এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > দিনের পর দিন ডিএ, পে কমিশন, পিআরটি নিয়ে বঞ্চনা! সরকারি কর্মী, শিক্ষকদের ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’!

দিনের পর দিন ডিএ, পে কমিশন, পিআরটি নিয়ে বঞ্চনা! সরকারি কর্মী, শিক্ষকদের ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’!

সদ্য শেষ হয়েছে দেশের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোটগণনা – আর সেই ফলাফলে দেখা যাচ্ছে বাংলা জুড়ে প্রবল গেরুয়া ঝড়ের লক্ষণ। তৃণমূল নেত্রীর ৪২ এ ৪২ এর দাবির সলিলসমাধি ঘটিয়ে রাজ্যে বিজেপির দখলে ১৮ টি আসন। তবে, ভোট বিশ্লেষণে বসে তার থেকেও মারাত্মক তথ্য উঠে আসছে – আর তা হল সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ তত্ত্ব! এবারের নির্বাচনী প্রচারে র্যায়ের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায় প্রথম শোনা গিয়েছিল এই উপমা!

তিনি প্রকাশ্য মঞ্চ থেকেই জানিয়েছিলেন, মাঝে মাঝে তাঁর মনে হয় দেশের প্রধানমন্ত্রীকে ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ মারতে! কিন্তু ভোটের রেসাল্ট আউট হতেই দেখা গেল, প্রধানমন্ত্রীকে ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ মারা তো দূরের কথা, উল্টে তিনি নিজেই খেয়ে গেলেন এই ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ বলে দাবি করছেন সরকারি কর্মচারীদের একাংশ। কিন্তু, কেন এই প্রসঙ্গ উত্থাপন? ভোটের কাজে সরকার ও প্রশাসনকে ভোটকর্মী হিসাবে সাহায্য করেন সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকরা। ফলে, অনেকেরই নিজের কেন্দ্রে নির্বাচনের দিনে অন্য কেন্দ্রে গিয়ে ভোর পরিচালনা করতে হয়।

ফলে তাঁদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা করার জন্য, তাঁদের জন্য ইভিএমের বদলে ‘পোস্টাল ব্যালটের’ করা হয়। নির্বাচন কমিশনের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এবারের ও পোস্টাল ব্যালট গুনে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যজুড়ে বিজেপি পেয়েছে ৬৮,৩৯৮ টি ভোট (৬৩.৬২%) আর তার বহু পিছনে রয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস – মাত্র ২৫,৭৯১ টি ভোট (২৩.৯৯)। এছাড়াও বিরোধী শক্তিদের মধ্যে বামেরা পেয়েছে ৭,৬৫৪ টি ভোট (৭.১২%) এবং কংগ্রেসের ঝুলিতে গেছে ৫,৬৭০ টি ভোট (৫.২৭%)। অর্থাৎ সম্মিলিত বিরোধী শক্তির পোস্টাল ব্যালটের কাছে সরকারি দল তৃণমূল কংগ্রেস প্রায় টিমটিম করছে (সম্মিলিত বিরোধীদের প্রাপ্ত পোস্টাল ব্যালটের ভোট প্রায় ৭৬% আর শাসকদলের সেখানে মাত্র ২৪%)।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এই প্রসঙ্গে সরকারি কর্মচারী পরিষদের রাজ্য আহ্বায়ক দেবাশীষ শীলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এর আগে আমি আপনাদের পোর্টালেই বহুবার জানিয়েছি যে, রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যজুড়ে একের পর ‘শ্রী প্রকল্প’ চালু করে, রাজ্যের উন্নয়ন করছেন বলে প্রচার চালিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করার চেষ্টা করছেন। অথচ যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য এইসব ‘শ্রী প্রকল্প’ সাফল্যের মুখ দেখছে, সেই সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গেই তিনি সবথেকে ‘বিশ্রী’ ব্যবহারটা করছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিপুল পরিমান ডিএ বাকি, যা হাইকোর্ট পর্যন্ত জানিয়ে দিয়েছে সরকারি কর্মচারীদের সাংবিধানিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।

এরপরেই দেবাশীষবাবু ক্ষোভের সঙ্গে জানান, অথচ মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন এটা নাকি তাঁর ‘দয়ার দান’। এমনকি কলকাতা হাইকোর্ট সাংবিধানিক অধিকার বলার পরেও, তাঁর সরকারি আইনজীবীরা একবার স্যাট, একবার হাইকোর্ট করে – যেভাবে হোক রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ থেকে বঞ্চিত রাখার প্রয়াস করা যাচ্ছেন। আবার স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী এই নিয়ে বলছেন, বেশি ঘেউ ঘেউ করবেন না! অর্থাৎ যে সরকারি কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্য, তাঁর এত ‘উন্নয়নের বড়াই’ তাঁদেরকেই তিনি ন্যূনতম সম্মানের জায়গাটাও না দিয়ে একেবারে কুকুর-বিড়ালের স্তরে নামিয়ে আনতেও পিছপা হলেন না!

দেবাশীষবাবু আরও জানান, এছাড়াও আছে পে-কমিশনের নামে আরেক বঞ্চনা। যে বাম সরকারকে আমরা এত দোষ দিতাম, তারাও কিন্তু ৬ মাসের মধ্যে পে কমিশন চালু করে দিয়েছিল। কিন্তু, এই সরকার ভারতবর্ষের মধ্যে ইতিহাস গড়ে ইতিমধ্যেই ৪২ মাস পার করে দিয়েছেন, আরও কত মাস পার করবেন পে কমিশনের পর্যালোচনার নামে সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চনার, তা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীই জানেন! এছাড়াও আছে শিক্ষকদের পিআরটি বঞ্চনা – শিক্ষকদের বুড়ো বয়সেও জোর করে যোগ্যতা বৃদ্ধির পড়াশোনা করিয়ে, পরীক্ষা দেওয়া করালেন উনি, অথচ সারা দেশজুড়ে যে পিআরটি স্কেল চালু, তা দিতে অস্বীকার করে যাচ্ছেন। বর্তমানে রাজ্যের শিক্ষকদের বেতন, একজন রেলের সাফাই কর্মীর থেকেও কম!

দেবাশীষবাবু যোগ করেন, ফলে দিনের পর দিন সরকারি কর্মচারীদের এইভাবে বঞ্চিত করার ফল উনি যে ভোটবাক্সে পাবেন তা আমি আগেই জানিয়েছিলাম। তবে, আপনারা যে হিসেবে দিলেন তাতে সরকারি কর্মচারীদের ক্ষোভের ভোটের সব চিত্রটা উঠে আসে নি। কেননা অনেকেই ইডিসি দিয়ে ইভিএমে ভোট দিয়েছেন। অনেককে আবার চক্রান্ত করে পোস্টাল ব্যালট পেতেই দেওয়া হয় নি, বা এমন সময়ে দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁরা আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভোট দিতে না পারেন। তাতেও, যা ফলাফল সেই অনুযায়ী মুখ্যমন্ত্রীর কথা ধার করেই বলি, সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকদের তরফ থেকে এটা ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ নামে একটা ছোট্ট উপহার! আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এর থেকেও বড় ‘গণতন্ত্রের থাপ্পড়’ শাসকদলের জন্য অপেক্ষা করছে!

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!