এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > শাসকদলের “আশীর্বাদেই” পুলিশকেও গুলি করতে হাত কাঁপছে না দুই-ভাইয়ের? তীব্র ক্ষোভ এলাকা জুড়ে

শাসকদলের “আশীর্বাদেই” পুলিশকেও গুলি করতে হাত কাঁপছে না দুই-ভাইয়ের? তীব্র ক্ষোভ এলাকা জুড়ে


 

বিগত প্রায় এক দশক ধরে সন্দেশখালির খুলনা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কার্যত মুকুটহীন সম্রাট হয়ে দাঁড়িয়েছিল কেদার সর্দার এবং লালটু সর্দার। পরবর্তীতে বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেদার সর্দারের স্ত্রী স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

বিশেষ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, তার স্ত্রী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হওয়ার পর থেকেই কেদার ভাতৃদ্বয়ের ঔদ্ধত্য শতগুণ হয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে খুন, সন্ত্রাস, রাহাজানি, ধর্ষণ, চুরি ইত্যাদি গুরুতর অভিযোগ ওঠে বলে দাবি বিরোধীদের এবং ওয়াকিবহাল মহলের।

একাংশের মতে, কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তির অদৃশ্য আশীর্বাদের হাত মাথায় থাকার কারণে কখনই প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি। কিন্তু সাধারন মানুষের উপর নির্যাতন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপরে হামলা চালালেও পুলিশের উপর গুলি করার মতো সাহস যে তারা দেখাতে পারে, তা কার্যত কল্পনাচিত ছিল অনেকেরই।

জানা যায়, গত শুক্রবার রাত্রিবেলা বৌ ঠাকুরাণীর এলাকায় একটি পুজোর বিসর্জনে যায় কেদার সর্দার এবং লালটু সর্দার। অভিযোগ, ঘটনাস্থলে একটি মদের আসরে অন্য একটি গোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে অশান্তি বেঁধে যায় সর্দার ভ্রাতৃদ্বয়ের। আর এরপরই পরিস্থিতি চরম আকৃতি ধারণ করে। সর্দার ভাতৃদ্বয়ের আঘাতে গুরুতর জখম হন বিরোধী গোষ্ঠির লোকেরা।

তাদের মধ্যে অনেকেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে খবর। ঘটনার জেরে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতা পুলিশকে খবর দেয় এবং অভিযোগ দায়ের করে দুই পর্দার ভাইয়ের বিরুদ্ধে। আর এই খবরের জেরে রাত্রিবেলা আন্দাজ 10:30 নাগাদ পুলিশ খুলনায় এসে পৌঁছয়। কিন্তু পুলিশের পৌঁছানোর খবর আগের থেকেই আঁচ করতে পেরেছিল কেদার এবং লালটু। তাই তারা লুকিয়ে থেকে নজর রাখছিলেন।

এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে কেদার-লালটুর বাহিনীরা। যাতে করে একজন সাব-ইন্সপেক্টর, একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এলাকা থেকে পালাতে সক্ষম হন। কিন্তু গ্রামের কর্তব্যরত পুলিশ বিশ্বজিৎ মাইতি তাদের গুলির আঘাতে মাটিতে পড়ে যায়।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, কেদার এবং লাল্টুর আতঙ্কে বিশ্বজিৎ মাইতিকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেনি স্থানীয় গ্রামবাসীদের কেউই। অত্যন্ত মর্মান্তিক ভাবে রক্তাক্ত অবস্থায় পুলিশ বিশ্বজিৎ মাইতি মাটিতে পড়ে রীতিমত কাতরাতে থাকে। আহত বিশ্বজিতের সামনে পুলিশের মোটর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু কেদার, লাল্টুর সন্ত্রাস এমনই ভয়াবহ যে এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় মুখ খুলতে পারেনি এলাকাবাসী।

জানা যায়, বিগত বামপন্থী আমলে রাজ্যে যখন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন এই কেদার এবং লাল্টু বামফ্রন্টের হয়ে তৃণমূল নেতাদের উপরেও অনেক অত্যাচার করেছেন। পরবর্তীতে রাজ্যে পালাবদলের একাংশ দলবদলকারী বামপন্থী নেতাদের সঙ্গে লাল জার্সি খুলে সবুজ জার্সি ধারণ করেন দুই কূখ্যাত সর্দার ভাইয়েরা।

পুলিশ সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই কেদার এবং লাল্টুকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের দোসর আরো দুই ভাই বিধান ও মুকুল এখনও পর্যন্ত পলাতক। জানা যায়, এই বিধান এবং মুকুল সর্দারের নিজের ভাই লালটু কেদারের মাসতুতো ভাই। তাই সমগ্র ঘটনা নিয়ে এলাকায় নয়, রাজ্য রাজনীতিতে রীতিমত সোরগোল পড়ে গেছে বলে সূত্র মারফত খবর।

এদিন এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে। প্রশাসন কেমন কাজ করছে, তার সার্টিফিকেট বিজেপির কাছ থেকে নেব না।” আবার এই বিষয়ে সন্দেশখালির সুকুমার মাহাতো জানান, তার স্ত্রী পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হলেও লোকসভা ভোটের আগের থেকে দলের সঙ্গে ওদের কোনো সম্পর্ক ছিল না।

এদিকে এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “ধৃত ওই দুই সর্দার ভাইয়েরা কুখ্যাত দুষ্কৃতী। বাম জমানায় সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা এই দুই দুষ্কৃতী বর্তমানে বিজেপিতে ঢুকেছিল। গত শুক্রবার দিন রাত্রিবেলা আমাদের চার জন কর্মীকে খুনের চেষ্টা করার পাশাপাশি পুলিশের উপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশকে রং না দেখে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।”

তবে রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন, যদি কেদার এবং লাল্টু বিজেপি সমর্থক হয়ে থাকে, তাহলে দীর্ঘদিন এলাকায় তাদের নামে ভুরিভুরি অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে কেন গ্রেফতার করা হল না প্রশাসনের তরফ থেকে! আর তাই জ্যোতিপ্রিয়বাবুর এই মন্তব্যকে কটাক্ষ করে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “জ্যোতিপ্রিয় উন্মাদ। ওর পদত্যাগ করা উচিত। আমাদের কর্মীরা কিছুদিন আগেই মারা গিয়েছেন। পুলিশ তৃণমূলের দাস হয়ে গেছে। রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা লাটে উঠেছে। ওদের দুষ্কৃতীরা এখন পুলিশকে মারছে।”

এদিকে এই সমগ্র ঘটনার ভিত্তিতে বসিরহাটের সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সভাপতি অমিত দাস জানিয়েছেন, “তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য এইসব দুষ্কৃতীদের বিজেপি আশ্রিত বললে ঘোড়াতেও হাসবে।” রাজনৈতিক মহলের মতে, সন্দেশখালির খুলনা এলাকায় পুলিশের উপরে আক্রমণ চালানোর যে ঘটনা সামনে এসেছে, তা রীতিমত নিন্দার ঝড় তুলেছে রাজ্যবাসীর মনে।

যার স্ত্রী তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, যাকে এলাকায় বাহুবলের ভিত্তিতে তৃণমূলের ভোট ম্যানেজমেন্টের অন্যতম পাণ্ডা হিসেবে অভিহিত করা হয়, সেই ব্যক্তি যখন পুলিশের উপরে গুলি চালায়, তখন তাকে বিজেপি আশ্রিত বলাটা কতটা প্রাসঙ্গিক! তা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ওয়াকিবহাল মহলের মনে। এখন আগামী দিনে এই ঘটনাচক্র কোন দিকে যায়, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!