এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অপরাজিতা > হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে – (লাভ স্টোরি ) ছোট গল্প – কলমে – জয়তী

হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে – (লাভ স্টোরি ) ছোট গল্প – কলমে – জয়তী


আহা কতদিন পর বিয়েবাড়ি এটেন্ড করছে নীল। সেই ৩ বছর আগে জেঠুর ছেলের বিয়েতে এসেছিলো। বাড়ির বিয়ে বলেই আসতে পেরেছিলো। নাহলে ম্যানেজারগুলো ছুটি দেয় না, নাহলে টিকিটের প্রব্লেম, নাহলে কাজের প্রব্লেম। ব্যাঙ্গালোরে বসেই শুনতে হয় এই হচ্ছে সেই হচ্ছে আর হাত কামড়াতে হয় নীলকে। না এটা শুধুমাত্রই নীলের একার প্রব্লেম নয় এই প্রব্লেম তার মতো যারা ওখানে থাকে সেই সব বাঙালির।

নীলকে দেখতে ভালোর দিকেই বেশ লম্বা, ফর্সা তেমন নয়, ওই ফর্সার দিকেই কিন্তু ভীষণ স্মার্ট। মেয়েরা দেখলেই বেশ ওয়াও ওয়াও করে। বেশ ভালোই লাগে তবে মাঝে মাঝে একটু বিরক্তিকর লাগে বটে। যাই হোক, আগের দিন এসেছে। রাত্তিরটা ভালো কাটলেও একপ্রস্থ ঝামেলা হয়ে গেছে সকালে। না সে নিজে করেনি করেছে শুভদার দিদি স্বর্ণদি। কি ঝামেলা না সকালে তার বরকে যে চা দেওয়া হয়েছে সেটা নাকি আলাদা করে করে দেওয়া হয়নি। সবার যে চা হয়েছে সেই চা টাই দেওয়া হয়েছে। আর তাতেই তার বরের মান গেছে। সে যে এই বাড়ির জামাই সেই স্পেশাল ট্রিটমেন্ট তার সাথে করা হয়নি। বিয়ে বাড়ি সবাই চুপ করে শুনেছে উত্তর দিলে বিষয়টা আবার অনেক দূর যাবে। বিয়ের আনন্দটা মাটি হবে। শক্ত হাতে হাল ধরেছে নীল সে সোনাদির তালে তাল মিলিয়ে মামীমাকে বলেছে আর যেন এসব না হয়। মামিমাও মুখ গোমড়া করে ছেলের বিয়ের কাজে লেগেছেন। আবার শুভদাও তার মাকে মুখ নেড়েছে কেন মা মেয়েকে শাসন করে না যেখানেই যায় সেখানেই অশান্তি পাকায়। শেষমেশ মামিমা কাঁদতে বসেছে। সেদিকটায় সামলেছে নীল। কত কাজ করেছে পুরো হিরো হিরো লাগছে নিজেকে। সবাই মাকে বলছে – তোমার ছেলে কত বড় বোঝদার হয়ে গেছে গো ইন্দু। নীলের মা এই বাড়ির ছোট মেয়ে। মায়ের মুখটাও ছেলেকে নিয়ে গর্বে ভরে গেছে।

সকালের গায়েহলুদ পর্ব মিটেছে। এবার কনের বাড়ি গায়ে হলুদ নিয়ে যেতে হবে। কে কে যাবে সোনাদি যাবেই। সে যে বরের দিদি কত বড় সম্মানীয় ব্যাক্তি তাকে সেটা প্রমান করতে হবেই। সাথেই যাবে শুভদার মামার ছেলে অয়ন, কাকিমার বাবা আর শুভদার বড় মামা। শুভদা নীলকে বললো তাকেও যেতে হবে। কেননা দিদিকে সে ভালো করে চেনে গিয়ে ঝামেলা পাকাবেই। আগেও নাকি অনেক কিছু বলেছে যে নিয়ে বৌদির সাথে শুভদার একচোট ঝামেলা হয়ে গেছে। কি হয়েছে শোনা হয়নি। কিন্তু শুভদা যখন এত করে বলছে তখন যেতে হবেই। তাছাড়া সে অনেকদিন ধরেই সোনাদিকে চেনে। ভুল কিছু বলেনি শুভদা। অগ্যতা সেও রওনা দিলো।

একটা বিয়েবাড়িতে গাড়ি ঢুকলো। বাড়ির গেটটা খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। উপরে লেখা ” শুভদীপ- ওয়েডস-মন্দিরা “নতুন বিয়ে বাড়িটা।এখনো সাজানোর কাজ চলছে। খানিকটা বাংলো টাইপের খুব সুন্দর। গেটের সামনে অনেক বড় খোলামেলা জায়গা। গাড়ি ঢুকতেই আসুন আসুন করে কনের বাড়ির লোকজন এগিয়ে এলেন। সোনাদি হাতে কিছু নিলো না গম্ভীর মুখ করে যেমন ওই ভিভিআইপিরা দাঁড়ায় সেই স্টাইলে নেমে দাঁড়ালো। বাকিরা নামলো।
এক বয়স্ক ভদ্রলোক সোনাদিকে – আসুন, ভালো আছেন?

