এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৫

অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৫


নাটক না করে বলবি, চেঁচিয়ে উঠলো অভি।

রিম্পা – না তুই ভাববি লাগাচ্ছি, আসলে কনে দেখে মেজো মাসি জিজ্ঞাসা বলে ফেলেছে যে – মোটে এই কটাগয়না। অমনি সঙ্গে সঙ্গে বললো -আমি ইচ্ছা করে নিই নি, ব্যাকডেটেড মহিলাদের মতো এক গা গয়না পড়া আমার ভালো লাগে না। এই কথাটা অভির অস্বাভাবিক কিছু মনে হলো না। সে বললো – এতে সেজো পিসির কাঁদার কি হলো? অনেকেই বেশি গয়না পছন্দ করে না।

রিম্পা – কাজ হলো না দেখে বললো – না সেজো মাসী অনেক গয়না পরে ছিল তাই খারাপ লেগেছে।

অভি – অভি জানে তার মেজো পিসিও কম নয়, মিথ্যা বলে না তবে যা মুখে আসে তাই বলে কথা শোনায়, নিশ্চই তেমন কিছু বলেছে তাই গুঞ্জা ওটা বলেছে। এখানে আরো থাকলেই রিম্পা ওর মাথা খাবে – বললো -তুই যা , আমাকে একটু একা থাকতে দে।

রিম্পা – তোর বৌয়ের নামে বলছি বলে তোর রাগ হচ্ছে। কিন্তু তুই আমার ভাই তোর নামে যদি বলে যে – আমাকে বিয়ে করার অনেক লোক ছিল, আপনার ভাইপোর কাছে আমি দয়া চাইনি। সেই আমার কাছে এসেছিলো জানতে আমি বিয়ে করবো কিনা? এই বাড়িতে বিয়ে হয়ে আমি বর্তে যায়নি। আপনাদের ছেলেই আমার মতো সুন্দরী পেয়ে বর্তে গেছে। তখন তো খারাপ লাগে। তাই বলছি।

( বিয়ের রাতের সব ঘটনা শুনেছে রিম্পা।)

অভি – কি? গুঞ্জা বলেছে ? তোকে ?

রিম্পা – আমি, মেজো মাসি,ছোট মামিমার ভাইয়ের বৌ ছিলাম।

বিশ্বাস হচ্ছে না অভির গুঞ্জাকে দেখে তো তেমন মনে হয়নি। আর যে কথাটা বলছে সে এমন হাজারখানেক মিথ্যা কথা বলতে পারে।

রিম্পা অভির মুখ দেখে বুঝতে পারছে অভি বিশ্বাস করেনি কথাটা। সে বললো –  তোর বৌয়ের সঙ্গে আমার কিসের শত্রুতা যে আমি মিথ্যা বলবো।

অভি তেমনি মুখ করে বললো – শুনলাম তুই এবার যা।

অভি দু চোখে দেখতে পারে না রিম্পাকে। একে ডিসটার্ব হয়ে আছে তার মধ্যে এইসব নাটক। পারলে বাড়ি থেকে বের করে দিতে ইচ্ছা করে রিম্পাকে। কিন্তু বাড়ির লোকের জন্য পারে না।

রিম্পা বললো – আচ্ছা চলে যাচ্ছি, শোন্ আজ আমি একটা শাড়ী নিয়েছি, ভাইয়ের বিয়ে তুই কিছু মনে করিস না।

অভি – ঠিক আছে।

রিম্পা চলে গেলো।

লুচির থালা যেমনকার তেমনই পরে রইলো। একবার মনে হলো – সত্যি গুঞ্জা বলেছে এই কথা। পরক্ষনেই রিম্পার চরিত্র ভেবে মাথা নাড়লো অভি। কিন্তু যে দায়িত্ব নিয়েছে অভি পারবে তো টানতে। গুঞ্জা সুন্দরী, অপ্সরী বললে কম বলা হয়না, শিক্ষিতা। কিন্তু অভির সময় চাই, হয়তো অনেকটা। গুঞ্জা মানবে তো ? যদি গুঞ্জা না মানে? গুঞ্জাকে বিয়ে করেছে অভি, সে অভির কাছে যদি তার অধিকার দাবি করে ? অভি জোর করে — না, পারবে না,ওকে এখুনি স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে। যদি দাদুর কানে তোলে কথাটা ? দাদুর ফের যদি। না আর ভাবতে পারছে না অভি। হাবিজাবি অনেক কথা মনে আসছে।

—————————-

 

সুপ্রিয়া আর জুঁই চার পাঁচটা ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকে দেখলো – গুঞ্জা উবুড় হয়ে কাঁদছে।
সুপ্রিয়া তাড়াতাড়ি ব্যাগ রেখে গুঞ্জকে তুলে জড়িয়ে ধরলো বুকে। কি হয়েছে গুঞ্জা? এমন করে কাঁদছিস কেন? কে কি বলেছে বল ?

