এখন পড়ছেন
হোম > রাজনীতি > তৃণমূল > অভিষেকের হাত শক্ত করতে কাজ শুরু মুকুলের, তুলে দিলেন বড় তালিকা!

অভিষেকের হাত শক্ত করতে কাজ শুরু মুকুলের, তুলে দিলেন বড় তালিকা!


প্রিয় বন্ধু মিডিয়া রিপোর্ট –  তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর শেষ কথা বলতেন মুকুল রায়। কিন্তু 2017 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশ্বস্ত এবং ছায়াসঙ্গী বলে পরিচিত সেই মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করে যোগ দেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। বিজেপিতে যোগদান করার পর তৃণমূল ছাড়ার পেছনে তার প্রধান কারণ দলে শ্বাস নেওয়া যাচ্ছে না বলে উল্লেখ করেন তিনি। এমনকি বিজেপির প্রতিটি জনসভা থেকে “তৃণমূল এখন আর দল নেই, এটা পিসি-ভাইপোর কম্পানি হয়ে গেছে” বলেও মন্তব্য করতে দেখা যায় মুকুলবাবুকে।

অর্থাৎ এক সময়কার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মুকুল রায় ধীরে ধীরে তার জায়গা হারানোর ফলে এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই জায়গা দখল করার কারণেই যে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস ত্যাগ করেছেন, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য। কিন্তু বিজেপিতে গিয়েও খুব একটা সুখকর হয়নি মুকুল রায় রাজনৈতিক কার্যকলাপ। 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ব্যাপক সাফল্য পাইয়ে দেওয়ার পেছনে মুকুল রায় কাজ করলেও, তাকে বিজেপির পক্ষ থেকে সেভাবে গ্রহণযোগ্য জায়গা দেওয়া হয়নি।

লোকসভার ফলাফলের ভিত্তিতে তাকে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি করা হলেও, তিনি চেয়েছিলেন, 2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে তাকে বড় দায়িত্ব দিক ভারতীয় জনতা পার্টি। কিন্তু সেই দায়িত্ব না দিয়ে দিলীপ ঘোষকে নেতৃত্বের জায়গায় রেখে সেই মুকুল রায়কে শুধুমাত্র একটি বিধানসভা কেন্দ্রে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে কৃষ্ণনগর উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়লাভ করার পর মুকুল রায়ের সঙ্গে বিজেপির দূরত্ব ক্রমশ বাড়তে শুরু করে।

আর এর পরেই সম্প্রতি তৃণমূল ভবনে গিয়ে আবার নিজের পুরনো দল ঘাসফুল শিবিরে নাম লেখান মুকুল রায়। আর আশ্চর্যজনকভাবে বিজেপিতে যোগদান করার পর যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে তার আপত্তি রয়েছে বলে নিজের নানা বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন মুকুলবাবু, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে উত্তরীয় নিজের গলায় পড়ে নিয়ে বর্তমান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে জড়িয়ে নেয় তৃণমূলের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

আর দলে যোগদান করার পরের দিনই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রীটের অফিসে গিয়ে তার সঙ্গে দীর্ঘক্ষন বৈঠক করলেন মুকুল রায়। যাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে তৈরি হয়েছে জল্পনা।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তৃতীয়বার তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যের ক্ষমতা দখল করার পরেই সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে অভিষেক হয়েছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। 2024 এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে তাকে দলের কার্যত সেকেন্ড-ইন-কমান্ড করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছায়াসঙ্গী হিসেবে পরিচিত মুকুল রায় এই সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে সেই দায়িত্ব যায় সুব্রত বক্সীর ওপর। আর তৃতীয়বার তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে এই সাফল্যের পেছনে বড় কৃতিত্ব রয়েছে, তা অনুধাবন করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই তরুণ তুর্কিকে দলকে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বিস্তৃতি লাভের জন্য এই মহাদায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আর এরপরেই মুকুল রায় দলে যোগদান করার সাথে সাথেই প্রাক্তন সাধারন সম্পাদককে নিয়ে রীতিমত বৈঠকে বসে পড়লেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক।

সূত্রের খবর, শনিবার বিকেল চারটের সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে যান মুকুল রায় এবং তার পুত্র শুভ্রাংশু রায়। যেখানে এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের মধ্যে কথা হয় বলে খবর। জানা গেছে, এই বৈঠক থেকেই মুকুল রায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে একটা বড় তালিকা তুলে দিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই সেই তালিকা নিয়ে এখন গুঞ্জন ক্রমশ মাথাচাড়া দিতে শুরু করেছে‌। অনেকে বলছেন, মুকুল রায় খুব ভালো করে জানেন কিভাবে দল ভাঙ্গাতে হয়। তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করার পর ঘাসফুল শিবিরকে ধাক্কা দিয়ে একের পর এক বিধায়ক থেকে শুরু করে নেতা সাংসদদের গেরুয়া শিবিরে যোগদান করিয়েছিলেন তিনি।

