এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > মেদিনীপুর > নেতাই নিয়ে অস্বস্তি তৃনমূলের! জেনে নিন বিস্তারিত

নেতাই নিয়ে অস্বস্তি তৃনমূলের! জেনে নিন বিস্তারিত

 

নেতাই দিবসের দিন শহীদ স্মরণ মঞ্চে কার্যত কোনরকম আসন ছাড়াই দাঁড়িয়ে থাকতে হল তৃণমূল কংগ্রেস নেতাদেরকে। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার পিছনে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের যতটা গুরুত্ব রয়েছে, অনেকটা সেই রকমই গুরুত্ব রয়েছে নেতাই গ্রামের। বামফ্রন্ট আমলে সেই সময়কার নেতাই গণহত্যা রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি করে দিয়েছিল রাজ্য তথা দেশীয় রাজনীতিতে।

বস্তুত, 2011 সালের 7 জানুয়ারি নেতাই গ্রামে সিপিএম নেতা রথীন দন্ডপাতের বাড়িতে অবস্থিত সিপিএমের শিবির থেকে গ্রামবাসীদের উপরে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। আর সেই গুলিতে মারা গিয়েছিলেন চার জন মহিলা সহকারে 9 জন আহত হয়েছিলেন, 29 জন নিরীহ গ্রামবাসী। তবে এই ঘটনার নয় বছর পেরিয়ে গেছে। রাজ্যের ক্ষমতা বদল হয়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সারা বাংলার পাশাপাশি নেতাই গ্রামেও রাজ্য সরকারের উন্নয়নের কিছু ছবি অবশ্যই ধরা পড়ে।

কিন্তু এক্ষেত্রে গ্রামবাসীদের অভিযোগ, অনেকেরই দাবি-দাওয়া প্রত্যাশা পূর্ণ হয়নি। নিহতদের পরিবারের কেউ কেউ চাকরি পেয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। কিন্তু সাধারণ নেতাইবাসী উন্নয়নের নিরিখে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ। আর সেই কারণেই শহীদ স্মরণ সমাবেশ সভার পরে স্থানীয় গ্রামবাসীদের অভাব অভিযোগ শোনার জন্য স্থানীয় কমিউনিটি হলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম নেতা তথা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

শুধু তাই নয়, এবারের নেতাই দিবস উপলক্ষে স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। গ্রামবাসীদের উদ্যোগে স্থানীয় মানুষদের পক্ষ থেকে বারবার অভিযোগ করা হয়েছিল, একমাত্র মে দিবসের দিন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গেই গ্রামে আগমন ঘটে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বদের। তাছাড়া সারা বছর দেখাই মেলে না তৃণমূল নেতাদের। এছাড়াও সাধারণ মানুষের একাধিক অভিযোগ ছিল, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বেরদের প্রতি নেতাই এলাকার মানুষ যে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি ক্ষিপ্ত, তার প্রমাণ মিলেছে গত লোকসভা নির্বাচনে।

2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে যেখানে নেতাইয়ের দুইটি আসনেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের জয়যুক্ত হয়েছিল। সেখানে 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে দুইটি আসনে তৃণমূল কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও, ভোটের পরিমাণ অনেকটাই কম হয়ে দাঁড়ায় একটি আসনে। তৃণমূল সূত্রে জানা যাচ্ছে, দিন কয়েক আগে পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর আত্মসহায়ক হিমাংশু মান্না, নেতাই গ্রামের শহীদ সমাবেশের প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে গ্রামে আসেন। আর সেখানেই তিনি স্থানীয় নেতৃত্বদের প্রতি গ্রামবাসীর ক্ষোভ-বিক্ষোভের কথা জানতে পারেন। সেই মোতাবেক মন্ত্রীকে সম্পূর্ণ ব্যাপারে অবগত করেন তার আত্মসহায়ক।

তাই এবারের শহীদ সমাবেশ অনুষ্ঠান হওয়ার আগেই শুভেন্দু অধিকারী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, মঞ্চ অনেকটা ছোট করতে হবে। সেই মঞ্চে থাকবে না কোনো চেয়ার। আর মন্ত্রীর কথামতো এদিন সকাল বেলা থেকে ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ইত্যাদি এলাকার তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বস্তরের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদেরকে এলাকায় উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। শুধু তাই নয়, মঞ্চে কোনরকম চেয়ার ছিল না। কার্যত মঞ্চের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় এবং জেলা নেতৃত্ব।