গুঞ্জা – বাড়ির জন্য মন খারাপ লাগছে।

জুঁই তখন মেজো পিসি আর রিম্পার কথা বললো।

সুপ্রিয়া বোঝালো গুঞ্জাকে ওরা দুদিনের। অভি তোর চিরদিনের। সে তো কিছু বলেনি।

কিন্তু সেখানেই যে সবচেয়ে বড় ফাঁকি, সে যে অন্য মেয়েকে ভালোবাসে। তার সাথেই থাকে। তবে কি তাকে বিয়ে করেছে ? কি হবে ওর ? এই বিয়ে তবে তো কোনো মতেই এমন নানা প্রশ্ন ওর মধ্যে ঘুরছে। কিন্তু কাকে বলবে ও।

কাকিমা, জুঁই একে একে শাড়ী গুলো দেখেচ্ছে গুঞ্জাকে। কিন্তু ওর সে দিকে মন নেই। মনের মধ্যে একঝাঁক প্রশ্ন ভিড় করেছে। গুঞ্জা যখন সব জানে তখন কি ও চলে যাবে অভির জীবন থেকে ? এত বড় ধাক্কা বাবা মা সামলাতে পারবে ? যদি কিছু খারাপ হয়। না যাবে না ও, না অভির থেকেও কিছু চাইবে না ও। না স্ত্রীর অধিকার, না ভালোবাসা কিছু নয়। গুঞ্জার দুচোখ বেয়ে জল পড়ছে।
এই মেয়েটা, কি কান্ড দেখো ? এমন করে কেউ কাঁদে বল – আমাদের কষ্ট হবে না , ও সোনা মেয়ে আমার কাঁদে না – বলে সুপ্রিয়া ওকে ফের জড়িয়ে ধরলো। চোখের জল বাঁধ মানছে না গুঞ্জার।নতুন বৌ খুব কাঁদছে – খবর ছড়াতে দেরি হলো না।বৌকে সামলাতে অভির মা, ঠাকুমা এলো। এলো অভির পিসির ছেলেদের বৌরা, অভির মামী, মাসিরা। সুপ্রিয়ার ভাইয়ের বৌ।

মেজো পিসি, সেজো পিসি, রিম্পার কাছে সেটা অস্বাভাবিক লাগলো। মুখ বেকিয়ে বললো – কাঁদার কি আছে? কেননা এত বড় বাড়িতে বিয়ে হয়েছে , দামি দামি শাড়ী পেয়েছে, বৌ এর গায়ে গয়না কম বলে অভির ঠাকুমা গা ভর্তি করে নিজের গয়না দিয়েছে। ছোট বৌ আর জুঁই সেগুলো পরাচ্ছে তাকে। আবার শুনেছে বিকেলে সুপ্রিয়া নতুন গয়না কিনতে যাবে। তবে আবার এত ন্যাকামির কি আছে ? আদিখ্যেতা। হা ঘরে বাড়ির মেয়ে, এই সব করে দেখাচ্ছে। – মুখ বেঁকিয়ে বললো মেজপিসি। ঠিক বলেছো মেজদি – সায় দিলো সেজো পিসিও। দাড়াও ওরা সব যা নাচছে নতুন বৌকে নিয়ে দুদিন পর শুনবে মাথায় উঠে বউই নৃত্য করছে। – বললো রিম্পা।

আমরা দুদিন আসবো, চলে যাবো। ওরা বুঝবে – তোর আমার কি ?বললো – সেজো পিসি(সেজো পিসি মিথ্যা কথা বলে লাগালাগি করে না। কিন্তু সোজা কথার ঠিক একটা না একটা ব্যাঁকা মানে করবেই। তারপর সেটাকে নিয়ে নিজের মতো একটা মানে করে রাগ করবে। লোককে ভুল বুঝবে কথা শোনাবে। )

কিন্তু সত্যি কি রিম্পার কিছুই নয়। সুপ্রিয়া, অভি, গুঞ্জার কানে একে অপরের বিরুদ্ধে কি এত বিষ এমনি ঢালছে সে?

