এখন পড়ছেন
হোম > বিশেষ খবর > পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের বিপুল জয় কতটা বাস্তবসম্মত? কি বলছে নির্বাচনী অঙ্ক?

পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের বিপুল জয় কতটা বাস্তবসম্মত? কি বলছে নির্বাচনী অঙ্ক?

বাংলায় আসন্ন পঞ্চায়েত নিয়ে জটিলতা আপাতত বিচারাধীন কলকাতা হাইকোর্টে। সেখানে বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের এজলাসে চলছে জোরালো সওয়াল, কি হবে পঞ্চায়েতের ভাগ্য এখন সম্পূর্ণ নির্ভর করছে আদালতের রায়ের উপর। আর তারমাঝেই অসমর্থিত সূত্রে সামনে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য, যে বর্তমান মনোনয়ন পর্বের শেষে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গের বুকে ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রায় ২৭% আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চলেছে। আর তাই নিয়েই শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। একদিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মত তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের দাবি, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজ্যজুড়ে যে উন্নয়নের জোয়ার চলছে তার সামনেই নির্বাচনে লড়ার মত প্রার্থীই খুঁজে পাচ্ছে না বিরোধীরা। সুতরাং এই ফলাফল অত্যন্ত স্বাভাবিক, বাংলার মানুষ যে কি বিপুল সমর্থন নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর পাশে আছে, এই ফলাফলেই তা প্রমাণিত। অন্যদিকে, বিরোধীদের দাবি, মনোনয়ন পর্বে বারেবারে শাসকদলের বিরুদ্ধে লাগামহীন সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠেছে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা এই পরিসংখ্যানই মান্যতা দিচ্ছে সেই অভিযোগের। কিন্তু সত্যিটা কি? তা নিয়েই আমরা আলোচনায় বসেছিলাম রাজ্য-রাজনীতিতে পোড়খাওয়া এক বিরোধী নেতার সঙ্গে। কি উঠে এল সেই আলোচনার নির্যাস? এখানে তুলে ধরা হল আমাদের পাঠকদের জন্য।

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই নেতা কথা শুরু করলেন এই বলে, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে শাসকদল যে লাগামছাড়া সন্ত্রাস করছে তা তাদের এই ৫০-৫৫% আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা থেকেই প্রমাণিত। থামিয়ে দিতে বাধ্য হলাম আলোচনা, কেননা সংখ্যাটা ২৭%, ৫০-৫৫% মোটেই নয়। বিরোধীনেতা আবার শুরু করলেন, এই ২৭% সংখ্যাটা হচ্ছে যেখানে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পারে নি, শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দিয়েছে। তো গ্রাম পঞ্চায়েতে বাংলায় প্রায় ৪৮,৫০০ মত আসন আছে, যার ২৭% মানে ১৩ হাজার আসন। এখন এই ৪৮,৫০০ আসনের জন্য তৃণমূলের মনোনয়ন জমা পড়েছে ৫৯ হাজারের বেশি, অর্থাৎ ১১ হাজার আসনে তৃণমূলেরই বিক্ষুব্ধ ‘গোঁজ’ প্রার্থী। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার পর্বে এই ১১ হাজার অতিরিক্ত মনোনয়ন শাসকদল আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতবে। সুতরাং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনের সংখ্যা হবে মোট ২৪ হাজার, যা মোট আসনের ৫০%। এরপরে যেভাবে বিরোধীদের উপর মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য হামলা চলছে, বিরোধীরা খুব কম করেও ৫% আসনে যদি অনুব্রত মন্ডলের মত নেতাদের কথামত ‘ভুল বুঝতে পেরে’ মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য হয় তাহলে সংখ্যাটা ৫৫%-এই দাঁড়াচ্ছে, আরেকটু বেশি হয়ে ৬০% হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না!