সোনাদি – হুম, প্রণাম সে সব তো অনেক দূর। একবার ও ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলো না আপনি কেমন আছেন? শুধু বললো – জিনিসগুলো বাড়িতে নিয়ে যাবার ব্যাবস্থা করুন।

ভদ্রলোক তাঁর সাথে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে দ্বায়িত্ব দিয়ে সোনাদি সাথেই বাকিদের দিকে তাকিয়ে অতন্ত্য ভদ্রতার সাথে বললেন আসুন,আসুন,ভেতরে আসুন।

ভেতরে একটা ঘরে বসার জায়গা হয়েছে।সবাই বসলো – জানা গেলো ভদ্রলোক মেয়ের বাবা। ছোট মামিমার বাবা র সাথে পরিচয় কটাতেই বৌদির বাবা প্রণাম করলেন , দাদু আপনি করে সম্মোধন করতেই তিনি বললেন – আমি আপনার ছেলের মতো আমাকে তুমি বলুন। অনেকে এসেছেন। বৌদির মামা, মেসোমশাই, পিসেমশাই। কথা হচ্ছে। আশ্চর্য এর পরেও না প্রণাম বা যখন বৌদির বাবা আপনি করে সোনাদির সাথে কথা বলছে কোনো বিকার নেই। একবার ও বলছে না যে তুমি করে বলুন সত্যি এবার লজ্জা লাগছে নীলের। অস্বস্তিতে আছে অয়ন-ও। নীল আর অয়নকে আপনি করেই কথা বলতে শুরু করেছিলেন বৌদির বাবা। কিন্তু নীল থামিয়ে বলেছে আমরা আপনার থেকে অনেকে ছোট ,তুমি করে বলুন বলে প্রণাম করেছে সবাইকে । বৌদিকে নিয়ে বৌদির মা এলেন। বৌদি সবাইকে প্রণাম করেছে সোনাদি ও পা বারিয়ে দিয়েছে। অসহ্য। তা দেখেও বৌদির মাকে প্রণাম করলো না। নীল, অয়ন প্রণাম করেছে। তিনিও দাদুকে প্রণাম করেছেন। ভদ্রতা যেমন হয় আরকি। বৌদির মা তুমি করেই বলছে সোনাদিকে। কিন্তু তাতে যে সে খুব একটা খুশি নয় আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছে। নীল লক্ষ্য করেছে বৌদিকে। সে যে সোনাদির কথায় উঠবে বসবে তেমন মেয়ে নয়, হবে ভাবে সেও সমানে টক্কর দিচ্ছে হবু ননদের সাথে। এই কারণেই বোধ হয় পছন্দ ছিল না সোনাদির মন্দিরা বৌদিকে। অনেক ব্যাগড়া দিয়েছিলো। কিন্তু শুভদা নাছোড়বান্দা ফলে এখানেই বিয়ে হচ্ছে। বিয়ের পরে বেশ মজা জমবে। বেচারা শুভদার জন্য কষ্ট হচ্ছে বিয়ের পর বৌ আর দিদির মাঝে ফাঁসবে। এই জন্যই নীল এখনো প্রেম বিয়ে এইসবে পা দেয়নি। তার দিদি আছে সে সোনাদির মতো না হলেও কাছাকাছি। আর মা তো আছেই।

 

