এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > “সারা দেশে জাতের নামে আগুন লাগানো হচ্ছে।”বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ তৃণমূল নেত্রীর

“সারা দেশে জাতের নামে আগুন লাগানো হচ্ছে।”বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ তৃণমূল নেত্রীর

আগামী দিনের পুরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে রাজ্যের শাসক দল বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। দলের কাজে এগিয়ে আসার জন্য এবার তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলকে রীতিমতো কর্পোরেট ধাঁচে তৈরি করতে চলেছেন বলে খবর। সেই সূত্রেই আজ সোমবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি সভা আয়োজিত হয়েছিল। অন্যদিকে, নাগরিকপঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ উত্তপ্ত। কিন্তু তারই মধ্যে পুরসভার নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রাজ্যের শাসকদলের বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা জানা গেল এই সভায়।

গতকাল অর্থাৎ রবিবার ধর্মতলা শহীদ মিনার চত্বরে হয়ে গেল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অমিত শাহের সভা। আর এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইণ্ডোরের দলীয় সভার শুরুতেই সরাসরি আক্রমণ করলেন কেন্দ্রীয় সরকারকে। এদিন দিল্লি হিংসার ঘটনাকে মুখ্যমন্ত্রী নাম দিলেন পরিকল্পিতভাবে গণহত্যা। এর সাথে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সরকারের আমলের ভালো কাজের খতিয়ান দিয়েছেন বেশ কিছু প্রকল্পের নাম উল্লেখ করে। তবে এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আফসোস করেন এই বলে রাজ্যজুড়ে তাঁর সরকারের প্রকল্পের সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। যার ফলে গত লোকসভা নির্বাচনে কাঙ্ক্ষিত ফল থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

এদিন নির্ধারিত সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বললেন তার এক নজরে দেখে নেওয়া যাক। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সভায় প্রথমেই দিল্লি সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারকে দায়ী করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কেন গণহত্যা বলছি? কারণ পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছে।  দেশের সম্মান তলিয়ে দিয়েছে এই সরকার। যাঁরা দিল্লির মতো একটা ছোট জায়গা সামলাতে পারে না, তাঁরা দেশ সামলাবে?” অন্যদিকে তিনি কংগ্রেসকেও কটাক্ষ করে এদিন বলেন, “কংগ্রেসের সারা দেশে সংগঠন রয়েছে। কেন প্রতিবাদ নেই সারা দেশে?” এদিন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় দেশীয় প্রতিষ্ঠানের নাম যখন-তখন বদল করে দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে দেশের ইতিহাসের বদল ঘটছে। এমনকি দেশকে অসম্মান জানানোর কথাও বলেন তিনি।

এদিন সরাসরি তিনি পুর নির্বাচনের আগে বিজেপিকে হুঁশিয়ার করে বলেন, “এ দেশ থেকে যত দিন বিজেপি না যাবে, তত দিন আন্দোলন চলবে। আজ সারা দেশে জাতের নামে আগুন লাগানো হচ্ছে।” অন্যদিকে দেশের অর্থনীতির বেহাল অবস্থা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, “আজ দেশের অর্থনীতি বেহাল। বেকার সংখ্যা কোথায় চলে গিয়েছে?” তবে মুখ্যমন্ত্রী এদিন শুধু কেন্দ্রীয় সরকার বা বিজেপি দলকে নয়, তিনি নিজের দলের গোষ্ঠীকোন্দল এর কথা মাথায় রেখেই দলকেও শাসন করেন এই বলে, “দল একটাই, জোড়াফুল। দলের থেকে নেতা বড় নয়। দল যা বলবে শুনতে হবে। কোনও কোনও জেলা নিজেদের ইচ্ছা মতো পার্টি করছেন, এটা হতে দেব না।” এদিন মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কোন লবি নেই। তাই লবি ধরে উত্থান হবেনা। এমনকি যাঁরা নিয়মবহির্ভূত কাজ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অন্যদিকে পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে তিনি তার দলের কাউন্সিলরদের বা পুরপ্রধানদের বরাবরই নির্দেশ দিয়েছেন জনগণের জন্য কাজ করলে ভোটে  টিকিট পাওয়া যাবে। এদিন সেই একই কথা তিনি রিপিট করলেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন কংগ্রেস এবং সিপিএমকে দায়ী করেছেন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির জেতার জন্য। এদিন মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, “বাম-কংগ্রেস ঘোলা জলে মাছ ধরছে। কেন ৯৪ আসন ছেড়ে রাখতে চায় বিজেপি?” অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর যেভাবে বিতর্কিত ও উস্কানিমূলক মন্তব্য করেছেন সে প্রসঙ্গকে আরেকবার উত্থাপন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি কেন্দ্রীয় বিজেপি শিবিরের কাছে প্রশ্ন রাখেন, “এতগুলো উস্কানিমূলক কথা বলার পর, বিজেপির সেই নেতা কেন গ্রেফতার হননি?” অন্যদিকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী দিল্লি সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বলেন, “দিল্লিতে সংসদে সাতটার মধ্যে সাতটা আসনই জিতেছে, কী উপহার দিয়েছে, দাঙ্গা। (দিল্লির ঘটনায়) ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা, এখানে এসে ক্ষমতা দখলের কথা বলছেন!”