———————————————-

 

দুপুরে ডাক পড়লো অভির। অন্নপূর্ণা প্রণাম করতে হবে তাকে ও নতুন বৌকে একসাথে। তারপর বাড়ির বড়রা খেতে বসবে তাদেরকে পায়েস দেবে নতুন বৌ। আর পায়েসের বালতি ধরে থাকবে অভি। এটাই নিয়ম ওদের বাড়ির।  অনিচ্ছা স্বত্তেও গেলো অভি, কেননা দাদু বসেছে খেতে। পায়েস দিতে দিতে গুঞ্জাকে দেখলো অভি। না রিম্পা মিথ্যা বলছে। এই মেয়েটা ঐসব কথা বলতে পারে না। সুপ্রিয়া,জুঁই আছে নতুন বৌ এর সঙ্গে।  দাদুর সাথে খেতে বসেছে পাড়ার বয়স্ক দাদুর বন্ধু স্থানীয় কয়েকজন। ওদিকে বাড়ির লোকজন, পাড়ার কাকিমা, জেঠিমা। বৌ দেখে কেউ বলছে – বৌ খুব সুন্দর হয়েছে,একেবারে লক্ষী প্রতিমা। কেউ বলছে – দুটিতে মানিছে বেশ, কেউ বলছে – সবই ভগবানের ইচ্ছা, নাহলে এখনই অভি কেন আসবে? আর এমন করে বিয়ে হবে। ভালো থাকুক দুটো তাহলেই হবে।

এমন কথাবার্তা চলছে – অভি গুঞ্জা পায়েস দিচ্ছে। সব ঠিকই আছে। কিন্তু সুপ্রিয়ার একটা কথাই অভির মাথা খারাপ করে দিলো। সুপ্রিয়া পাড়ার এক জেঠিমাকে বলছে – হুম লক্ষীঠাকুরই বটে,আমাদের মা এর কাছে যখন প্রণাম করতে এসেছিলো গুঞ্জা, তখন থেকেই দিদিভাইয়ের খুব পছন্দ ছিল। দিদিভাই তো খালি বলছিলো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে তাই নাহলে আমাদের অভির সাথে বিয়ে দিতাম। দেখো অনুপমা মন থেকে চেয়েছিলো বলেই মা দু কানে শুনেছেন কথাটা -বললো পাড়ার জ্যাঠিমা। ব্যাস – এবার সবটা ক্লিয়ার হয়েছে অভির। এতক্ষন খেয়াল করেনি। মা তো সত্যি চেয়েছিলো। মায়ের জন্যই এইসব কিছু হচ্ছে আজ। এই সব প্রব্লেম ফেস করতে হচ্ছে অভিকে। মায়ের কু ডাকার জন্যই এমন হলো। হঠাৎ করে অভির সব রাগ গিয়ে পড়লো ওর মা অনুপমার উপর। দাদু আছে। তাই চোয়াল শক্ত করেও পায়েসের বালতি ধরে আছে অভি। গুঞ্জা দেখেছে অভির মুখটা। রাগ বিরক্ত ভরা একটা মুখ  – কেউ না জানলেও কারণটা জানে গুঞ্জা।

পায়েস দেওয়া হয়ে গেছে অভি তিনতলার ঘরে যাচ্ছিলো। দোতালার বারান্দার তক্তায় বসে আছে মেজো পিসি, সেজপিসি, রিম্পা , সুপ্রিয়ার ভাইয়ের বৌ। অভি শোন্ – রিম্পা ডাকলো।

মেজো পিসি – আয় বোস,

অভি – না , উপরে যাচ্ছি, দরকার আছে। ভালো আছো?

সেজো পিসি – দেখ বাবা, যা হবে তো হয়েছে কি আর করবি বল। মেনে নে।

কাটা ঘায়ে কি করে নুনের ছিটে দেওয়া যায় , খুব ভালো করে জানে মেজপিসি, সেজ পিসি আর রিম্পা। এই কারণেই চুপচাপ চলে যাচ্ছিলো অভি।

রিম্পা – মেনে নে বললেই কি মেনে নেওয়া যায়। যখন শুনতে হয় যে ওই মেয়েকে বিয়ে করে অভির কপাল খুলে গেছে ? অভি বর্তে গেছে , এমন মেয়ে কোথায় পেত? ওই মেয়ের পিছনে ছেলেদের লাইন লেগে ছিল। শুনেছ তো মেজো মাসি ?  মামিমা ?

