এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > শুধু বাংলা নয়, বিরোধী শাসিত সব রাজ্যেই রাজ্যপালের অস্থির করে তুলছেন? সরগরম জাতীয় রাজনীতি!

শুধু বাংলা নয়, বিরোধী শাসিত সব রাজ্যেই রাজ্যপালের অস্থির করে তুলছেন? সরগরম জাতীয় রাজনীতি!


দীর্ঘদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সঙ্গে এরাজ্যের শাসক দলের তথা রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিরোধ লেগেই আছে। তবে এবার সেই বিরোধ করোনা আবহে আরো জোরদার হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর এর মধ্যে রীতিমতো পত্র যুদ্ধ চলছে বলে শোনা যাচ্ছে। উল্লেখ্য, করোনা যুদ্ধের শুরুতে অবশ্য রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

কিন্তু সেই শেষ! তারপর থেকেই সুর বদল হয় রাজপালের। আর এখন রীতিমতো পত্রযুদ্ধ চলছে রাজ্যে। অন্যদিকে কংগ্রেসের অভিযোগ, যেসব রাজ্যে বিরোধীরা শাসন করছে, সেখানে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁদের প্রস্তাবিত রাজ্যপালদের দ্বারা অশান্তির সৃষ্টি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আজ দিল্লিতে আইসিসি মঞ্চ থেকে কপিল সিব্বল জানান, ‘অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, কর্নাটকের মতো রাজ্যেও আমরা রাজ্যপালের ভূমিকা দেখেছি। এঁরা নিজেদের কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরে রাজ্য সরকারে অস্থিরতা তৈরি করতে চান।’

অন্যদিকে কলকাতাতেও রাজ্যপালের ভূমিকায় সরব হয়েছে এদিন প্রদেশ কংগ্রেস এবং সিপিএম এর নেতারা। তবে তাঁরা বিরোধী দল তৃণমূলকেও ছাড়েনি বলতে। অন্যদিকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও জানিয়েছেন, ‘অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে রাজ্যপালের অতিসক্রিয়তা আমাদের রাজ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে করোনার প্রকোপ অনেক বেশি। সেখানে রাজ্যপালেরা কি সরকারের সঙ্গে এই রকম সংঘাতে নেমে পড়েছেন? এখানে রাজভবন তো রাজনৈতিক দলের দফতরের কাজ করছে!’

অন্যদিকে, দিল্লিতে কংগ্রেস নেতারা অভিযোগ জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালও একইভাবে অস্থিরতা তৈরী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিন কংগ্রেস নেতারা জানান, উদ্ধব ঠাকরেকে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার ছ মাস অর্থাৎ আঠাশে মের মধ্যে বিধানসভায় বা বিধান পরিষদে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজ্যপালের কোটা থেকে বিধান পরিষদে উদ্ধব ঠাকরেকে মনোনীত করার জন্য মন্ত্রিসভার পক্ষ থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রাজ্যপাল সেই প্রস্তাবে অনুমোদন না দিয়ে ক্রমশ ঝুলিয়ে রেখেছেন।

এমনিতেই মহারাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি ভয়ংকর। সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে জোর তৎপরতার সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন করোনা মোকাবিলায়। কিন্তু সেখানকার রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারী অকারণে অনিশ্চয়তা তৈরি করে চলেছেন। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল জানান, ‘এই কারণেই আমি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের ভূমিকায় একেবারেই অবাক হইনি।’ অন্যদিকে কংগ্রেস নেতাদের দাবি, অতীতেও দেখা গেছে কংগ্রেস শাসিত রাজ্যে মোদি সরকার নিয়োজিত রাজ্যপাল সরকার ফেলার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

উল্লেখ্য, গোয়া, মণিপুরে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু তা সত্বেও রাজ্যপালকে কাজে লাগিয়ে সেখানে কংগ্রেস যাতে সরকার গড়তে না পারে, সে ব্যবস্থা করেছিল কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি। আদালতের পক্ষ থেকেও রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন উঠেছে। অন্যদিকে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক হয়েছিল তখনই তিনি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখরের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত অভিযোগ জানিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন জানিয়ে পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের ভি নারায়ণস্বামী সেখানকার উপ-রাজ্যপাল কিরন বেদীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য রাজ্যপালের বিরুদ্ধে নালিশ করা নিয়ে কোনো তাপ উত্তাপ পড়েনি এই বিবাদে। বরং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর এর বিবাদ আরো চরমে উঠেছে। একের পর এক পত্রাঘাত চলছে রাজ্যপালের। এ প্রসঙ্গে কপিল সিব্বল রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘এই সব রাজ্যপালেরা আসলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচারের কাজ করেন।’

অন্যদিকে বাংলাতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র রাজ্যপাল এবং শাসক দল দু’পক্ষকেই তীব্র কটাক্ষ করে এদিন বলেে, ‘বিজেপির সর্বভারতীয় নেতারা মুখে যা বলছেন, কিছু রাজ্যপাল রাজভবনে বসে তা বাস্তবায়িত করছেন, গণতন্ত্র বা সাংবিধানিক রীতিনীতির তোয়াক্কা না-করেই। তবে বাংলার রাজ্যপালের সঙ্গে আচরণে রাজ্য সরকারের সতর্ক থাকা উচিত।’ অন্যদিকে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী রাজ্যপাল এবং তৃণমূলসহ অন্যান্য দলগুলিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘বিজেপি জমানায় দেশের সব সাংবিধানিক পদকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হচ্ছে। সংবিধান, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো— কিছুই মানা হচ্ছে না। এ রাজ্যে অতীতেও রাজ্যপালেরা কখনও কেন্দ্রের শাসক, কখনও রাজ্যের বিরোধীদের স্বার্থে কাজ করেছেন। তবে তখন রাজ্যে একটা দৃঢ় সরকার ছিল। এখন তার অভাব।’

আপাতত রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি যথেষ্ট আশঙ্কাজনক। এই অবস্থায় যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপাল পত্রবোমা হেনে চলেছেন একে অপরের বিরুদ্ধে, তা নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজ্যের কঠিন সময়ে এভাবে একে অপরের সঙ্গে বিরোধিতায় না মেতে যদি রাজ্যের পরিস্থিতির দিকে নজর দেওয়া হয়, তাহলে বোধহয় সবদিক থেকেই ভালো হবে। তবে আপাতত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যের রাজ্যপাল কারও পক্ষ থেকেই শান্তি মেনে চলার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। আগামী দিনে মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের তীব্র বিরোধ কোন পর্যায়ে পৌঁছায়, সেদিকেই এখন নজর রাজ্যের সব মহলের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!