দু জন এলেন একজন বৌদির জামাইবাবু সুদীপ্ত আর একজন বৌদির কোনো পিসির ছেলে পুলক। ওরা কিছু কথা বার্তা বলে নীল আর অয়নকে নিয়ে বাইরে গেলো। ওদের থেকেই জানা গেলো এটা বিয়েবাড়ি কাম লজ। এই নতুন হয়েছে যার কারণে এখনো অন্য কোনো অতিথি নেই বিয়ে বাড়ির লোকজন ছাড়া। খুব সুন্দর পাশে একটা সুইমিং পুল, খানিকটা পুকুরের মতন, চারপাশটা উঁচু,পুলের দিকে ঢালু।আর পুলে নামার সিঁড়িগুলোও খানিকটা পুকুরের মতো বাঁধানো সিঁড়ি। ওয়াও , ইশ এটা বাড়ি হলে নীল চান করতো। কেননা মিড্ ফেব চলছে তেমন ঠান্ডা নেই, গরম ও না। সুন্দর ওয়েদার। তার মধ্যে এই মিষ্টি একটা রোদের মধ্যে চান আহ। কিন্তু না হবে না। কি করে এখন বৌদিকে বলবে যে তোমাদের এই বিয়েবাড়িতে এখন চান করবে।

বৌদির জামাইবাবু সুদীপ্ত বেশ রসিক মানুষ। বেশ মজা করে সাথে পুলকও বেশ মিশুকে। নীল মিশুকে তবে একটু চুপচাপ এখানে অনেকের সাথে আলাপ হলো। কতকগুলো দেখতে ভালো মেয়ে তবে মুখে এত এত ময়দা মাখা, নীলকে দেখে হাই, হ্যালো,এই সব করছে। বেশ গল্প করছে। অয়ন একটু লাজুক সে পশে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সব মিলিয়ে খুব ভালো লাগছে নীলের – নিজেকে আজ একটু বেশিই হিরো মনে হচ্ছে।

কথা বেশ চলছে। একটা স্কুটি হর্ন দিতে দিতে ঢুকলো। এরপর প্রায় ওদের গাড়িটার গা খেঁসে বেরিয়ে গেলো, একটুর জন্য লাগলো না নাহলে নতুন স্কোরপিওটার গা আজ চটতো। স্কুটিটা প্রায় ওদের কাছে এসে সুদীপ্তদার পায়ের কাছে এসে থামলো। সুদীপ্ত – মেরে ফেলবো নাকিরে? আজ মনির বিয়ের দিনের আমার বৌকে বিধবা করবি?

স্কুটি যে চালাচ্ছে সে একটা হলুদ শাড়ী পরে আছে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না শুধু বড় বড় কাজল দেওয়া চোখ দুটো ছাড়া। ওড়না দিয়ে মুখটা ঢাকা। স্কুটিটা দাঁড় করিয়ে পুলককে বললো – গ্যারেজ করে দিয়ে এসো। পুলক বেরিয়ে গেলো স্কুটি নিয়ে।

যে নামলো এবার সে মুখ থেকে ওড়না খুললো। দেখতে অপরূপ সুন্দরী নয়। কিন্তু সুন্দরী চোখ টানছে। না মুখে ময়দা নেই বা থাকলেও হালকা বোঝা যাচ্ছে না। সুদীপ্ত – দেখে চালাতে হয়, এতোদিনেও স্কুটি চালাতে জানলি না।

আগন্তুক – ওটা অন্য গাড়ি বলে সাইড দিয়ে এলাম , দিদির গাড়ি হলে চষেই দিতাম।

নীল বুঝলো দিদি মানে সোনাদির কথা বলছে। তার মানে সোনাদি এখানেও ফেমাস।

সুদীপ্ত গলা ঝেড়ে তাড়াতড়ি – ও পরিচয় কর – এটা নীল, আমাদের হবু বরের মাসির ছেলে আর ও হলো ওলি কনের ছোট মামার মেয়ে।

নীল হাত বাড়িয়ে – হাই , শুভদার পিসির ছেলে। না যার দিকে হাত বাড়ালো তার কোনো হেলদোল দেখা গেলো না।

সুদীপ্ত – ও সরি। আমি ভেবেছিলাম মাসির ছেলে।

নীল – আরে ইটস ওকে।

ওলি – হাই বলে হালকা হেসে ঘুরে বাই বলে বিয়ে বাড়ির ভিতরে হাঁটা দিলো।

এই মেয়েটা একবারও ভালো করে দেখলো না ? অন্য মেয়েগুলো তো কেমন গায়ে পড়ছিলো। পরিচয় করার জন্য পাগল পাগল হয়েছিল , নীল বেশ বুঝতে পারছিলো। কি হলো হটাৎ? আর কি নীলকে ভালো লাগছে না দেখতে ? নিজেকে বেশ এতক্ষন বড় বড় হিরোদের সাথে কম্পেয়ার করছিলো নীল কিন্তু এক মুহূর্তেই ফুস করে দমে গেলো। নিজেকে বোঝালো হয়তো বয়ফ্রেইন্ড আছে। কিন্তু মাথায় যে ঘুরছে ঐভাবে তাকানোটা। নীলকে দেখছে না একটা গরু ছাগলকে দেখছে তফাৎ কিছু নেই। যাকগে মরুক গে , কতক্ষন আর এই তো বিয়ের কটা দিন।

