এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > গুরুদেব সহায় – ( লাভ স্টোরি ) – কলমে-অপরাজিতা – অন্তিম পর্ব

গুরুদেব সহায় – ( লাভ স্টোরি ) – কলমে-অপরাজিতা – অন্তিম পর্ব


এদিকে রবিবার আসন্ন। কি হলো কুষ্টি মিললো না কি মিললো না তা জানা দরকার। শ্রীপর্ণার বাবা মা শুক্রবার সকালে গুরুদেবের আশ্রমে গুরুদেবের সাথে দেখা করতে গেলেন। গুরুদেব জানালেন এখানে বিয়ে হলে খুব খারাপ হবে। কেননা শ্রীপর্ণার কুষ্টিতে অনেক দোষ এসে পড়েছে ,যে সে ছেলের সাথে বিয়ে দিলে হবে না অমন দোষ খন্ডাতে পারবে যে ছেলে তার সাথেই বিয়ে দিতে হবে। নাহলে শ্রীপর্ণার জীবনহানিও হতে পারে।শ্রীপর্ণার মা কান্নায় ভেঙে পড়লেন। গুরুদেবের পায়ে পরে বললেন এমন ছেলে কোথায় পাবেন তাঁরা ? কিছু একটা উপায় বের করুন গুরুদেব। গুরুদেব নাছোড়বান্দা তিনি বললেন কোনো যজ্ঞতে হবে না। কিছুক্ষন ভেবে গুরুদেব বললেন তিনি ছেলে দেখছেন শ্রীপর্ণার জন্য।তবে গুরুদেব বললেন তিনি ছেলে তো দেখবেন কিন্তু পছন্দ অপছন্দের তো ব্যাপার আছে। ভালো চাকরি, ভালো ঘর দেখেই ছেলে খুজবেন। কিন্তু তাদেরকে বলবেন শেষ প্রশান্তবাবুরা না বললে খারাপ দেখাবে তো ? আগে মেয়ের জীবন বাবা, আপনি থাকতে কোনো ক্ষতি হবে না – বললেন শ্রীপর্ণার মা। বাবাও তাতে সম্মতি জানিয়ে বললেন। ওই জনই তো আপনার কাছে আসা।

এদিকে রাজর্ষিকে নিয়েও চিন্তা বেড়েছে কমলবাবুর। তিনি অনিমাকে বললেন ছেলে ভালো নেই গুরুদেবের সাথে একবার দেখা করে কথা বলা দরকার। ছেলে অন্য জায়গায় বিয়ে করতেও রাজি হচ্ছে না, হুম গুরুদেবের সাথে কথা বলবে। বাধা কাটাতে যদি কিছু করেন তিনি। রাজর্ষির মাকে নিয়ে  কমলবাবু বিকালে হাজির হলেন গুরুদেবের আশ্রমে।ছেলে বিয়ে করতে চাইছে না। গুম হয়ে বসে আছে সেই সব বললো কেন এমন হলো তা বললেন না রাজর্ষির মা। কমলবাবু অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন তাঁর মনে হয়েছিল যদি গুরুদেবকে সব বলে অনিমা, যদি অনিমাকে গুরুদেব বোঝান আর যদি তাতে অনিমা রাজি হয় না হলো না। গুরুদেবরাজর্ষির জন্মসময় গুনে গেঁথে শ্রীপর্ণার বাবাকে যা বলেছেন তাই বললেন রাজর্ষির মাকে। বললেন ছেলের মৃত্যুযোগও রয়েছে। তাই যার তার সাথে বিয়ে দেওয়া যাবে না। এই দোষ যে খন্ডাতে পারবে তার সাথেই বিয়েটা দিতে হবে।রাজর্ষির মায়ের একই প্রশ্ন এমন মেয়ে কোথায় পাবেন। তিনি বললেন দেখছেন। তবে যদি মেয়ে তাদের পছন্দ না হয়।অনিমা কেঁদে বললেন – হবে আপনি যাকে বলবেন তার সাথে বিয়ে দেব। আপনি বললে মেয়ে না দেখেই বিয়ে দেব। আমার ছেলের জীবন আগে বাবা। দয়া করুন। বেশ – বলে সম্মতি জানিয়েছেন গুরুদেব।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