তৃণমূল নেত্রী এদিন দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন বিজেপির প্ররোচনায় পা দিয়ে তারা যেন কোন রকম সংঘাতে না জড়ায়। দলীয় সভা থেকে  কর্মীদের কড়া নির্দেশ দেন। নেত্রী তৃণমূল কর্মীদের আরো নম্র এবং বিনয়ী হয়ে জনগণের জন্য কাজ করার কথা বলেন। কোনোভাবেই আইন যেন নিজেদের হাতে না তোলে কর্মীরা সেই বিষয়ে দলনেত্রী কড়া নির্দেশিকা জারি করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি দিল্লির বিজেপি সরকারের উদাহরণ টেনে এনে বলেছেন, “দিল্লির সরকারের ঔদ্ধত্য যেন না শিখি।” বরাবরের মতন কেন্দ্রীয় সরকারকে তিনি স্বৈরাচারী সরকার বলে এদিন মূল্যায়ন করেছেন। এবং তৃণমূল সরকারের আন্দোলন যে এই স্বৈরাচারী সরকারকে বিতাড়িত না করা অব্দি থামবে না তা স্পষ্ট জানিয়েছেন এদিন দলনেত্রী।

অন্যদিকে দিল্লি সংঘর্ষ নিয়ে অন্যান্য রাজনৈতিক নেতার মত এদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর মতামত প্রকাশ করেছেন। তিনি দাবি জানিয়েছেন গুজরাট দাঙ্গার মতোই দিল্লিতে ইচ্ছাকৃতভাবে দাঙ্গা লাগানো হয়েছে। দিল্লির সংঘর্ষকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বলে আখ্যা দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও দাবি করেছেন, দিল্লির হিংসাত্মক কাণ্ডকে পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরিণত করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবেই। তবে এদিন কেন্দ্রীয় সরকারের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “কারা গদ্দার, তা মানুষ ঠিক করে নেবে। আপনারা কে? যাঁরা ‘গোলি মারো’ বলছেন, তাঁরা অমানবিক। তাঁদের ভাষা দানবিক।”

পুরভোটের দামামা বেজে উঠতেই আগামী দিনের রাজনৈতিক লড়াইয়ে রূপরেখা সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিজেপি, তৃণমূল সহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি। লোকসভা ভোটের পর থেকে এ রাজ্যের মসনদ দখল করতে প্রস্তুত হচ্ছে প্রতিটি রাজনৈতিক দল। আর সেই সূত্রেই কখনো বিজেপির অমিত শাহ, আবার কখনো তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলকে চাঙ্গা করতে উঠে পড়ে লেগেছেন। এভাবেই রাজ্যে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে পুরনির্বাচনের। আর এই পুরনির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের প্রতিটি যুযুধান রাজনৈতিক শিবির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। আপাতত আগামী দিনের পুর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে লড়াই কিরকম জমে ওঠে, সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!