আচ্ছা এবার ভেতরে যাওয়া যাক। বেরোতে হবে তো এবার – বললো নীল। না যাবার এত তাড়া নেই সে জানে গায়ে হলুদ না হলে বের হবে না তারা । কেননা মামিমা কি সব টাইম বলে দিয়েছে সেই টাইম ধরে গায়ে হলুদ শুরু হবে। সোনাদি দ্বায়িত্ব নিয়ে সে সব কাজ করছে।কিন্তু ভেতরে যাবার অন্য দরকার আছে। আর সেটা হলো ওই মেয়েটাকে আরো ভালো করে দেখার আর নিজেকে ঝালিয়ে নেবার। বাকি মেয়েরা কি বলছে ওকে দেখে।ভেতরে বাকিরা ফের আগে যেমন করছিলো তেমনি নিজেদের মধ্যে গা ঠেলাঠেলি করে ওকে নিয়ে কিছু বলছে আর চোখে দেখলো ও কিন্তু তাহলে ওলির কি হলো। কেন হেলাফেলা করে তাকালো। না বেশ খারাপ লাগছে।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

গায়ে হলুদ শুরু হলো – আচার অনুষ্ঠান শুরু হলো, নীল বেশ বুঝতে পারছে বাকি মেয়েগুলো নীলকে একটু ক্যামেরায় রেখেই সেলফি তুলছে, ঠিকই আছে কিন্তু ওলি না তার কোনো হেলদোল নেই। বৌদির খুব ক্লোজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বৌদির নানা কথা শুনছে, সেসব জোগাড় করে দিচ্ছে। এখানেও যথেষ্ট কাঁঠালি করছে সোনাদি। তাকে নিয়ে যে বিরক্ত বৌদি আর ওলি বুঝতে পারছে নীল। কিন্তু সে সব যাক, কেন ভাও দিচ্ছে না ওলি নীলকে।

সামনের দিকেই চেয়ারে বসে আছে সোনাদি আর ও বাড়ির লোকজন ,তারা দেখবে ঠিক থাকে সব হচ্ছে কিনা, । কিন্তু ওলি  গায়েব হঠাৎ করে গেলো কোথায়? বাইরে গেছে। ওলির দিকেই ঘুরে ফিরে চোখ যাচ্ছে নীলের। মেয়েটার খুব ঘ্যাম? না তা তো মনে হচ্ছে না , সবার সাথেই সুন্দর করে মিশছে। আচ্ছা সোনাদির কারণেই কি ইগনোর করলো নীলকে। যা বাবা ,নীল কি করলো যা করার তো সোনাদি করেছে বা করছে। নীল কি করবে।
নীল উঠে বাইরে গেলো। না ওখানেও নেই, সুইমিং পুলের ওখানে একটা হলুদ শাড়ী পরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে ওটা ? এগিয়ে গেলো খানিকটা না ওটা নয়। দূর, কাউকে জিজ্ঞাসা করাও যাবে না। কিন্তু গেলো কোথায়?

ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো, পকেটে ঢুকিয়ে রেখে ঘুরতেই দেখলো মহারানী ছুটছেন,পিছনে সুদীপ্তদা।বলছে

দাঁড়া আজ তোকে হলুদ মাখবো,কোথায় পালাচ্ছিস, এতকাল তুই মাখাচ্ছিলি, দাঁড়া, বেশ আমি ভালো ছেলের মতো ঘরে লুকিয়েছিলাম গিয়ে নাটক করে ঘর থেকে বের করে হলুদ মাখানো। ওলি ছুটছে পিছনদিকে তাকিয়েই, নীলের কাছাকাছি আসতেই হোঁচট খেলো, ঘুরে পড়লো নীলের গায়ে। নীল টাল সামলাতে পারেনি উল্টে পড়লো ওলিকে জড়িয়ে নিয়ে। যে জায়গায় পড়েছে সেটা ঢালু, দুজনে একসঙ্গে পাল্টি খেতে খেতে পড়লো সুইমিং পুলে। ইতিমধ্যেই ওলির হাতে হলুদ ছিল সেটা নীলের গালে লেগেছে ,নীলের গাল থেকে সেটা এর মধ্যে ওলির গালেও লেগেছে। কি করে জিজ্ঞাসা করবেন না, বয়েস হয়েছে বুঝে নিন।