 

শ্রীপর্ণাকে গালাগালি, অভিশাপ দিতে দিতে বাড়ি ঢুকলেন অনিমা। তার সঙ্গে পরেই এমন হাল হইছে ছেলের। ওই মেয়ে বিষ মেয়ে। ওই মেয়ের সাথে বিয়েটা না কাটালে হয়তো এতদিনে রাজর্ষিকে মেরেই ফেলতো। ঠাকুরকে ডাকতে লাগলেন।

অনুপম বুঝিয়েছে – যে সে এই আশঙ্কায় করছে। শ্রীপর্ণাকে যেন মেনে নেয় অনিমা , না অনিমা ওই বিষ মেয়েকে মেনে নেবেনা। তার ধারণা ওই মেয়ের পাল্লায় পরেই এই সব দোষ এসে জড়ো হয়েছে রাজর্ষির ভাগ্যে। যদিও গুরুদেব যে সময়ের কথা বলেছে তখন পিকচারে কোথাও নেই শ্রীপর্ণার। শ্রীপর্ণাকে দেখতে যাবার আগে থেকেই রাজর্ষীর জীবনে ওই দোষ ফাঁড়া এসে জমা হয়েছে। তবু মা মানবে না। গুরুদেব যার সাথে বলবেন তার সাথেই বিয়ে দেবেন ছেলের। তবুও শ্রীপর্ণা না।

প্রিয়াঙ্কাও তাতে সঙ্গে দিয়েছে। অনুপম বাড়িতে এসে প্রিয়াঙ্কাকে বলেছে – রাজর্ষি বাঁচবে না। যদি বাঁচে ভাগ্যের ব্যাপার। আর তাছাড়া যে ভয়ে মামিমা শ্রীপর্ণাকে মেনে নিচ্ছে না আল্টিমেটলি সেটাই হবে। রাজর্ষি যদিও মায়ের কথা মতো অন্য কাউকে বিয়ে করে তার সাথে যন্ত্রের মতো সংসার করবে। আর তাকেই বেশি প্রাধান্য দেবে। মায়ের থেকে আস্তে আস্তে এতটা দূরত্ত্ব বাড়বে যে ধরা ছোয়ার বাইরে চলে যাবে। যদি শ্রীপর্ণাকে মেনে নিতো অনিমা তবে রাজর্ষির মনে মা আরো বেশি জায়গা করে নিতো। না প্রিয়াঙ্কা বা অনিমা কেউই বুঝবে না।

কয়েকদিন এই করে গেলো। গুরুদেব শ্রীপর্ণার জন্য ছেলে আর রাজর্ষির জন্য মেয়ে দেখেছেন। আশ্রমে দেখাশোনা হবে। শ্রীপর্ণা ওর বাবা, মা , বোন এসেছে আশ্রমে। যন্ত্রের মতো বসে আছে। দূরে দেখলো রাজর্ষি। অনেকদিন পর দেখলো রাজর্ষিকে ও। না রাজর্ষি দেখতে পায়নি। কেন এসেছে ও ?মাকে নিয়ে এসেছে।

মনে হলো – একদিন এখানেই প্রথম দেখে হয়েছিল রাজর্ষির সাথে শ্রীপর্ণার। আর আজ শেষ দেখা। কাকে গুরুদেব ঠিক করেছেন ,ভালো চাকরি করে, এক মাত্র ছেলে , সবচেয়ে বড় কথা শ্রীপর্ণার সব দোষ কাটাতে পারবে। পারবে রাজর্ষিকে ওর মন থেকে সরাতে ?