মেজো পিসি – তাই তো শুনলাম।

মামিমা   – ছাড়ো না রিম্পা। একটা ছোট মেয়ে কি বলেছে ? সেটা নিয়ে মাথা খারাপ করা।

সেজো পিসি – বাবা গো, কে বলছে ?

রিম্পা – পরে বলছি। অভি তুই খেয়েছিস? বেলা হয়েছে তো ?

অভি – না পরে খাবো , তোমরা বসো আমি আসছি। চলে গেলো অভি।

অবাক হয়ে গেছে অভি। সত্যি তার মানে গুঞ্জা বলেছে এই কথা। এত অহংকার ? ছি। একে মায়ের উপর রাগ, তার উপর গুঞ্জার কথাটা। মনের কোনে গুঞ্জার সম্পর্কে একটা রাগ জায়গা করে নিলো অভির।
না মেজপিসি,মামিমা মিথ্যা বলেনি। অভি অর্ধ সত্য শুনেছে , বলা ভালো রিম্পা শুনিয়েছে।

ছোট মেয়ে বলতে এখানে জুঁইকে বোঝানো হয়েছে। সুপ্রিয়ার ভাইয়ের বৌ এলে তাকে বৌ দেখতে নিয়ে গিয়েছিলো মেজো পিসি আর রিম্পা । ফের গয়না পরে বৌকে কেমন লাগছে দেখতে গিয়েছিলো তারা। বৌ দেখে সুপ্রিয়ার ভাইয়ের বৌ বলেছে বাহ্ , খুব সুন্দর। মেজো পিসি বলেছে – দেখতে সুন্দরের সাথেই কপালটাও সুন্দর। নাহলে এবাড়িতে পড়ে। এতসব কিছু পেয়ে ভাগ্য খুলে গেছে মেয়ের।

আর চুপ করে থাকতে পারেনি জুঁই। বলেছে – গুঞ্জাই মা লক্ষী, গুঞ্জাকে বিয়ে করে ভাগ্য খুলে গেছে অভির। ওর পিছনে কত ছেলে লাইন দিয়ে ছিল, এমন মেয়েকে পেয়ে বর্তে গেছে দাদাভাই। গুঞ্জা কোনো কথাই বলেনি। সে বেচারা বাধা দিয়েছিলো। কিন্তু অভির কানে অন্য কথা গেছে।

কি ভাবছেন – কেন এমন করছে রিম্পা? কেন গুঞ্জা আর অভির কানে এমন বিষ ঢালছে রিম্পা? কারণ সে চায়না ওরা দুজনে এক হোক। কি করে পারবে সে নিজের এতদিনের সাজানো বাগান শুকিয়ে যেতে দেখতে ? নিজের দেখা স্বপ্নগুলো অন্য কারুর ক্ষেত্রে সত্যি হতে দেখতে? বুঝলেন না বুঝিয়ে বলি। দিদিমার গয়নার উপর বরাবরের লোভ ছিল। যেহেতু মা মরা মেয়ে তাই বার বার নানা জিনিস চেয়েছে , বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পেয়েছে। তাই সে ভেবেছিলো দিদিমার কাছে কেঁদে সে সেগুলো হাতাবে। তাছাড়া বিয়ের পর থেকেই আমার তেমন কিছু নেই , এই নেই সেই নেই বলে মামারবাড়ি থেকে টাকা বাগিয়ে বাড়ি করেছে। প্রতিমাসে তার বাড়ি চাল,ডাল, নুন তেল,সরষে, পোস্ত, মাসকাবাড়ি বাজার প্রায় সব যায় এই মামারবাড়ি থেকে। এখানেই শেষ নয়। পুকুরের মাছ, এমনকি মামাদের শক্তিনগরের বাজারের অসীমদের দোকানের মিষ্টি এত ভালো যে সেখান থেকেই মিষ্টি নিয়ে গিয়ে প্রতিবেশীকে দেয়। ছেলের পড়াশোনার যাবতীয় দরকারি জিনিসও মামারবাড়ি থেকেই যায় রিম্পার। কিন্তু অভি একেবারে পছন্দ করে না সেসব। বার বার রাগ করেছে সেটা জানেও রিম্পা। দাদুভাই বলেছে তোর বিয়ে হোক তারপর দেখবো। তাই রিম্পার ভয় যদি সব বন্ধ হয়ে যায়। তার থেকে যদি দুজনকে আলাদা করা যায় তবে তার কোনো কিছুতে কোনো অসুবিধা হবে না। রিম্পার ছেলে ১২ ক্লাসে পড়ছে সেও জুয়েল ছেলে। কাকে কি করে ভালো বলে টুপি পোড়ানো যায় সেও শিখে নিয়েছে মায়ের থেকে। তবে এই গল্পে তার তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেই। জামাইবাবুর ভাবখানা খানিকটা সে মহারাজা,তাকে জি হুজুর ,জি হুজুর করতে হবে।কেন্দ্র সরকারি চাকুরে, ভালো টাকা মাইনে। তবুও মামাশ্বশুরবাড়িতে হাত পাততে তার মানে বাঁধে না।