যাই হোক ওলি সাঁতার জানে না, সে জলে হাবুডুবু খাচ্ছিলো নীল তার কোমর ধরে তুলে ধরলো। ওলি নীলকে প্রানপনে জড়িয়ে ধরলো। এখন আর জ্ঞান নেই কে ,কি ব্যাপার। আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে অলি নীলকে। নীল ওলিকে একহাতে জড়িয়ে ধরে অন্যহাতে সাঁতার দিয়ে পাড়ে ওঠে আসছে। পাড়ে হা করে দাঁড়িয়ে আছে সুদীপ্তদা। আর কয়েকজন। দুজনেই পুরো ভিজে গেছে। নীলের আজ আশার অতীত ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। সে শুধু একা একা চান করতে চেয়েছিলো যদিও এইভাবে নয়, কিন্তু সাথে ওলিও। পাড়ের কাছে আসার পর ওলিকে হাত ধরে টেনে নিলো সুদীপ্তদা। নীল ডেনিম,থেকে সাদা ফুল শার্ট পুরো ভিজে গেছে। আরো হান্ডু লাগছে নীলকে, আর ওলিকে না চোখ ফেরানো যাচ্ছে না। কিন্তু অসভ্যের মতো তাকিয়ে থাকাও যায় না। মুখটা নিচু করে নিলো নীল। ওলি মাথা নিচু করে চলে গেলো ভেতরে। নীলকে নিয়েও সুদীপ্তদা ভেতরে গেলো।

কয়েকজন দেখেছে। কেননা এখনো গায়ে হলুদের পালা চলছে ভেতরে বেশিরভাগ লোকই ব্যাস্ত। তবে যারা দেখেছে তারা এটা বেশি সময় নেবে না ছড়াতে। সুদীপ্ত তাড়াতাড়ি উপরে একটা ঘরে নিয়ে গেলো নীলকে। ভাই সরি আসলে আমি……………….

নীল – না না ঠিক আছে।

সুদীপ্ত দেখো আমার একটা শার্ট প্যান্ট প্যান্ট পড়ো। আমি এখুনি আসছি। একটা তোয়ালে জামা প্যান্ট বের করে নীলকে জিজ্ঞাসা করলো তোমার সাইজ কত। দাড়াও দেখি সায়নের সাইজও হবে।

নীল – আরে না না লাগবে না।

সুদীপ্ত – দাড়াও না। আসছি বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মাথা মুছতে মুখটা ওর এতক্ষন যা ঘটলো তাই মাথার মধ্যে ঘুরছে। কিছুক্ষন পর এলো একটা জিন্স প্যান্ট, টি শার্ট , নতুন স্যান্ডো আর শর্টসও আছে ভিজেছে তো সবই।নীল চেঞ্জ করলো।
বৌদির দিদি ইন্দিরা এলো কিছুক্ষন পর। সে আইরন নিয়ে এসেছে। সব কিছু আইরন করবে। বললো – সব দাও আমি আইরন করে শুকিয়ে দিচ্ছি। সুদীপ্তদা সামলালো – বললো তুমি প্যান্ট আর টি-শার্টটা করো তাহলেই হবে। বাকি আপাতত দরকার নেই প্যাকেটে ভরে নিলো স্যান্ডো আর শর্টস। জলে পরে ফোনটাও পুরো গেছে। তুলে ধরলেই জল পড়ছে। অন্য কারুর সাথে জলে পড়লে এতক্ষন মাথা খারাপ হয়ে যেত সাধের ফোন গেছে কিন্তু এখন কিছু মনে হচ্ছে না। সুদীপ্তদা বার বার সরি বলছে। মেয়ের বাড়িতে খবর ছড়িয়ে গেছে। সবাই ইতস্তত করছে। নীল – বলছে আরে ঠিক আছে।

 

সোনাদিও জেনে গেছে – নীল আসতেই বললো এত নাচানাচি করার কি ছিল ,ফোনটা গেলো তো।
নীল – ঠিক আছে গো।

সোনাদি লোককে শুনিয়েই – তোর তো আর কমদামি ফোন নয় যে একটা গেলো কিছু ব্যাপার নয় এত দামি ফোন। একটু দেখে শুনে নাচানাচি করবে তো।

হটাৎ নীলের সামনে এক ডিব্বা চাল এনে ধরলো। নীল চমকে তাকিয়ে দেখলো কটমট করে তাকিয়ে আছে ওলি। বললো – ফোনটা দিন।
নীল ফোনটা দিলো।
ওলি ফোনটা নিয়ে চালের ডিব্বায় ঢুকিয়ে দিয়ে বললো- কালকে ঠিক হয়ে যাবে। আমি দেখিনি, সরি পা মচকালো বলেই।