এরপরেই তিনি তুলে ধরলেন বিগত নির্বাচনগুলির পরিসংখ্যান। তাঁর মতে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে, রাজ্যের ৪ বৃহৎ রাজনৈতিক দল আলাদা আলাদা ভাবে লড়াই করেছিল। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ছিল ২ কোটি, বামফ্রন্টের ১.৫ কোটি, বিজেপির ৮৫ লক্ষ ও কংগ্রেসের ৫০ লক্ষ। অর্থাৎ, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সম্মিলিত ভোট তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের সমান। শতাংশের বিচারে ধরলে, তৃণমূলের ভোট ছিল ৩৯%, বামফ্রন্টের ২৯%, কংগ্রেসের ১০% ও বিজেপির ১৭%। অর্থাৎ ২০১৪ সালের হিসাবে রাজ্যে বিজেপিকে বাদ দিয়ে বাম ও কংগ্রেসের সম্মিলিত শক্তি তৃণমূল কংগ্রেসের সমান। এরপরে, ঠিক ২ বছর বাদে ২০১৬ এর বিধানসভা নির্বাচন, যেখানে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস আসন সমঝোতা করে লড়েছিল সেখানে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোট ২ কোটি ৪৫ লক্ষ, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের সম্মিলিত প্রাপ্ত ভোট ২ কোটি ১৫ লক্ষ, আর বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ৫৫ লক্ষ। শতাংশের বিচারে তৃণমূল ৪৫%, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সম্মিলিতভাবে ৪০% এবং বিজেপি ১০%। অর্থাৎ ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে, বাম ও কংগ্রেসের ভোটব্যাঙ্কে এমন কিছু ধ্বস নামে নি, বিজেপির কিছু ভোট তৃণমূল কংগ্রেসে গেছে, তবুও অঙ্কের বিচারে বিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূলের তফাৎ মাত্র ৫% এর।

এই দুবছরে কি এমন ঘটল যে সেই তফাৎ একেবারে ৫০-৫৫% গিয়ে পৌঁছল? যদি ধরেও নিই, শাসকদলের উন্নয়নে বঙ্গবাসী খুব খুশি, তাহলে তাদের ভোটবৃদ্ধি যে হারে হচ্ছে (২০১৪ ও ২০১৬ এর হিসাব ধরে ২ বছরে ৫%), তাতে শাসকের ভোটব্যাঙ্ক এই দুবছরে আরো ৫% বৃদ্ধি পেয়ে ৫০%-এ পৌঁছবে, তাহলেও সম্মিলিত বিরোধীদের ভোটব্যাঙ্ক ৫০% – অর্থাৎ সকল সম্মিলিত বিরোধীরা ও শাসকদল একই বিন্দুতে। যদি শাসকদলের আরো উন্নততর অবস্থা ধরতে হয়, ধরে নিই সাম্প্রতিককালের উপনির্বাচনগুলিতে সঠিক জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে, তাহলেও শাসকের প্রাপ্ত ভোট ৫৫% এর বেশি নয়, আর তাহলেও সম্মিলিত বিরোধী শক্তির ভোট ৪৫%, অর্থাৎ তফাৎ ১০%, তাহলে এতো কিছুর পরেও কি বলা যায় বাংলায় বিরোধীরা প্রার্থী দেওয়া জায়গায় নেই? এবং শাসকদলের সঙ্গে তফাৎটা বাড়তে বাড়তে একেবারে ৫০-৫৫%-এর পরাজয়ে চলে গেছে? যদি সত্যিই তাই হয় তাহলে বর্তমানে বাংলার বুকে শাসকের ভোট তো ৭৫% এবং বিজেপি, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস সম্মিলিত ভাবে মাত্র ২৫%, তাহলে বিরোধীদের আটকাতে অনুব্রতবাবুদের রাস্তায় রাস্তায় উন্নয়ন দাঁড় করাতে হচ্ছে কেন? কেন মনোনয়নের জন্য একদিন অতিরিক্ত সময় দিলে শাসকদলের ঘুম এত উড়ে যাচ্ছে যে কমিশনকে চাপ দিয়ে তা প্রত্যাহার করতে হচ্ছে? কেন আদালতে গিয়ে ওই একদিন মনোনয়নের মেয়াদ আটকাতে হচ্ছে?

** এই প্রতিবেদনে লেখা তথ্য ও মত প্রিয়বন্ধু মিডিয়ার নিজস্ব নয়, রাজ্যের এক বিরোধী নেতার। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তিনি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। এখানে ব্যবহৃত তথ্যের সূত্র হিসাবে তিনি নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যকে ব্যবহার করেছেন বলে জানিয়েছেন।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!