এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > সিএবি নিয়ে বাংলায় ঝড় তুলতে গত ১ মাস ধরে ঘুটি সাজাচ্ছিলো মিম? শুরু তীব্র জল্পনা

সিএবি নিয়ে বাংলায় ঝড় তুলতে গত ১ মাস ধরে ঘুটি সাজাচ্ছিলো মিম? শুরু তীব্র জল্পনা

 

সম্প্রতি নাগরিকত্ব আইন বিরোধী ইস্যুতে উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ হিংসা, উগ্রতা, পূর্ণ ভাঙচুর এবং বিশৃংখলার ছবি সামনে এসেছে। আর এসব কিছুর পিছনে হায়দ্রাবাদের মৌলবাদী ইসলামিক সংগঠন এআইএমআইএমের গোপন হাত দেখতে পাচ্ছে প্রশাসন।

শুধু তাই নয়, বিগত এক মাস ধরে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রীতিমত বিক্ষোভের জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল এআইএমআইএম বলে খবর প্রশাসন সূত্রে। বস্তুত, মুর্শিদাবাদ জেলায় আগে থেকেই যথেষ্ট সক্রিয়ভাবে সংগঠন সাজাতে দেখা গিয়েছিল এআইএমআইএমকে।

মৌলবাদী এই সংগঠনটি সামশেরগঞ্জ এলাকায় যথারীতি পার্টি অফিস খুলে বসেছিল। শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলা নয়, বীরভূম এবং মালদহের কালিয়াচক বৈষ্ণবনগরের মত এলাকাতেও তারা তাদের গোপন জাল বিস্তার করতে শুরু করেন‌। এই কর্মসূচি অনুযায়ী বিগত কুড়ি দিন আগে সামশেরগঞ্জ এলাকায় স্থানীয় একটি যুবকের উদ্যোগে এআইএমআইএমের পার্টি অফিস উদ্বোধন করা হয়।

স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, সুতি থেকে শুরু করে বেলডাঙ্গা, মুর্শিদাবাদ, রঘুনাথগঞ্জ, ধুলিয়ান, ইত্যাদি বিস্তীর্ণ এলাকায় অনেক যুবককে নিজেদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে উগ্র মৌলবাদী সংগঠন এআইএমআইএম। যারা ইতিমধ্যেই পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার এবং বিশেষত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিষয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি করাতে তৎপর হয়েছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বিগত দিনে গোটা রাজ্যবাসী লক্ষ করেছে অযোধ্যা ইস্যুতে এআইএমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েইসি নিজে মন্তব্য করেছিলেন, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরাসরি বলেছিলেন, “কোনো ধরনের সাম্প্রদায়িক শক্তির বাংলাতে কোনো জায়গা নেই।” পাল্টা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে দেখা যায় আসাদুদ্দিন ওয়েইসিকে। মুখ্যমন্ত্রীর নাম না করেই তিনি বলেন, “কোনো কোনো সংগঠন বিজেপির টাকায় বাংলায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা করছে।”

আর তখন থেকেই কার্যত রাজ্যে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে প্রায় প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দানে দেখা গিয়েছিল এআইএমআইএমকে। আগামী দিনে জানুয়ারি মাসে ব্রিগেডের সভা করার কথা বলেছিল এআইএমআইএম। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রীর বার্তাতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, রাজ্যে কোনোভাবেই এই ধরনের সংগঠনকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। তাই এবারে নাগরিকত্ব আইনকে ডাল করে নিজেদের সংগঠন গোছাতে মরিয়া এআইএমআইএম বলে খবর প্রশাসন সূত্রে।

সম্প্রতি রাজ্যজুড়ে যে ধরনের তাণ্ডব শুরু হয়েছে, রেল স্টেশনের বিক্ষোভ থেকে শুরু করে চলন্ত রেলকে টার্গেট করে ঢিল ছোড়া, বাসে আগুন দেওয়া, রেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। লালগোলায় দুইটি ট্রেন পুড়িয়ে দেওয়া, বিক্ষোভের নামে রীতিমত বিশৃঙ্খলা ছড়ানো, এর পিছনে নেপথ্যে থেকে এআইএমআইএম দীর্ঘদিন ধরেই তাদের ছক করছিল বলে রাজ্যের গোয়েন্দা সূত্রে জানা যাচ্ছে।

শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলাতেই নয়, বীরভূম জেলাতে রীতিমত সভা করার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলে চলে যায় এমআইএমআইএম। কিন্তু বীরভূমের মুরারই এলাকায় তাদের সেইসব আর পরিকল্পনা বিভিন্ন কারণবশত ভেস্তে গিয়েছিল। এআইএমআইএমের তরফ থেকে বেছে বেছে যুবক ছেলেদেরকে দলে ভিড়িয়ে শক্তি বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা ছিল বলে জানা যাচ্ছে। সেইমত তারা যে অনেকটাই সফল হয়েছে, তা প্রকাশ পাচ্ছে বিগত দিনের হিংসাত্মক গতিবিধি থেকে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে সামনে রেখে রীতিমতো মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের ভাবনাকে ছড়িয়ে নিজেদের সংগঠনের অভিষ্ঠ সিদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে এআইএমআইএম। তবে ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনরা শান্তি বজায় রাখতে আবেদন করেছেন। এই বিষয়ে মুর্শিদাবাদের জেলা ইমাম নিজামুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “যারা এসব করছে, তাদেরকে আমরা সমর্থন করি না। কিছু বিশৃংখল লোকজন ভাঙচুর এবং হামলা করছে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলন হোক। জেলায় 6200 টি মসজিদে আমরা শান্তি বজায় রাখার জন্য প্রচার করেছি। আশা করি, হিংসার পথ ছেড়ে সবাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামিল হবেন।”

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ভিন রাজ্য থেকে আসা কোনো একটি সংগঠন মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি মালদা এবং বীরভূমেও সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। সেই কারণেই তারা রীতিমতো গণতন্ত্রকে না মেনে বাসে অগ্নিসংযোগ, ট্রেনে অগ্নিসংযোগ যাত্রীদেরকে হয়রানি এবং ধর্মীয় বিভেদ ছড়ানোর মত কাজ করছেন। গোটা বিষয়ে তৃণমূল নেতা মইনুল হাসান বলেন, “শনিবার দুপুরে ইসলামপুরে আমাদের এক নেতার বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে সেখানে যাচ্ছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের আটকানো হয়েছিল। মাইকে যে সমস্ত কথা ভেসে আসছে, তার সব ঠিক নয়। মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে।”

অভিযোগ, বিশৃঙ্খলা ছড়ানোর জন্য এআইএমআইএম অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। নিজেদের পরিকল্পনা মোতাবেক বেলডাঙার স্টেশন রেললাইন উপড়ে ফেলারও সরঞ্জাম জোগাড় করা হয়েছিল তাদের পক্ষে। আর সেই কারণেই শাবল, কোদাল এবং আরও অনেক ভারি ভারি অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, রীতিমতো জঙ্গি কায়দায় প্রচুর পরিমাণে বোমাও মজুত করা হয়েছিল।

সম্প্রতি একটি ভিডিও ভাইরাল করা হয়েছে। যার মধ্যে বলা হয়েছে, “আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা। যাতে আমরা ভালোই সাড়া পাচ্ছি। বাংলায় দলের পক্ষে হাওয়া এসে গিয়েছে‌।” রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এআইএমআইএম নিজেদের সাংগঠনিক প্রভাবে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিশৃঙ্খলা ছড়ালেও, এতে কিন্তু আদতে ক্ষতি হচ্ছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

কারণ যে কোনো রকম বিশৃংখল পরিস্থিতির জন্য প্রথম আঙ্গুল কিন্তু রাজ্য প্রশাসনের উপরে উঠবে। আর তাতে ফায়দা তুলতে কোনোরকম দ্বিধাবোধ করবে না বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টি। এমত অবস্থায় এখন গোটা পরিস্থিতি সামাল দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য প্রশাসন কোন পথে হাঁটবে! সেদিকেই তাকিয়ে থাকবে ওয়াকিবহাল মহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!