ওলির একেবারে পছন্দ নয় শুভদার বাড়ির লোকজনকে। দিদি জামাইবাবু এমন একটা ভাব করছে যেন একমাত্র তারাই মানুষ বাকি সবাই গরু ছাগল। ছেলের মা গত রাত্রে ফোন করে বলেছে – হাত বাধা যাবে না, বর ঠকানো যাবে না। হাজার ফিরিস্তি। যেন ওদের একার ছেলে আছে।

এই ছেলেটাকে দেখে প্রথমে ভালো লেগেছিলো কিন্তু যখন শুনেছে পিসির ছেলে তখনিই মনে হয়েছে ওই তো একই রক্ত , একই হবে ঘ্যাম কি সব।

নীল কিন্তু আর নিজের মধ্যে নেই। ওলি এখন নীলের মনের মধ্যে প্রেমের কলি হয়ে ফুটতে চাইছে। কিন্তু কাকে কি বলবে। যাকে বলতে চাইছে সেও তো ভাও দিচ্ছে না।

না অনেক দেরি হয়ে গেছে। এবার বের হতে হবে, আবার রাত্রে আসতে হবে। উপরে একবার সেই ঘরটায় গেলো নীল। জামা কাপড় ওখানেই ছেড়েছিলো।  ঘরে ওলি।

গলা ঝাড়লো নীল।

ওলি – শুনুন আমি ইচ্ছা করে কিছু করিনি। সরি পা মচকে গিয়েছিল বলেই,

নীল- আমি বুঝবো কি করে ? আর সরি বলে কি হবে ফোনটা তো গেলো। হ্যাঁ যদি ফোন নাম্বারটা পাই পরে ভেবে ফোন করে বলবো ক্ষমা করলাম কি করলাম না।

ওলি – কি? নিজেকে কি হিরো মনে হয়?  ফোন কালকে ঠিক হয়ে যাবে।

নীল- সবাই বলে আমাকে একটু হিরো হিরো দেখতে।

ওলি – বেশি স্মার্ট হবার চেষ্টা করবেন না বুঝলেন।

নীল – চেষ্টা করব কেন আমি অলরেডি স্মার্ট।

মুখটা বেঁকালো ওলি।

নীল – মুখ বেঁকালে কি হবে যেটা সত্যি সেটাই বললাম। যাই হোক  আমার কাছে আপনার একটা জিনিস আছে। ওই জলে পড়ার সময় আমার কাছে চলে এসেছে।

ওলি – কি ?

নীল- ফোন নাম্বারটা পেলে ফোনে বলতাম

ওলি – ফেরত টা কি ফোনেই দেবেন।

নীল – না বলতাম কি আছে। হাতে হাতেই দিতাম রাত্রে।

ওলি – দেব না ফোন নাম্বার।

নীল- ওকে আমিও জিনিসটা দেব না।

ওলি – আপনার কাছে কেন জিনিস নেই, নাটক করা কি রক্তে ? যেমন দিদি করছে।

নীল – হ্যাঁ, দাদু নাটক করতো, বাট আমি ওসব পছন্দ করি না। আর সোনা দি ঐরকম ওকে ইগনোর করাটাই বেটার। আচ্ছা এটা মনে হয় ……………….
বলে একটা কানের দুল পকেট থেকে বের করে ধরলো ওলির সামনে।

ওলি – ছোটোমাসির কানের ওটা। ও পড়েছিল কথা ছিল গায়ে হলুদ হয়ে গেলে ফেরত দেবে। এসবের মাঝে খেয়াল করেনি যে কানেরটা নেই। দেখুন ফেরত দিন। বলে নীলের হাতের দিকে হাতবাড়ালো।

নীল হাতটা তুলে ধরে বললো – ফোন নাম্বার? বাবা, কাকা, পিসি, মাসির নয়,তোমার।

ওলি – খুব সাহস বেড়ে গেছে না ? চুপচাপ ফেরত দিন।

নীল – আমি তুমি বলছি আর তুমি আপনি ? তুমি বলো আর ফোন নাম্বার দাও।
আর সাহস আমার একটু বেশিই বলে ওলির কোমরটা জড়িয়ে ধরে ওলিকে কাছে টেনে নিলো। এটার জন্য প্রস্তুত ছিল না ওলি।নীল বললো নাহলে এইভাবে জলের মধ্যে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরতে পারি।

ওলি ঠেলে সরিয়ে দিলো নীলকে। ভালো ওরও লেগেছে নীলকে। বার বার শুভদার দিদিকে থামানোর চেষ্টা করছে, আরে ঠিক আছে হয় এইসব , কি হবে তাতে। এইসব বলে ম্যানেজ করার চেষ্টা করছে। তাছাড়া সুদীপ্তদাও বলেছে খুব ভালো ছেলেটা। কিন্তু কেন ওলি বুঝতে দেবে। বললো – দেখুন এটা আমার নয়, ছোট মাসির জিনিস আমি একদিন পড়তে নিয়েছি। ফেরত দিন।

নীল – আবার আপনি ?

