আবারও একবার বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদ শিরোণামে তৃণমূল নেতা বর্ধমান রাজ্য March 8, 2020 তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডল ওরফে কেষ্টা বরাবরই বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য বিখ্যাত রাজনৈতিক মহলে। এবার আরও একবার বিতর্কিত মন্তব্য করলেন অনুব্রত মণ্ডল। তবে এবার বিরোধীদের উদ্দেশ্যে নয়, বিরোধীদের আনা বহিরাগতদের উদ্দেশ্যে তাঁর মন্তব্য শোনা গেছে। অন্যদিকে, তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলের এই বক্তব্য সামনে আসার সাথে সাথেই তুমুল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। পুরসভা নির্বাচনের আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের প্রতিটি নেতাকে সতর্ক করেছেন জনগণের সামনে যথাযথ মন্তব্য রাখার জন্য। কিন্তু বারংবার এই নিয়ম লঙ্ঘন করেন অনুব্রত মন্ডল। এবারও তার নিজের গড়া নিয়মের কোন অন্যথা হলো না। সম্প্রতি বর্ধমানের কেতুগ্রামে বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মন্ডল সভা করতে গিয়ে সেখানে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন বলে জানা গেছে। বীরভূম তৃণমূল জেলা সভাপতি এদিন দলীয় কর্মীদের বিরোধী দল বিজেপি ও আরএসএস কর্মীদের থেকে সাবধান থাকার সতর্কবার্তা দেন। উল্লেখ্য, এদিন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের সভা থেকে অনুব্রত মণ্ডল সরাসরি দলীয় কর্মীদের জানিয়ে দেন, পুরসভা নির্বাচনের আগে আরএসএস ওড়িশা থেকে প্রায় কুড়ি হাজার লোক রাজ্যে ঢোকাতে চলেছে। যাদের মধ্যে প্রতি বিধানসভা পিছু 100 জন লোক আসতে চলেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন কাউকে সন্দেহ হলে সাথে সাথে পুলিশের হাতে তুলে দিতে। আর তারপরেই তিনি বিতর্কিত মন্তব্য করে বলেন,’বাচ্চা ছেলেরা যদি বহিরাগতদের পায়ে লাঠিপেটা করেন তাহলে আর দোষ কী।’ শুধু তাই নয়, এদিন তিনি কেন্দ্রীয় বিরোধী শিবিরকেও প্রবল পরাক্রমে আক্রমণ করেছেন কেতুগ্রামের সভা থেকে। সরাসরি তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ আনেন এদিন। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এমন একটি মন্তব্য করেছেন যা নিয়ে রীতিমতো হতবাক রাজনৈতিক মহল। এদিন কেতুগ্রামের সভা থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করার জন্য বলেন, যে সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে দিল্লিতে উপস্থিত হয়েছিলেন, সে সময় দিল্লির বস্তিগুলোকে ঢাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী রাতারাতি পাঁচিল তুলে দেন। অনুব্রত মণ্ডলের এই বক্তব্যকে ঘিরে রীতিমতো ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে। তবে অনুব্রত শুধুমাত্র এইটুকু অভিযোগ করেই থামেননি। তিনি এরপর বলেন, প্রধানমন্ত্রী এত আড়াল করলেও ট্রাম্পের কাছে আসল খবর পৌঁছে গেছে। সূত্রের খবর অনুব্রত মন্ডলের মন্তব্য ঘিরে রীতিমত অস্বস্তিতে শাসক মহল। অন্যদিকে, দলীয় কর্মীসভা থেকে অনুব্রত মণ্ডল সরাসরি আক্রমণ করেন আসাদুল্লাহ ওয়েইসির দল এআইএমআইএমকে। এদিন রাজ্যের মুসলিম ভোটারদের কাছে অনুব্রত মণ্ডল দাবি করেন, মিমের সাথে বিজেপির যোগাযোগ আছে। তাই এআইএমআইএমকে কোনমতেই যেন বিশ্বাস না করেন রাজ্যের মুসলিম ভাই বোনেরা। অন্যদিকে এদিন 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় প্রার্থী নির্দেশ করে দিলেন অনুব্রত মণ্ডল। কেতুগ্রামের সভা থেকেই অনুব্রত সেখানকার বিধায়ক শাহনওয়াজের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আগামীদিনের বিধানসভা নির্বাচনে শেখ শাহনাওয়াজই এলাকার প্রার্থী হবেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ এই মুহূর্তে পুরসভা নির্বাচনের বাইরে যেন কোন রকম কথা না বলা হয়। কিন্তু এই দিনের ঘটনায় প্রমাণ হল, অনুব্রত মণ্ডল মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর কথা অনুধাবন করতে পারেননি। সামনেই পুরসভার নির্বাচন এবং তার সাথেই ফের চাঙ্গা বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। মাঝে বেশ কয়েকদিন অসুস্থতার কারণে এবং স্ত্রী বিয়োগের কারণে তাঁকে দেখা যায়নি। কিন্তু পুরসভার নির্বাচনের আগে তিনি আবার রাজনৈতিক ময়দানে নেমে পড়েছেন দলকে চাঙ্গা করতে। এরই মধ্যে বিজেপি নিয়ে সাধারন মানুষ ও দলীয় কর্মীদের সতর্ক করতে তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে পড়েছে বিতর্কিত সব কথা। এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, ভোটের সময় গরমাগরম বক্তৃতা দিয়ে বিরোধীদের বাক্সবন্দি করে রাখতে অনুব্রত মণ্ডল এর জুড়ি মেলা ভার। সামনে রাজ্যের পুরনির্বাচন। তাই তার আগে সেই সুরই ধরেছেন অনুব্রত। তবে অনুব্রত মণ্ডলের বেলাগাম মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এই মুহূর্তে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করেন কিনা সেদিকে লক্ষ্য রাখবে ওয়াকিবহাল মহল। আপনার মতামত জানান -