জানা যাচ্ছে, মন্ত্রীর পক্ষ থেকে সেরকমটাই নির্দেশ ছিল। পাশাপাশি এদিনের অনুষ্ঠানে প্রায় 2 ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় তৃণমূল নেতৃত্বকে। তারপরে বেলা এগারোটা নাগাদ নেতাইয়ে শহীদ স্মরণ মঞ্চে উপস্থিত হন শুভেন্দুবাবু। তিনি শহীদ বেদীতে মাল্যদান করেন। নতমস্তকে শহীদদের উদ্দেশ্যে প্রণাম করেন। আর তারপরেই শহীদ স্মরণে নিজের বক্তব্য রাখেন পরিবহন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “গ্রামবাসীদের মধ্যে বিভিন্ন দল আছে, মত আছে। আমার সঙ্গে দ্বারকানাথ পন্ডিতবাবুর কথা হয়েছিল। এবার তারা কর্মসূচি গ্রামের লোকজন মিলে করেছেন। আপনাদের আবেগের সম্মান জানাই।”

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

পাশাপাশি নেতাই গণহত্যা কান্ড নিয়ে বলতে গিয়ে শুভেন্দুবাবু বলেন, “একটা কথাই বলব, আপনারা সঠিক বিচার পাননি। রথীনবাবু আদালত থেকে অর্ডার করে তার বাড়ি খুলেছেন। আমি শুধু বলব, রথীনবাবুর বাড়ি ব্যবহার করে যে পাপ কাজটা করে গিয়েছিল, রথীনবাবুর বন্ধুরা তার প্রায়শ্চিত্ত উনি গ্রামের লোকদের নিয়ে করুন।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে এলাকায় এসে নিজের দোতলা বাড়ির কিছুটা সংস্কার করেন রথীন দণ্ডপাট। পরবর্তীতে পুনরায় জেরে ফিরে যান রথীন বাবু। অনুষ্ঠানের দিন তার বাড়ির সদর দরজাতে তালা ঝুলতে দেখা যায় স্থানীয় এলাকার মানুষজনদেরকে নিয়ে বৈঠকে বসে একাধিক সমস্যার কথা শোনেন শুভেন্দুবাবু।

কেউ কেউ নিজেদের বৃদ্ধ ভাতা, বিধবা ভাতা নিয়ে মন্ত্রীর কাছে দরবার করেন। কেউ আবার সরকারি আবাসন প্রকল্পে বাড়ির জন্য আবেদন জানান সকলের অভিযোগ এবং প্রত্যাশা মন দিয়ে শোনেন মন্ত্রীমশাই। এছাড়াও গ্রামের স্থানীয় একটি স্কুলে সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরি ডোমশোল গ্রামের বাসিন্দা রুপম পাত্রকে গতিধারা প্রকল্পে গাড়ি দেওয়ার আশ্বাস দেন শুভেন্দুবাবু। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, নেতাই হত্যাকাণ্ডে নিহত পরিবারকে সরকার থেকে সাহায্য প্রদান করা হলেও এই মামলায় যে সমস্ত সাক্ষী হয়েছিল, তাদের আদালতে যাতায়াতের খরচ আর কোনো ব্যবস্থা করে না শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। এছাড়াও আহতদের মধ্যে অনেকেই সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

এই বিষয়ে নেতাইগুলি চালনা কাণ্ডে আহত হওয়া হংসধ্বজ রায় বলেন, “আমাদের দিকে স্থানীয় নেতারা ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। অথচ আমরা কী পেলাম! গুলিতে হাতের শক্তি হারিয়েছি। চাকরিও তো জোটেনি।” ওয়াকিবহাল মহলের মতে, যে সমস্ত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যজুড়ে নিজেদের প্রতিবাদী ভাবমূর্তিকে শক্তিশালী করেছে। সেই সমস্ত এলাকার মানুষজন এবং আন্দোলনে আহত নিহতদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখার প্রয়োজন রয়েছে শাসকদলের। এই প্রক্রিয়ার কিছুটা শুরু করলেন পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দুবাবু। কিন্তু আগামী দিনে ঘটনাচক্র কোন দিকে এগোয়! সেদিকেই লক্ষ্য থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!