্যা অদ্ভুত রকমের বাড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেস স্বাধীনত্তর রেকর্ড ব্রেক করে ।

 
দেবাংশু ভট্টাচার্য্য,
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক
** এই প্রবন্ধে লেখা মতামত প্রিয়বন্ধু বাংলার নিজস্ব নয়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক দেবাংশু ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষন তুলে ধরা হল শুধু।
আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!