ফলে সেই মুকুল রায় তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করার পরদিন থেকেই আবার দল ভাঙ্গানোর কাজ শুরু করে দিলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে বিজেপির প্রধান মুখ শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা তিনি। একসময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম সেনাপতি ছিলেন এই শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু ভোটের আগে তিনি বিজেপিতে নাম লেখানোর পর লাগাতার ভাবে আক্রমণ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসকে। আর এবার মুকুল রায়ের মতো বর্ষিয়ান নেতা তথা চাণক্য বলে পরিচিত ব্যক্তি তৃনমূলে এসেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে বড় জনপ্রতিনিধিদের একটা তালিকা তুলে দেওয়ায় শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপির চাপ বাড়ানোকেই যে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এক্ষেত্রে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যখন দায়িত্ব পেয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন তার সঙ্গে বৈঠক করে মুকুল রায় অভিষেকবাবু সম্পর্কে আর আগের রাগ পুষে রাখতে চাইছেন না। এক্ষেত্রে সদ্য বিজেপি ত্যাগ করে এসে সেই গেরুয়া শিবিরকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়ে সেখানকার বিপুল জনপ্রতিনিধিদের তৃণমূল কংগ্রেসে নিয়ে আসার কাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই বৈঠক থেকেই শুরু করে দিলেন মুকুলবাবু বলে দাবি একাংশের।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

বিশেষ সূত্র মারফত খবর, তৃনমূল কংগ্রেসে মুকুল রায় যোগদান করার পরেই একাধিক বিজেপি বিধায়ক এবং সাংসদদের ফোন করেছেন তিনি। যা এমনিতেই বিজেপির অন্দরমহলে ব্যাপক চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকে বলছেন, এই মুকুল রায় লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল থেকে আসা অনেককে টিকিট পাইয়ে দিয়েছেন। ফলে এখন আবার তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে যাওয়ার কারণে যাদেরকে তিনি লোকসভার সাংসদ করে দেওয়ার জন্য টিকিট দিয়েছেন, তাদেরকে ফোন করে আবার তৃনমূলে নিয়ে যেতে পারেন।

পাশাপাশি এবারের বিধানসভা নির্বাচনে মুকুল রায়কে বিজেপি গুরুত্ব দেয়নি বলে দাবি করা হলেও, বেশ কিছু বিধানসভা কেন্দ্রে তার কথা মত প্রার্থী ঠিক করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। ফলে সেই সমস্ত ব্যক্তিদের তৃণমূল কংগ্রেসের নিয়ে যাওয়ার জন্য মুকুল রায় চেষ্টা শুরু করে দিয়েছেন। আর সেই তারিকা তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে তুলে দিয়ে তৃণমূলের কাছে বিশ্বাসযোগ্য জায়গা অর্জন করতে চাইছেন মুকুলবাবু। কেননা বিধানসভা নির্বাচনে তিনি বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়াই করলেও, তৃণমূলের বিরুদ্ধে খুব একটা মুখ খুলতে দেখা যায়নি তাকে।

আর তখন থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল, তবে 2017 সালে বিজেপিতে যোগদান করার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম না করে লাগাতার আক্রমণ করেছিলেন এই মুকুল রায়। তাই সেই মুকুল রায় দলে যোগদান করার পর থেকেই তৃণমূলের অনেক কর্মী সমর্থকরা কোনোভাবেই তাকে মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন। তবে অনেকেই বলতে শুরু করেছিলেন, এই সিদ্ধান্ত যেহেতু দলনেত্রীর, তাই সকলকে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হবে। কিন্তু তলায় তলায় মুকুলবাবু সম্পর্কে যে অনেকের ক্ষোভ রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

আর এই পরিস্থিতিতে নিজের পুরনো ঘরে ফিরেই আবার ঘর ভাঙার খেলা শুরু করে দিলেন মুকুল রায়। যার প্রধান কারণ, নিজের প্রাক্তন দলে ফিরে একদিকে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়া এবং অন্যদিকে বিশ্বাসযোগ্য জায়গায় পৌঁছে যাওয়া। আর সেই কারণেই বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এতকাল আপত্তি তৈরি হয়েছিল মুকুল রায়ের, তৃণমূলে পা রেখে সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই জুটি বেঁধে কাজ করা শুরু করলেন তিনি। তবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে ঠিক কোন তালিকা তুলে দিলেন মুকুল রায়, সেই তালিকার মধ্যে জনপ্রতিনিধিদের যে নাম আছে সেই ব্যাপারে একাংশ নিশ্চিত হলেও, কোন কোন জনপ্রতিনিধিদের টার্গেট করেছেন বঙ্গ রাজনীতির চাণক্য, সেদিকেই নজর থাকবে সকলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!