এখন পড়ছেন
হোম > বিশেষ খবর > মুকুল রায়ের গেরুয়া আগ্রাসনেই তড়িঘড়ি ছত্রধর মাহাতোর জেলমুক্তি? জল্পনা চরমে

মুকুল রায়ের গেরুয়া আগ্রাসনেই তড়িঘড়ি ছত্রধর মাহাতোর জেলমুক্তি? জল্পনা চরমে


অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছেন লালগড় আন্দোলনের প্রধান মুখ ছত্রধর মাহাতো। সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সবুজ সংকেত মিলতেই যুদ্ধকালীন তত্‍পরতায় শুরু হয়েছে আইনি জটিলতা কাটানোর কাজ, আর ৯ বছর জেলে কাটানোর পর মুক্তির আলো দেখতে চলেছেন লালগড় থানার একটি মামলায় সন্ত্রাসদমন আইনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছত্রধর মাহাতো। কিন্তু, জঙ্গলমহলের আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছত্রধর মাহাতোর এই হঠাৎ করে জেলমুক্তি তুলে দিয়েছে একাধিক প্রশ্ন। স্বরাষ্ট্র দফতরের আধিকারিকদের একাংশের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরেই বিভিন্ন মহল থেকে ছত্রধরের মুক্তির বিষয়টি বিবেচনা করার আবেদন আসছিল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। সম্প্রতি ছত্রধরের স্ত্রী এবং ছেলের সঙ্গে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আধিকারিকদের কথা হয়। তার পরই সবুজ সঙ্কেত দেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সবথেকে বড় প্রশ্নটা উঠছে এই কারণেই।

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

কেননা ছত্রধর মাহাতো কি বা কে – এই তত্বটা মুখ্যমন্ত্রীকে অন্য কাউকে বোঝাতে হওয়ার কথা নয়। কেননা ইনিই হচ্ছেন সেই ছত্রধর মাহাতো, যাঁর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জঙ্গলমহলের আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন তখনকার বিরোধী দলনেত্রী, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৎকালীন বাম-সরকারের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে, ছত্রধর মাহাতোর সঙ্গে একই মঞ্চ ভাগাভাগি করে নিতেও কোনো অসুবিধা হয় নি তাঁর। আর তাই ২০১১ সালে ঐতিহাসিক জয় পেয়ে বাম-জামানার অবসান ঘটিয়ে, তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করেন এবং তালিকা তৈরি করার নির্দেশ দেন, তখন সবারই প্রত্যাশা ছিল সেই তালিকায় প্রথম নামটা হবে ছত্রধর মাহাতোর। কিন্তু, সেই বিশেষ কমিটির অন্যতম সদস্য সুজাত ভদ্রের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁদের তালিকায় ছত্রধর মাহাতোর নাম থাকলেও তা বিবেচিত হয় নি। উল্টে, আশ্চর্যরকমভাবে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে ২০১৫ সালে যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা হয় ছত্রধর মাহাতো ও তাঁর ৫ সঙ্গী সুখশান্তি বাস্কে, সগুন মুর্মু, শম্ভু সোরেন, রাজা সরখেল ও প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের।

যে ছত্রধর মাহাতো একসময়ের আন্দোলনের সঙ্গী হওয়া সত্ত্বেও এতদিন কোনো মুক্তির কথা রাজ্য সরকার ভাবে নি, হঠাৎ করে কি এমন হল যাতে করে তাঁর মুক্তির জন্য শুরু হয়ে গেল যুদ্ধকালীন তৎপরতা। বিশেষ করে তাঁর মুক্তি প্রক্রিয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ তুলে দিচ্ছে একাধিক প্রশ্ন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সূত্রের খবর, ছত্রধর মাহাতোর মুক্তির ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীর সবুজ সংকেত মিলতেই ‘মায়ের অসুস্থতার’ কারণ দেখিয়ে ২ সপ্তাহের জন্য প্যারোলের আবেদন করা হয়, আর তা মঞ্জুর হতে সময় লাগে নি। কিন্তু আশ্চর্যরকমভাবে ‘অসুস্থ’ মাকে না দেখতে গিয়ে তিনি নাকি ছিলেন কোলকাতাতেই, অন্তত পুলিশের লগবুকের তথ্য সেই সাক্ষ্যই দিচ্ছে বলে দাবি একাধিক সংবাদমাধ্যমের। ‘দুর্জনেরা’ বলে বেড়াচ্ছেন, সেইসময় মুকুন্দপুর এলাকার একটি গেস্টহাউসে তিনি সরকারি আতিথ্যে ছিলেন এবং সেখানে রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা তাঁর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। ছত্রধর মাহাতোর স্ত্রীও সেই সময় ‘গায়েব’ ছিলেন তাঁদের ঝাড়গ্রামের বাড়ি থেকেই বলে গুঞ্জন।

এরই মাঝে উঠে আসছে মুকুল রায়ের ‘গেরুয়া-আগ্রাসনের’ রাজনৈতিক তত্ত্ব। তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দিয়েই মুকুল রায় অভিযোগ করেছিলেন, ব্যবহার করা হয়ে গেলেই ছুঁড়ে ফেলে দিতে নাকি একটুও ভাবেন না তৃণমূল নেত্রী। পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার এই ছত্রধর মাহাতোর বাড়ি থেকেই শুরু করে সেই একই কথা আবারো উস্কে দেন তিনি। মুকুলবাবু সেদিন বলেন, পরিবর্তনের লড়াইয়ে ছত্রধরের হাত ধরেই জঙ্গলমহলে পা রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরে তাঁকেই ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। অমানবিক অত্যাচার চালানো হয়েছে তাঁর ওপর। এই সমস্ত অবহেলিত মানুষদের আমরা একত্র করছি। তাই মুখ্যমন্ত্রী শঙ্কিত। এমনকি ছত্রধর মাহাতোর মুক্তির জন্য তাঁরা সব সময় সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে, আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম ঘুম উড়িয়েছে শাসকদলের বলে অভিমত স্থানীয় রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। এমনকি, ঠিক এই সময়েই স্বামী অসীমানন্দকে এ রাজ্যে এনে আদিবাসী-মূলবাসীদের সংগঠিত করার পরিকল্পনা নিচ্ছে রাজ্য বিজেপি। আর তাতেই কি দুইয়ে-দুইয়ে চার হচ্ছে? প্রশ্নটা কিন্তু তীব্র হতে সুর করেছে রাজনৈতিক মহলে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!