ওলি – লোকজন চলে আসবে এটা বিয়েবাড়ি প্লিজ।

নীল – তুমি বলো আর ফোন নাম্বার

ওলি – ওকে আমার জিনিস ফেরত দাও। ফোন নাম্বার বললো।

নীল দুবার মুখস্ত করে নিয়ে জামার প্যাকেটটা নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো

ওলি – আরে আমার কানের ,

নীল – রাত্রে।আগে দেখি নাম্বারটা আসল কিনা।

ওলি -মাঝে ৮ টা ৪ হবে।

নীল – জানতাম , জানতাম ভুল নাম্বার দিয়েছো। তবুও রাত্রেই ফেরত দেব ততক্ষন ম্যানেজ করো

বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

চলে গেছে ওরা। কিন্তু ওলির মানে নীল আর নীলের মনে ওলি রয়ে গেছে।১ ঘন্টা বাদে ফোন এলো অচেনা নাম্বার।
মনটা নেচে উঠলো ওলির। নীল নয়তো। গায়ে পড়া ছেলে একটা। দেখতে একটু হান্ডু, তাতে কি ? অমন করে কোমর ধরে কাছে টেনে নেবে, চেনেনা জানেনা যাকে।

ওলি – হ্যালো

নীল – ঠিক আছে রাত্রে ফেরত দিচ্ছি কানের। কি করছিলে?

ওলি – নাচ ছিলাম ,নাচবে।

নীল – আর নাচ না প্লিজ, আবার কারুর সাথে জলে পরে যাবে।

ফোনটা কেটে দিলো ওলি। খারাপ লাগছে না কিন্তু মজা করছে নাতো? সত্যি ওলিকে ভালো লেগেছে নীলের নাকি ফ্লাটিং করছে।

এদিকে আজ ১৪ ফেব ভ্যালেন্টাইন্স ডে, সবাই খেপাচ্ছে নীলকে নিয়ে। সারাক্ষন শুধু দুজনে দুজনের কথা ভেবেছে।

————————————————————————————————————-

রাত্রে খুব হালকাই সেজেছে ওলি। একটা ডিপ পিঙ্ক লেহেঙ্গা আর সঙ্গে হালকা জুয়েলারি। মাসিকে বলেছে পরে কানের ফেরত দেবে। মাসি কিছু বলেনি। রাত্রে বর, বরযাত্রী এলো গোলাপ দেওয়া হচ্ছে। আতর ছেটানো হচ্ছে। কিন্তু সে কোথায়? দেখা মিললো একটা ব্লু কালারের শেরওয়ানি পড়েছে নীল। খুব ভালো লাগছে। বরের পাশেই বর আসরে বসেছে বরের থেকে একটু দূরে। ইশারা করে নীলকে জিজ্ঞাসা করলো কানের কথা। পাত্তাই দিলো না নীল  যেন চেনেই না। রীতিনীতি শেষ হলো।

শুভকে চেনে ওলি, কথাও বলছে অনেকবার। এবার বরের পাশে বসে বললো ওলি। শুভ – বলছি ভাইকে কেমন লাগলো।

ওলি – খুব খারাপ

শুভ – অমন বলিস না। অমন ছেলে হাজারে একটা হয়। বলতো লাগিয়ে দিই বিয়ে। শুনলাম তো গায়ে হলুদটা,একসঙ্গে চানও হয়ে গেছে।

ওলি- নিজে বিয়ে করতে এসেছো বিয়ে করো না।

শুভ – সে তো করবোই। তোরটাই এক সাথে লাগিয়ে দিতাম আর কি। নীল রাজি আছে তুই বল

ওলি – আচ্ছা তোমাকে বলেছে আমাকে বিয়ে করতে চায়? যত বাজে কথা !

শুভ – হুম বলেছে রে, বলেছে তোকে হেভি লেগেছে, সারাক্ষন তোকে নিয়ে ভাবছে।

ওলি – একদম ভাট বকবে না।

শুভ – সত্যি বলছি তুই বিশ্বাস করবি না , কি বলবো বল ,

ওলি – ও বলেছে তোমাকে এসব ?