যাই হোক ফিরে আসি গল্পে। সে যখনি দেখেছে দিদিমা তার গয়না গুঞ্জকে পড়াতে দিচ্ছে। দিদিমাকে বলেছে – এত গয়না পরে কি হবে। পড়েছে তো। আর দিতে হবে না। দিদিমা শোনেনি। সে সুপ্রিয়াকে বলেছে -তুমি কিছু বলবে না? তোমার তো ভাগ আছে। তোমারও তো মেয়ে আছে। সব অভির বৌকে দিচ্ছে। বলো একটা তো দিয়েছে আর দিতে হবে না। সুপ্রিয়া বলেছে – আমাদের জন্য একটু নাহয় কম চিন্তা করলি। কাজ হয়নি। মনে মনে ভেজেছে রিম্পা। কি করে অভির কানে বিষ ঢালবে ?
কি করে অভি আর গুঞ্জাকে আলাদা করবে। সুযোগ এসেছে ,আর সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করেছে।

——————————————

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

অভি উপরে গেলো, মাথায় নানা চিন্তা রাগ ভিড় করছে। গুঞ্জা বলেছে এইসব? অভি গুঞ্জাকে বিয়ে করে বর্তে গেছে? ভাগ্য খুলে গেছে অভির ?কোনো কৃতজ্ঞাতা নেই ?না সে ভাবেনি সে গুঞ্জাকে উদ্ধার করেছে। চিরকাল গুঞ্জা তাঁর কাছে নতজানু হয়ে থাকুক। কখনো নয়., কিন্তু এইসব কথা বলেছে? এত দম্ভ। বলেছে তো বটেই।  মেজপিসি কথা শোনাতে পারে কিন্তু মিথ্যা কথা বলবে না। তাছাড়া মামিমা -অসম্ভব। দাদুভাই কি করে ওই মেয়েকে পছন্দ করলো অভির জন্য ? দম্ভে মাটিতে পা পরে না। অভির যে জিনিসগুলো সবথেকে বেশি অপছন্দ গুঞ্জাও তাই। রিম্পার মতোই নাটক করতে পারে সে হ্যাঁ নাটকই তো। নাহলে যে মেয়ের মুখে এমন ফুলঝুরি ফুটছে অভির সামনে মাথা নিচু করে ভালো মেয়ের মতো মুখ করে আছে।
মাথায় হাত দিয়ে টেবিলে বসে পড়লো অভি। কি করে সারাজীবন কাটাবে এই মানুষটার সাথে অভি? ও যে সেই মানুষগুলোর মতোই যাদেরকে অভি ভীষণ ঘৃণা করে।

অভি – ডাকলো ছোট পিসে। মুখ তুললো অভি। পিসের সাথে সাথে দুটো ভাতের থালা নিয়ে ঢুকলো মালতী পিসি আর ওর ছেলের বৌ। অভিদের বাড়িতে ওরা থাকে আর কাজ করে।
টেবিলে রেখে দিলো থালা দুটো।

ছোট পিসে লুচির থাকাগুলো নিয়ে যেতে বললো – তারা সেগুলো নিয়ে চলে গেলো।

ছোট পিসে – চল খেয়ে নে। আমিও খাবো খুব খিদে পেয়েছে।

অভি – তুমি খাও , আমি পরে খাচ্ছি।

ছোট পিসে – কাল রাত থেকে তুই কিছু খাস নি। কি হয়েছে? গুঞ্জাকে নিয়ে ভাবছিস তো ? গুঞ্জা ভালো মেয়ে। হ্যাঁ অনেক কিছু জানে না হয়তো। তুই শিখিয়ে নিবি। ও ঠিক পারবে।

অভি – কথা সেটা নয় ,

ছোট পিসে – তাহলে কি ?

