এখন পড়ছেন
হোম > বিশেষ খবর > মমতাবালা ও মঞ্জুলকৃষ্ণের বিবাদে আবার কার্যত দুভাগ মতুয়া সমাজ

মমতাবালা ও মঞ্জুলকৃষ্ণের বিবাদে আবার কার্যত দুভাগ মতুয়া সমাজ


পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে সর্বদাই মতুয়া সংঘের ভোটব্যাঙ্ক এক বড়সড় ভূমিকা নিয়েছে এবং মতুয়া মহাসংঘের সর্বেসর্বা ‘বড়মা’ বীণাপাণিদেবীর আশীর্বাদ সর্বদাই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে থেকেছে। আর তাই ২০১১ সালের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীণাপাণিদেবীর ছোটছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরকে বিধানসভায় জিতিয়ে এনে মন্ত্রী করেন। আর তারপরে তিনি ২০১৪ এর লোকসভা নির্বাচনে বীণাপাণিদেবীর বড়ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরকে বনগাঁ লোকসভা থেকে জিতিয়ে দিল্লি পাঠান। কিন্তু এরপরেই আকস্মিক মৃত্যু হয় কপিলবাবুর আর তারপরেই বদলে যায় সামগ্রিক চিত্র। বনগাঁ লোকসভার শূন্য আসনে উপনির্বাচনে মঞ্জুলবাবু দাবী করেন তাঁর পুত্র সুব্রত ঠাকুরকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী করতে হবে। কিন্তু তৃণমূল নেত্রী প্রার্থী করেন প্রয়াত কপিলবাবুর স্ত্রী মমতা বলা ঠাকুরকে।

ফলে সপুত্র তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন মঞ্জুলবাবু। সেই সময় সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ করেন তিনি। বিজেপিও উপনির্বাচনে সুব্রত ঠাকুরকে প্রার্থী করে, কিন্তু মমতাদেবীর কাছে বিশাল ব্যবধানে হারেন তিনি। কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের মৃত্যুর পর যে মমতাদেবীকে মঞ্জুলবাবু একঘরে করতে চেয়েছিলেন, কার্যত তাঁর কাছেই কোনঠাসা হয়ে পড়েন। এমনকি ‘ভুল বুঝতে’ পেরে প্রকাশ্যে তৃণমূল নেত্রীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরতে চান, কিন্তু তৃণমূল নেত্রী ২০১৬ তে আর টিকিট দেন না মঞ্জুলবাবুকে। কিন্তু ঠাকুর পরিবারের এই পারিবারিক লড়াই ভালো চোখে নেন না মতুয়া ভক্তরা। কিন্তু লড়াই এখানেই থামে না। বনগাঁর প্রাক্তন সাংসদ প্রয়াত কপিলকৃষ্ণ ঠাকুরের জীবিতকালে একটিই সংগঠন ছিল ‘সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ’ নামে, তাঁর মৃত্যুর পরে ‘মহাসঙ্ঘাধিপতি’ সেই সংগঠনের দায়িত্ত্ব নেন বনগাঁর বর্তমান সাংসদ মমতা বালা ঠাকুর। কিন্তু কোনো মহিলা অতীতে এই সংগঠনের শীর্ষে বসেননি এই দাবিতে আরেকটি একই নামে সংগঠন খুলে তাঁর ‘মহাসঙ্ঘাধিপতি’ হিসাবে নিজেকে ঘোষণা করেন মঞ্জুলবাবু।

প্রতি বছরের মত এবারেও গাইঘাটার ঠাকুরনগরে মতুয়া ধর্ম মেলা শুরু হওয়ার কথা ১৩ মার্চ থেকে। ওই মেলার মূল আকর্ষণ ঠাকুরবাড়ির কামনা সাগরে ‘পুণ্যস্নান’, যার জন্য দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন এবং গোটা ঠাকুরনগর জুড়ে মেলা বসে যায়। সেই মেলার আয়োজন বর্তমানে ‘সরকারিভাবে’ মমতাদেবীর সংগঠনের হাতে। গত সপ্তাহে মেলা আয়োজনের জন্য তাঁর সংগঠনের প্রতিনিধিরা মেলায় দোকানপাট বসানোর জন্য দড়ি ফেলে মাপজোক শুরু করতেই মঞ্জুলবাবুর লোকজন গিয়ে বাধার সৃষ্টি করেন। সৃষ্টি হয় চূড়ান্ত উত্তেজনার, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের পাশাপাশি ছুটে আসতে হয় স্থানীয় বিডিওকেও। মঞ্জুলবাবুর গোষ্ঠীর অভিযোগ, মমতাদেবী নিজের ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে, প্রশাসন-পুলিশকে ব্যবহার করে তাঁদের সঙ্গে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই অন্যায় ভাবে মেলা আয়োজনের অনুমতি সংগ্রহ করেছেন। আর তা আটকাতে এবার আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন তাঁরা। অন্যদিকে মমতাদেবীর গোষ্ঠীর দাবী, মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে সরকারি নিয়ম মেনে নথিপত্র জমা দেওয়া হয়েছিল আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই অনুমতি পাওয়া গেছে। মঞ্জুলবাবুরা কোনও নথিপত্র জমা দিতে পারেননি, ফলে অনুমতি পাননি। কিন্তু মতুয়া সম্প্রদায়ের আবেগের সঙ্গে জড়িত এই মেলা নিয়ে এখন প্রশাসন-আদালত হওয়ায় একদিকে যেমন মেলার আয়োজনই বিষ বাঁও জলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে মতুয়া ভক্তরা অসম্ভব ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত এই পারিবারিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে, সবমিলিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের এই ভাবাবেগের অনুষ্ঠান নিয়ে শেষ পর্যন্ত কি হয় সেদিকেই তাকিয়ে সংশ্লিষ্ট মহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!