শুভ – বলতে কি আর চায় রে , জোর করে বের করেছি মুখ থেকে। ওই মোবাইলটা কত প্রিয় ওর জানিস, একবার ওর দিদির হাত থেকে পরে গিয়েছিলো , চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করেছিল। আজ একদম কুল, আরে ঠিক আছে হয় এমন, কোনো রাগ নেই।     হাসি হাসি মুখে কি যেন ভাবছে। বাইক নিয়ে ফোন কিনতে চলে গেলো হাসি হাসি মুখে। ব্যাস চেপে ধরতেই সব বেরিয়ে গেলো।

ওলি – মুখ বন্ধ করে শরবতটা খাও।

ওলি ওপরে একবার যা। ঘর থেকে ছেলেটার একটা সোয়েটার নিয়ে আয়। ভিজেছে এটা। চাবি নিয়ে ওলি উঠে গেলো। আচ্ছা সত্যি বলেছে নাকি শুভদা মিথ্যা বলছে। ভালো ওলির ও লেগেছে নীলকে। কেমন করে জড়িয়ে ধরেছে, না কোনো খারাপ নজর নেই, সুদীপ্তদার মতো মজা করতে জানে। কিন্তু যদি সত্যিই মজা করে , না , মজা করে শুভদাকে বলবে নাকি ? মাথায় অনেক কথা ঘুরছে। সব নাটক নাহলে এখন দেখে কেন চিনতে পারছে না ? মজা করছে নাতো ? কি হচ্ছে এসব। ঘরে  ঢুকে আলো জ্বালিয়ে ব্যাগটা খুলেই দেখলো দরজায় টোকা দিচ্ছে নীল । বাইরে উঁকি দিয়েই ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো নীল ।

ওলি – কানের।

নীল আয়নায় মনোযোগ দিয়ে মুখটা দেখছে।

ওলি – এত দেখার কিছু নেই খুব সুন্দর লাগছে , আমার কানের ফেরত দাও।

নীল – তার মানে আমাকে দেখেত ভালো।

ওলি -আমার কানের

নীল – তোমার কানের তো নেই আমার কাছে।

ওলি – কি?

নীল – তুমি তো বলেছিলে ওটা তোমার নয় ছোট মাসির।

ওলি – নীলের শেরওয়ানির কোলাটটা চেপে ধরে বললো – মেরে ফেলবো বলে দিচ্ছি। চুপচাপ কানের ফেরত দাও

নীল – ওলিকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো – মরে তো গেছিই আর কি মারবে।সারাক্ষন শুধু তোমাকেই ভাবছি ওলি। শুধু এই কানেরটাই দেখেছি। মনে হয়েছে তোমাকেই দেখছি।

ওলি – ছাড়ো।

নীল – বলো তুমি আমার কথা ভাবোনি।

ওলি – ছাড়ো।কেউ চলে আসবে।

ছেড়ে দিলো নীল। ওলি একটু দূরে সরে গেছে কাঁপছে। নীল পকেট থেকে একটা ছোট ডিব্বা বের করলো তাতে আন্টি আর কানের টা ।

বসে ওলিকে বললো – আমার ভ্যালেনটাইন হবে ? বিয়ে করবে আমাকে ?

ওলি – জানিনা

নীল – প্লিজ ওলি।

ওলি – নামের আগে পরে কি ? পুরো নাম

নীল – আগে ওলি, তারপর নীল,তরপর আবার ওলি।

হেসে ফেললো ওলি। কানেরটা নিয়ে আংটিটা শেরওয়ানির পকেটে রেখে বললো ফোনে জানাবো।

ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো ওলি। কেউ নেই এখানে কেউ দেখেনি। কিছুক্ষন পর নীল বেরিয়ে গেলো। কিন্তু মহারানী যে কিছুই উত্তর দিলো না , টেনশন হচ্ছে। এভাবে একবেলার দেখায় যে কাউকে এত ভালো লাগবে প্রপোজ করবে ভাবেনি কোনোদিন। ফোন আসছে না তো। কি হলো ,কি ভাবছে সে ?  টুংটুং করে শব্দ একটা ম্যাসেজ – বিয়ে করতে হলে বাবার সাথে কথা বলতে হবে ,আর আজকের জন্য ” হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন্স ডে ”

প্রিয়বন্ধু মিডিয়ার গল্প বা লেখা যদি কেউ কপি করে নিজের বলে দাবি করে সেক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!