বিরোধীরা একাধিকবার অভিযোগ করেছে, কেন্দ্রীয় সরকার বারবার কাশ্মীর সহ একাধিক স্পর্শকাতর’ বিষয়ের কথা বলে দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কোনোকালেই কেন্দ্রীয় সরকার বিরোধীদের উপস্থাপিত করা এই যুক্তি মানতে রাজি হননি।

কিন্তু সম্প্রতি দেশের আর্থিক দুরবস্থা যে কোন জায়গায় পৌঁছেছে, তার স্পষ্ট সাক্ষী দিচ্ছে কেন্দ্রীয় আধা সেনাবাহিনীর রেশন ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন দেশের অর্থনীতি স্বাবলীল অবস্থাতেই রয়েছে। কিন্তু সেনাবাহিনীর রেশন ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার মত সিদ্ধান্ত সীতারমনের সেই যুক্তিকে বুমেরাং বলে প্রমাণ করল বলে মত অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেন্ট্রাল প্যারা মিলিটারি ফৌজের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আধা সেনাবাহিনী রেশন ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত এই প্রথম কোনো কেন্দ্রীয় সরকার গ্রহণ করল। এই ভাত আজ আমাদের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। কারণ দেশের এমন অনেক জায়গায় আধা সেনাবাহিনীকে কাজ করতে হয়। যেখানকার প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য তাদেরকে বেশি মূল্যে রেশন, পানি কিনতে হয়।” আর সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় কেন্দ্রে বিজেপি সরকার গঠন হওয়ার পরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে ভারতের রক্ষার ক্ষেত্রে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মোদি সরকারের জয়যাত্রার অন্যতম স্তম্ভ দেশের রক্ষাবাহিনীর কর্মকাণ্ড। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও বহুবার ভারতের জওয়ানদের সুস্থ থাকার শুভকামনা জানিয়েছেন। কিন্তু এতকিছুর পরও অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় জর্জরিত সরকারের আধা সেনাবাহিনী রেশন ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার মত সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা জনক বিষয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় আধা সেনাবাহিনী তরফ থেকে কেন্দ্র সরকারের কাছে যত দ্রুত সম্ভব বকেয়া ভাতা মিটিয়ে দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিজেপির সভাপতি, সকলেই বহুবার ভারতীয় সেনার গৌরবগাথা জনগণের কাছে বর্ণিত করেছেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক থেকে বালাকোট, এয়ার স্ট্রাইক সেনাবাহিনীর সব ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের সময় অধীর আগ্রহে রাতের ঘুম উড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। রীতিমতো উৎকণ্ঠা জনিত পরিস্থিতিতে সময় কেটেছে তার। তারপরে সেনাবাহিনীর এনে দেওয়া সাফল্যকে গোটা দেশবাসীর কাছে হর্সের সহকারে, গর্বের সহকারে বর্ণনা করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

কিন্তু সেই আধা সামরিক বাহিনীর রেশন ভাতা বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত মোদীজির সেই সমস্ত কথাকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। যে সেনারা ভারতবাসী রক্ষার্থে আত্মীয়-পরিজনদেরকে ছেড়ে, পারিবারিক সুখ শান্তি বিসর্জন দিয়ে সীমান্ত এলাকায় অতন্দ্রপ্রহরীর মত কাজ করে নির্ভীকভাবে শত্রুর আক্রমনকে প্রতিহত করে, সেই সেনাদের ন্যূনতম রেশন, ভাতা যদি কেন্দ্রীয় সরকার না দিতে পারে, তাহলে আগামী দিনে সরকারের প্রতিষ্ঠা এবং প্রধানমন্ত্রীর সৈনিকপ্রেম যে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকবে, সেই বিষয়ে একমত প্রায় সকল বিশেষজ্ঞরাই।