এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > উত্তরবঙ্গ > কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না “বিদ্রোহী” কাউন্সিলরদের, বেজায় চটেছে তৃনমূলের রাজ্য নেতৃত্ব

কিছুতেই বাগে আনা যাচ্ছে না “বিদ্রোহী” কাউন্সিলরদের, বেজায় চটেছে তৃনমূলের রাজ্য নেতৃত্ব

বাম আমলেও দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল পশ্চিমবাংলার উত্তরের মালদা জেলা। গৌড়বঙ্গে কোনদিনই কাস্তে- হাতুড়ি-তারা সেই ভাবে তাদের প্রতিপত্তি বিস্তার করতে পারেনি। পরবর্তীতে পশ্চিমবাংলার পরিবর্তনের কান্ডারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার ডাক দিলেও মালদা জেলা কিন্তু কংগ্রেসীদেরই রয়ে গেছিল।

কিন্তু গত লোকসভা নির্বাচনের আগের থেকে দল ভাঙিয়ে জেলা পরিষদ দখল থেকে শুরু করে পৌরসভা দখল এবং 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে মালদায় পাওয়া ব্যাপক সাফল্য উজ্জীবিত করে ঘাসফুল শিবিরকে। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে উত্তর মালদার কংগ্রেস সাংসদ মৌসম বেনজির নূর আচমকাই তৃণমূল শিবিরে নাম লেখায়। কিন্তু পরিবর্তিত হয়নি মালদা সেই তৃণমূল বিরোধী মনোভাব।

এবারে মালদা দক্ষিণ লোকসভা কেন্দ্রে পদ্মফুল ফুটেছে। তাই তৃণমূলের মালদা বিজয়ের স্বপ্ন যে অধরাই থেকে গেল, সেই বিষয়ে নিশ্চিত প্রায় সকলেই। আর এবার গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে মালদা জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের উৎকণ্ঠা ক্রমেই বাড়িয়ে দিচ্ছে ইংরেজবাজার পৌরসভার বিদ্রোহী কাউন্সিলররা। যা নিয়ে বেজায় চটে গেছে তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইংরেজবাজার পৌরসভার কাউন্সিলরদেরকে বারবার বলা সত্ত্বেও নিজের দলেরই আনা অনাস্থা প্রস্তাব থেকে পিছু হটেছেন না দলীয় কাউন্সিলররা। কার্যত দলের নির্দেশ অমান্য করেই চলছে কাউন্সিলরদের এই জেহাদি মনোভাব। তাই শীর্ষ তৃণমূল নেতৃত্ব এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

তৃণমূল সূত্রের খবর, পুরো ঘটনায় উসকানিদাতাদেরকে চিহ্নিত করতে শুরু করেছে ঘাসফুল শিবির। এই বিষয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান নীহাররঞ্জন ঘোষ বলেন, “বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হচ্ছে। আমি নিজেও তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছি।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই নীহারবাবুকে হেনস্থা করার প্রসঙ্গে অনেক কাউন্সিলররাই সেই হেনস্তার ঘটনাকে সমর্থন করেছেন। কাউন্সিলরদের একাধিকজন নীহারবাবুর সম্পর্কে তিক্ত মন্তব্যও করেছেন। তাই নীহার ঘোষ তাদের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসলে সম্পর্কের বরফ যে কিছুটা হলেও গলতে পারে, তা মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এদিন এই প্রসঙ্গে নীহার ঘোষ বলেন, “আমরা এতদিন একজোট হয়ে পৌরবোর্ড চালিয়ে এসেছি। কাউন্সিলরদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ভালই ছিল। অনাস্থা প্রস্তাবকে সামনে রেখে সব ঘেঁটে দেওয়া হয়েছে। আমি বিক্ষুব্ধদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি। এই বিষয়ে নেতৃত্বের সঙ্গে কথাও বলব।”

বস্তুত, শুক্রবারের বৈঠকে 17 সেপ্টেম্বর ইংরেজবাজার পৌরসভায় যে অনাস্থা বৈঠকের ডাক দিয়েছেন বিরোধী কাউন্সিলররা, তা নিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই পৌরসভার ভাইস-চেয়ারম্যানকে ফোন করেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি। ফোনেই সুব্রতবাবু ইংরেজবাজার পৌরসভার ভাইস চেয়ারম্যান বাবলা সরকারকে বলেন, “অনাস্থা ভোট স্থগিত রাখতে হবে।” তিনি যে ব্যাপারটা নিয়ে রীতিমতো ক্ষুব্ধ, তাও এদিন বুঝিয়ে দেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি। তিনি বলেছেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ওঠা কাউন্সিলরদের যাবতীয় অভিযোগ লিপিবদ্ধ করে তার কাছে জমা দেওয়ার জন্য।

এদিন এই প্রসঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান বাবলা সরকার বলেন, “আমি রাজ্য সভাপতির নির্দেশমত কাজ করছি।” অন্যদিকে মালদা জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী মৌসম বেনজির নূর বলেন, “পৌরসভায় স্থিতাবস্থা আনাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সেই মতই কাজ করছি। রাজ্য নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই মোতাবেক আমরা এগিয়ে যাব। তবে আমি কলকাতা থেকে এখনও কোনও ডাক পাইনি। নীহারবাবু বিক্ষুব্ধ কাউন্সিলরদের সঙ্গে আলোচনায় বসতেই পারেন, এই ব্যাপারে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কারণ আমরা সবাই তৃণমূল।”

মালদা জেলায় তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব ক্রমেই রাজ্য নেতৃত্বের চোখের ঘুম উড়িয়ে দিচ্ছে, সেই বিষয়ে সহমত পোষণ করছে প্রায় সকল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এদিন এই প্রসঙ্গে পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি বলেন, “নীহারবাবুর কাজকর্ম নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে। তাই অনাস্থা প্রস্তাবে সই করেছি। তবে তার সঙ্গে আলোচনায় বসলে আমার কোনো আপত্তি নেই। এখনও পর্যন্ত আলোচনার ব্যাপারে নীহারবাবুর তরফে কোনো প্রস্তাব আসেনি। প্রস্তাব এলে ভেবে দেখব।”

অন্যদিকে অপর তরফে পৌরসভার আরেক প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী বলেন, “নীহার ঘোষের বিরুদ্ধে আমি সম্মুখ সমরে নেমেছি। ওর সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। চেয়ারম্যানকে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতেই হবে।” সবকিছু মিলিয়ে বর্তমান ও প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের লড়াইয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভা যে রীতিমত রণাঙ্গন হয়ে উঠেছে, সেই বিষয়ে একমত তৃণমূলের অন্দরের একাংশ। কিন্তু রাজ্য নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে এই রণাঙ্গনে শান্তি ফেরানো যায় কিনা, অথবা অস্বস্তিতে পড়া তৃণমূলকে শান্তি প্রদান করা যায় কিনা, এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!