কুমোরটুলির মৃৎশিল্পকে বাঁচাতে অভিনব পদক্ষেপ কেন্দ্রের, হাসি ফুটছে প্রতিমা শিল্পীদের কলকাতা জাতীয় রাজ্য July 23, 2018 পুজোর বাকি মেরেকেটে ২ মাস। তার আগে কুমোরটুলির মৃৎশিল্পীদের কেন্দ্র সরকার নিয়ে এল পুজো উপহার। মৃতশিল্পীদের দেওয়া হবে ব্লোয়ার মেশিন। ফলে মাটি শুকনোর কাজ হবে নিশ্চিন্তে। দুর্গাপ্রতিমা গড়ার কাজে সবচেয়ে বড় সমস্যা কাঁচা মাটির শুকোনো। বিদেশেও প্রতিমার অর্ডার থাকে। ফলে বর্ষাকাল থেকেই কাজ শুরু করে দেন কুমোরটুলির মৃতশিল্পীরা। কিন্তু মাঝে মধ্যেই আবহাওয়া খারাপ থাকায় কাঁচা মাটির প্রতিমা শুকোতে সময় লাগে। এই সমস্যা থেকে উদ্ধার করতে এবার এগিয়ে এসেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিউটি পার্লারের দৌলতে ব্লোয়ার যন্ত্রটির সঙ্গে এখন অনেকেই পরিচিত। বিদ্যুৎচালিত এই যন্ত্র গরম হাওয়া বের করে, যা ভিজে চুলকে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে দেয়। কুমোরটুলি পটুয়াপাড়ায় এই ভরা বর্ষার মরশুমে কাঁচা মাটির প্রতিমা শুকতেও এবার ব্লোয়ারের ব্যবহার শুরু হতে চলেছে। সৌজন্যে কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রক। সম্প্রতি মন্ত্রকের তরফে আধিকারিকরা কুমোরটুলি এসে এখানকার মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সেরে গিয়েছেন। জানা গিয়েছে, মৃৎশিল্পীদের ছোট ছোট দল করা হবে। প্রতি দলকে একটি করে ব্লোয়ার দেওয়া হবে। এ বিষয়ে চলতি সপ্তাহে বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেখানেই চূড়ান্ত হবে রূপরেখা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের ‘এমএসএমই ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট’-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সঞ্জীব আজাদ বলেন, ‘আমরা ওঁদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি। ক্লাস্টার তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রযুক্তির সাহায্যে কীভাবে এই শিল্পীদের শ্রম এবং খরচ—দুই-ই লাঘব হয়, তার চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তবে শুধু ব্লোয়ার নয়, প্রতিমা তৈরির জন্য মাটি মাখার বিশেষ যন্ত্রের কথাও ভাবা হচ্ছে। আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে ——————————————————————————————- এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে। প্রসঙ্গত, ফি বছর এই সময়ে কুমোরটুলিতে গেলে দেখা যায়, ঘুঁটের আগুনে সেঁকা হচ্ছে প্রতিমা। কিংবা ব্লু-ল্যাম্প জ্বালিয়ে শুকোতে হচ্ছে মূর্তি। এতে যেমন শিল্পীদের ঘিঞ্জি ঘরে আগুন নিয়ে কাজ করার ঝুঁকি থাকে, তেমনই কাজও খুব ভালো হয় না। কারণ, নীল শিখার আগুনের হলকায় কাঁচা প্রতিমার উপরের অংশ শুকলেও ভিতরে জলীয়ভাব থেকে যায়। ফলে নানা সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার সমাধানেই ব্লোয়ার ব্যবহারের প্রসঙ্গ ওঠে। ব্লু-ল্যাম্পের আগুনের তুলনায় গরম হাওয়ায় মূর্তি যে ভালো শুকবে, তা আশা করছেন অনেকেই। আগস্টের শেষ দিক থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়ে কুমোরটুলিতে চলে প্রতিমার গায়ে রঙ চাপানোর কাজ। ব্লোয়ার ব্যবহারের ফলে রং উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠবে বলে আশা শিল্পীদের। তবে নতুন যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে পটুয়াপাড়ার বেশিরভাগ শিল্পী এখন আশা-আশঙ্কার দোলাচলে রয়েছেন। কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সংস্কৃতি সমিতির তরফে বাবু পাল বলেন, ‘আমাদের যদি ওই যন্ত্র দেওয়া হলে ব্যবহার করে দেখব, কতটা কাজে আসে। তবে যেহেতু গরম হাওয়ার মাধ্যমেই প্রতিমা শুকবে, তাই ব্লু-ল্যাম্পের চেয়ে ভালো কাজ হবে বলেই মনে হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ জোগানের চিন্তা রয়েছে।’ কারণ এই ব্লোয়ার চালাতে বেশ বিদ্যুৎ খরচা হয়। শিল্পী সমীর পাল বললেন, ‘ব্লোয়ার দিয়ে প্রতিমা আরও ভালোভাবে শুকনো যাবে বলেই মনে হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুতের খরচ কোন জায়গায় যাবে, তা সবার আগে দেখতে হবে। এমনিতে রাজ্য সরকারের তরফে আমাদের এই মরশুমে ৫-১০ লিটার করে কেরোসিন তেল দেওয়া হয়। এবার নতুন যন্ত্রে যদি বিদ্যুতের খরচ খুব বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে তা নিয়ে কতটা কাজ করা যাবে, সন্দেহ আছে।’ কুমোরটুলি মৃৎশিল্প সমিতির সম্পাদক কার্তিক পাল বলেন, ‘আমাদের এখানে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। তাই নতুন যন্ত্র নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? তবে সরকার থেকে কী ব্যবস্থা করে, সেটা আগে না দেখলে কিছু বলা যাবে না।’ আপনার মতামত জানান -