অভি – বলতে গিয়েও বললো না। কেননা গুঞ্জাকে বিয়ে করার জন্য ছোট পিসেও জোর করেছিল। গুঞ্জা এমন মেয়ে জানলে কষ্ট পাবে ছোট পিসে। বললো আমি একটু সময় চাই।

ছোট পিসে – হুম তো সময় নে,

অভি – গুঞ্জা যদি না মানে।

ছোট পিসে – তুই ভুলে যাচ্ছিস, গুঞ্জার সাথে অন্য একজনের বিয়ের ঠিক ছিল। গুঞ্জার মন জুড়ে সেএখনো আছে,কিছুদিন থাকবেও সেটাই স্বাভাবিক। সে কিছু বলবে না। হয়তো সেও তোর মতোই সময় চাইছে।

কথাটা ভুল নয়, কিন্তু যে মেয়ে এমন দম্ভ দেখতে পারে সে ?

অভি মুখে বললো – হুম হতে পারে।

খাওয়া শুরু করলো অভি আর পিসে।

 

———————————————————————

 

সুপ্রিয়া বেরিয়েছে গয়না কিনতে না আর সে রিম্পাকে নেয়নি। একাই গেছে ড্রাইভারের সাথে।ওবেলাই নিতো গয়না কিন্তু রিম্পা যা শুরু করেছিল তাতে কোনো রকমে বাড়ি ফিরতে চেয়েছিল সুপ্রিয়া।
প্রভাবতীদেবী যখন অভির বৌকে গয়না দিচ্ছিলেন রিম্পা তাকে বোঝাতে এসেছিলো – সম্পত্তি ভাগ। না সে পাত্তা দেয়নি। কেন দেবে ?

সে জানে তার বড়দা, দিদিভাই, অভি , জুঁই তাকে কতটা ভালোবাসে। বিয়ের পর থেকে কিছু ভুল করলেই ননদদের কাছে যাতে সুপ্রিয়া বকা না খায় তাই নিজের ঘাড়ে সব দোষ নিয়ে কথা শুনেছে দিদিভাই। বড়দা, সবসময় বোনের মতো ভালোবেসেছে , অভি ,জুঁই তারা সুপ্রিয়ার হয়ে পিসিদের সাথে লড়েছে। যখন তার মেয়ে হয় সুপ্রিয়ার এমন শরীর খারাপ তার মেয়েকে বুকে করে আগলেছে ঐটুকু মেয়ে জুঁই, দিদিভাই সামলেছে তার মেয়ে আর তাকে। ছোট জামাইবাবু বলেছিলো নার্স রাখতে , দিদিভাই নার্স রাখতে দেয়নি – তারা দায়সারা করে  কাজ করবে , দিদিভাই সব করেছে। অভি রক্তের জন্য ছোটাছুটি করেছে। কোনোদিন মা আর কাকিমার মধ্যে ফারাক করেনি , নিজের বোন, আর কাকার মেয়ের মধ্যে তফাৎ করেনি। তার বৌকে গয়না দিচ্ছে বলে সুপ্রিয়া ভাগের কথা ভাববে ? ছিঃ। কার কাছে ভাগ চাইবে সুপ্রিয়া ? যে অভি জুঁই মায়ের জন্য কিছু কিনলে কাকিমার জন্যও সেই জিনিসটা কেনে ?তাদের কাছে ভাগ চাইবে? তাহলে ভগবান ক্ষমা করবে সুপ্রিয়াকে? যে দিদিভাই, নিজের জন্য কিছু কিনলেও সুপ্রিয়ার জন্যও কেনে ? একটা গয়না,শাড়ী পছন্দ হলে সুপ্রিয়ার জন্যও আর একটা গয়না নেয়, শাড়ী নেয় তার কাছে ভাগ নেবে। সে তো নিজেই বলেছে মাকে আপনি দিন সব গয়না আমার কোনো আপত্তি নেই। গুঞ্জা যে তার খুবই কাছের। সে যে তার ছেলের সমান অভির বৌ। গয়নার দোকানের সামনে গাড়ি দাঁড়ালো। সুপ্রিয়া এইসব ভাবছিলো খেয়াল করেনি। ড্রাইভার মনে করলো। সুপ্রিয়া নামলো গাড়ি থেকে।

 

আগের পর্ব – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৪

 

 

পরের পর্ব   – অকালে প্রেমের বোধন – কলমে – অপরাজিতা , পর্ব ৬

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!