গুরুদেব ডাকছেন উঠে দাঁড়ালো রাজর্ষি। ওর মা, বাবা, অনুপম, প্রিয়াঙ্কাও এসেছে আজ। শ্রীপর্ণা এখানে এসেছে। বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাহলে তাই আশীর্বাদ নিতে এসেছে।ভালোই হলো শেষ দেখা একবার দেখলো।

গুরুদেব বসে আছেন আর তাঁর এক সেবক রয়েছেন। এসে বসলো শ্রীপর্ণারা, তারা প্রণাম করলো গুরুদেবকে। এবার ঘরে ঢুকলো রাজর্ষিরা। না, না রাজর্ষি দেখেছে কে বসে আছে , না শ্রীপর্ণার দেখার তাড়া আছে কে হতে চলেছে তার জীবনসঙ্গী।
প্রশান্তবাবু দেখলেন। অজানা আশঙ্কায় মাথা নিচু করে চুপ করে বসে রইলেন। মুখটা গম্ভীর এটা কি ছেলে ? এর সাথেই গুরুদেব? না সম্ভব নয়।

রাজর্ষিরা বসলো। রাজর্ষির মাও দেখলো শ্রীপর্ণাকে। ছবিটা দেখেছে অনেকবার। বৌ করার মতো কিছু লাগেনি। অজানা ভয় চেপে বসলো অনিমার মনেও। গুরুদেব এই মেয়েকে ? কি করে? এ যে অলুক্ষুনে ?

গুরুদেব পরিচয় করলো এবার শ্রীপর্ণার বাবার নাম শুনে শ্রীপর্ণার দিকে তাকালো রাজর্ষি। চমকে গেছে। গুরুদেব শ্রীপর্ণাকে ওর জন্য।
শ্রীপর্ণা তখনও দেখেনি রাজর্ষিকে। বোন এবার আস্তে আস্তে বললো দিদি দেখ কে তোর সামনে। আস্তে আস্তে চোখ তুললো শ্রীপর্ণা। রাজর্ষি। রাজর্সিকে বেছেছেন গুরুদেব? এবার গুরুদেব বললেন এই হলো ছেলে আর মেয়ে একেবারে রাজযোটক। এরা এক হলে যা দোষ আছে সব কেটে যাবে। আর যদি অন্যথা হয় আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমন সবার ভাগ্যে থাকে না যে তিনি ইচ্ছা করলেই আরো পাঁচটা ছেলে বা মেয়ে এনে হাজির করতে পারবেন। প্রশান্তবাবু আর কমলবাবুকে বললেন আপনারা কথা বলুন।

না আর কোনোভাবেই না করা যাবে না।মেয়েটা, ছেলেটা প্রাণে তো বেঁচে থাকুক। বিয়ে ঠিক হলো, অনিচ্ছা স্বত্তেও অনিমা বিয়ে দেবে , মেনে নিয়েছেন শ্রীপর্ণাকে। ওদিকে প্রশান্তবাবুও রাজর্ষিকে মেনে নিয়েছেন। যদিও প্রশান্তবাবু আর অনিমা কেউ কারুর সাথে কথা বলেননি। অনিমার মনে হয়েছে শ্রীপর্ণার জন্য রাজর্ষির সব ফাঁড়া কেটে যাবে যখন তখন আর আপত্তি করে কি হবে। বাপের বাড়ি বেশি যেতে দেবেন না শ্রীপর্ণাকে তাহলেই হবে।

বিয়ে হলো। গুরুদেব সহায় হয়েছেন বলেই বিয়ে হলো। এখন আর কোনো বিভেদ নেই। অনিমার বৌ খুব পছন্দ। না যা ভয় পেয়েছিলো তার একচুলও হয়নি। ছেলে মাননি করে খুব, বিয়াই বিয়ানও বেশ ভালোই। বৌ ও খুব সেবা করে যত্ন করে। ভাগ্গিশ গুরুদেব ছিল।

