এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > ভোট বড় বালাই, বিজেপির চাপে মুখোমুখি হয়ে হাত মেলালেন বিরোধী দুই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা?জল্পনা তুঙ্গে

ভোট বড় বালাই, বিজেপির চাপে মুখোমুখি হয়ে হাত মেলালেন বিরোধী দুই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা?জল্পনা তুঙ্গে

সকলেই অপেক্ষা করছিলেন কবে তারা মুখোমুখি হবেন! আর মুখোমুখি হলে তাদের দুজনের অভিব্যক্তি ঠিক কী হবে, তা নিয়ে কৌতুহল ছিল সকলের মধ্যে। কিন্তু এই দুই ব্যক্তির সামনাসামনি হওয়া যে কার্যত অসম্ভব ব্যাপার, তাও একপ্রকার নিশ্চিত হয়েছিল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আলোচনায়। তবে রাজনীতি বড়ই আশ্চর্য জিনিস।

সেখানে কোনো পর্যবেক্ষক বা কোনো মহলের আগাম গণনা খাটে না। আর তাই তো সকলের সমস্ত জল্পনা-কল্পনাকে দূরীভূত করে সামনাসামনি দেখা হওয়া মাত্রই কোলাকুলি করে দুজনের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করলেন দুই হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা। একজন কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের এবারের পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী পরেশ অধিকারী এবং অপরজন কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের ভূতপূর্ব সাংসদ তথা কোচবিহার জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়।

 

বস্তুত, এবারের লোকসভা নির্বাচনে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের তরফ থেকে পার্থপ্রতিম রায়ের বদলে টিকিট দেওয়া হয়েছিল সেই পার্থবাবুর অত্যন্ত বিরোধী বলে পরিচিত তৎকালীন কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীকে। যা নিয়ে জেলা তৃণমূলের অন্দরে তীব্র বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

তবে শেষ পর্যন্ত পরেশ অধিকারী জয়লাভ করতে পারেননি। আর নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরই পরেশবাবুর জয়ের মূল দায়িত্বে থাকা কোচবিহার জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে সরিয়ে বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে নতুন সভাপতি করে পার্থপ্রতিম রায়কে জেলার কার্যকরী সভাপতি করে দেয় তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব।

 

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

আশ্চর্যজনক ভাবে এরপর থেকে কোথায় যেন মিলিয়ে যান সেই পরেশ অধিকারী। সেইভাবে জেলার সাংগঠনিক কোনো কাজে আর দেখতে পাওয়া যায় না তাকে। তবে নতুন দায়িত্ব পেয়ে বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াতে শুরু করেন পার্থপ্রতিম রায়। কিন্তু পরেশ অধিকারী এবং পার্থপ্রতিম রায়ের সামনাসামনি দেখা হলে তারা কি একে অপরের সঙ্গে কথা বলবেন! নাকি সৌজন্য বিনিময় করবেন! তা নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চর্চা চলেছে।

অবশেষে সেই অসম্ভব ঘটনাটি ঘটে গেল। সূত্রের খবর, সোমবার বিকেলে কোচবিহার জেলা পুলিশের বিজয় সম্মিলনীর অনুষ্ঠানে প্রায় সকলেই উপস্থিত ছিলেন। যেখানে একমঞ্চে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, মিহির গোস্বামীকে যেমন দেখা গেল, ঠিক তেমনই সেই পার্থপ্রতিম রায় এবং পরেশ অধিকারীকেও দেখতে পাওয়া গেল।

আর আশ্চর্যজনক ভাবে তারা দুইজন দুইজনের মুখ দর্শন করবেন না বলে সমালোচক মহলের একাংশ দাবি করলেও এদিনের বিজয় সম্মিলনীর অনুষ্ঠান শেষে পরেশবাবু এবং পার্থবাবুকে একে অপরের সাথে কোলাকুলি করতে দেখা যায়। আর এই গোটা ঘটনায় এবার নানা গুঞ্জন ছড়াতে শুরু করেছে।

তৃণমূলের একাংশ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাম সরকারের মন্ত্রী থাকা পরেশ অধিকারীকে এবারে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করলে কিছুটা গোসা করেছিলেন কুচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক পার্থপ্রতিম রায়। পরোক্ষে এই ব্যাপারে ঘনিষ্ঠমহলে রবি ঘোষের বিরুদ্ধে এবং পরেশ অধিকারীর বিরুদ্ধে তাকে সরব হতেও দেখা গিয়েছিল বলে দাবি সমালোচক মহলের। পাশাপাশি একইভাবে পার্থবাবু সাংসদ হয়ে যত মার্জিনে জয়লাভ করেছিলেন, তার থেকে বেশি ভোটে পরেশবাবুকে তিনি জয়লাভ করাবেন বলে মনে মনে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ।

এমনকি সেইমতো রবিবাবুর সাথে সাথে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেছিলেন পরেশ অধিকারী। তবে তাও নিজের জয় নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি। এখানে জয়লাভ করেছেন তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা নিশীথ প্রামাণিক। বিজেপি টিকিটে এবারে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন আর নিশীথ প্রামানিক। আর নিশীথবাবু কোচবিহার লোকসভার সাংসদ হওয়ার পরই কোচবিহারে বিজেপির প্রবল বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেছে।

রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছেন, কোচবিহারে বিজেপির এই বাড়বাড়ন্তে এখন তৃণমূলের সব নেতাদের এক হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আর তাই একপ্রকার চাপে পড়েই অপ্রিয় হলেও পরেশ অধিকারী এবং পার্থপ্রতিম রায় দুজনে দুজনের সাথে কোলাকুলি এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিজেপিকে চাপে রাখতেই সৌজন্যের বার্তা দিলেন বলে মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।

তবে এই ব্যাপারে এদিন পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “পরেশবাবুর সঙ্গে আমার সম্পর্ক কখনই খারাপ ছিল না। সবাই মিলে চেষ্টা করার পরে তিনি কিছু ভোটে হেরে যান। তার সঙ্গে এদিন দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে।” অন্যদিকে এই প্রসঙ্গে পরেশ অধিকারী বলেন, “আমার কারো সঙ্গে কোনো বিরোধ নেই। সবাই মিলেই একসাথে লড়ছি।” তবে মুখে তারা এক বললেও মনে যে তারা কেউই এক নন, তা অতীতের একাধিক ঘটনাতেই প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।

তবে শেষ পর্যন্ত বিজেপির বাড়বাড়ন্ত রুখতে বিজয়া সম্মিলনীর মধ্যে দিয়ে তৃণমূলের অন্দরে একে অপরের প্রবল বিরোধী পার্থ-পরেশের এই কোলাকুলি এবং শুভেচ্ছা বিনিময় কোচবিহার জেলা রাজনীতিকে ঠিক কোন পথে এগিয়ে নিয়ে যায়! সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!