আর রাজর্ষি শ্রীপর্ণার গুরুদেবের উপর ভক্তি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেছে। কারণ তাঁরা সত্যিটা জানে। সত্যিটা জানতে গেলে – কদিন পিছিয়ে যেতে হবে। বুধবার সকাল –

 

শ্রীপর্ণার মাও খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন শ্রীপর্ণাকে নিয়ে। তাঁর নিজের মেয়ে না হলেও তাঁর কাছে নিজের মেয়ে অপর্ণার থেকেও বেশি আদরের। তিনিও ভেবেছেন যদি সম্ভব হয়। আর কিছু নয় মেয়ের এই অবস্থা তিনিও চোখে দেখতে পারছেন না।

ওদিকে রাজর্ষির বাবারও একই অবস্থা। ছেলেকে তিনিও বড্ডো ভালোবাসেন। তার এই কষ্টটা সহ্য হচ্ছে না। অনুপম ভয় পাচ্ছে রাজর্ষি যেন কিছু না করে বসে। রাজর্ষি কিছু করবে না , শ্রীপর্ণাও কিছু করবে না। ওরা দুজন দুজনকে প্রমিস করেছে। সে কথা অনুপমা জানে না। মা, প্রিয়াঙ্কা বাইরে গেছে কেনাকাটা করতে। অনুপমকে রাখি কাঁদতে কাঁদতে বললো সব, তার জন্যই এমন হয়েছে সেই বলে দিয়েছিলো সব কথা। সে চায় দাদা ওই মেয়েটাকেই বিয়ে করুক। আর কোনো কথা জেঠিমাকে বলবে না।

কিন্তু কি করে? অনুপম রাজর্ষির বাবাকে বোঝালো শ্রীপর্ণার বাবাকে যা খারাপ কথা বলার তা বলেছে রাজর্ষির মা ,তিনি তো কোনো কথা বলেননি তাই তিনি যদি একবার কথা বলেন শ্রীপর্ণার বাবার সঙ্গে যদি তিনি মানেন।তাহলে শ্রীপর্ণাকে বিয়ে করে না হয় রাজর্ষি আলাদা থাকবে। ছেলের কষ্ট দেখতে পারছেন না তিনি। রাজি হলেন ফোন করলেন। না মানলো না শ্রীপর্ণার বাবা।
কিছুক্ষণ পর একটা ফোন এলো রাজর্ষির বাবার ফোনে।

শ্রীপর্ণার মা ফোন করেছেন। তিনি বললেন তিনিও মেয়ের কষ্ট দেখতে পারছেন না। তাই একবার বাইরে কমলবাবুর সাথে দেখ করতে চান। ফোনে সব কথা বলা যাবে না। গুরুদেবের কাছে যাবেন বলে বাড়ি থেকে বের হবেন তারপর আশ্রমে দেখা করবেন। কথায় কথায় দুজনেই জন্য যে তাঁরা একই গুরুর ভক্ত। রাজি হলেন কমলবাবু। রাখি সব শুনেছে। সে জানালো সে কিছু বলবে না তার জেঠিমাকে।

দেখা হলো রাজর্ষির বাবার সাথে শ্রীপর্ণার মায়ের। অনুপমও গেছে। শ্রীপর্ণার মা কেঁদে বললো সব কথা। এমনকি তাঁর স্বামীও গুরুদেবকে মানেন কুষ্টি গুনতে দেওয়া হয়েছে সেটাও। গুরুদেব না মানলে বিয়ে হবে না।

ব্যাস অনুপম একটা আশা দেখতে পেলো। দুপুরে একটু ফাঁকা হতেই তারা গুরুদেবের সাথে দেখা করলেন গুরুদেব একাই ছিলেন। অনুপমার গিয়ে তাঁকে সব কথা বললেন। গুরুদেব সব শুনে জানালেন তিনি দেখছেন কি করা যায়।
আর তারপরেই এই সব প্ল্যান করে গুরুদেব সব ঠিক করেছেন।

 

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!