এখন পড়ছেন
হোম > অন্যান্য > অ্যানসার প্লিজ – (লাভ স্টোরি) – কলমে অপরাজিতা- অন্তিম পর্ব

অ্যানসার প্লিজ – (লাভ স্টোরি) – কলমে অপরাজিতা- অন্তিম পর্ব


রাত্রে ফোন কথা হয়েছে অভ্রর বাড়ি থেকে জানিয়েছে ছেলের পছন্দ তাই সামনের রবিবার যেন দিন স্থির করতে মেয়ের বাড়ির লোকজন আসেন। নতুন করে দীপশিখাদের বাড়ি থেকে কিছু দেখার নেই আগেই ছেলের বাড়ি গিয়ে সব দেখে এসেছে তাদের পছন্দ। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি হয় বিয়ের দিন স্থির হবে।

দীপশিখা কলকাতায় ফিরেছে বুধবার। সন্ধ্যেতে অভ্র ম্যাসেজ করেছে –

অভ্র – বলছি , ভীষণ সুন্দর লাগছিলো সেদিন শাড়ি পরে ?

দীপশিখা দেখে কিন্তু কোনো রিপ্লাই করে নি। এস এক্সপেকটেড

অভ্র – আরে, কথা বলবে তো, আমি গিয়েছিলাম ভালো লাগে নি, অন্য কেউ হলে ভালো লাগতো ?

দীপশিখা –  আর আমার সাথে কোনো কথা বলবে না। সবটা জানতে , আমি কেমন মেয়ে টেস্ট করছিলে না?

অভ্র – কি? এই কথাটার কোনো মানে হয়?

দীপশিখা – মানে না হওয়ার কি আছে? করেছো তো?

অভ্র – অরে ইয়ার মজা করছিলাম

দীপশিখা – তোমার কাছে সবটা মজা, আমিও ,কিন্তু আমার কাছে সব মজা নয়।

অভ্র – সরি, পুরোটা এক্সপ্লেন করি

দীপশিখা – কোনো দরকার নেই, আমার সাথে আর কথা বলবে না।

অভ্র – এখনো বিয়ে অনেক দেরি, মানে কম করে দেড় মাস , এতদিন না কথা বলে থাকতে পারবো না।

দীপশিখা – আমি বিয়ে ……………………….

অভ্র – কি? কি? করবে না?

দীপশিখা জানে না করার ক্ষমতা নেই, আর কেউ সেটা শুনবে না।

অভ্র – শোনো না সরি,

দীপশিখা – আমি তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাই না , বোঝা গেছে।

অভ্র – বলছি একটা ছোট পারা ছেলেকে কষ্ট দেবে এইভাবে ?

দীপশিখা – আমি যখন সেদিন সব বললাম তখন কেন বললে না ,যে তুমিই সে।

অভ্র – বললে সারপ্রাইস দিতাম কি করে ? শোনো
আমার কোনো কালে ইচ্ছা ছিল না দেখাশোনা করে বিয়ে করার , মেয়ের বাড়িতে যাবো যেন কোনো জিনিস কিনতে এসেছি দোকানে, নেড়েচেড়ে দেখলাম ভালো লাগলো না বললাম না ,ভীষণ বিরক্তিকর, কিন্তু আমার বাড়ি থেকে হঠাৎ করে আবিষ্কার করে আমি নাকি শুভকে বিয়ে করবো , সো যেনতেন প্রকারে একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে হবে।

আমাকে বলেছিলো পেপার এ এডভার্টাইসমেন্ট দেবে , মানা করেছিলাম ,তাতে ফল উল্টো হয়, সবাই ভাবে আমি শুভর জন্য মানা করছি। আমাকে না জানিয়েই এডভার্টাইসমেন্ট দেয় , কয়েকজন যোগাযোগ করে যার মধ্যে তোমার বাড়িও ছিল। পিকচার দেখে কয়েকজনকে সিলেক্ট করে আমি কিছুই জানতাম না। তোমাকে মায়ের খুব ভালোলেগেছিলো সো আগে তোমাকে দেখতে যায় পছন্দ করে। দেন আমাকে পিকচার পাঠিয়ে সব বলে। বাবার কথা যদি তোমাকে আমার পছন্দ না হয় দেন অন্য মেয়ে দেখা হবে তার আগে না ,আমার বেশ লাগে তোমাকে ,তবে আমি মোটেও বলিনি যে তোমাকেই বিয়ে করবো , ওগুলো বাড়াবাড়ি করেছে ।

দীপশিখা – এসে দেখে চলে যেতে

অভ্র – আরে বাবা তা কেন? পিকচার দেখে কাউকে কিছু বোঝা যায় ?
ধার দেখতে খুব ভালো, বাট কথা বার্তা বা মেন্টালিটি আমার পছন্দ সই নাই হতে পারে। সেটা বলছি।

দীপশিখা – আগে

 

অভ্র – দেন একদিন ফেসবুকে স্ক্রল করতে করতে তোমাকে দেখলাম , তোমার প্রোফাইলে পিকচার দেখলাম, কমেন্ট দেখলাম , ডাক্তার অপছন্দ সেটা দেখলাম, খুব ভালো লেগে গেলো , সাথেই ভয় লাগলো আমি দেখতে গেলে আলাদা করে কথা বলার সময় যদি বলো আমার ডাক্তার পছন্দ নয় বিয়ে করবো না, সো এত রিস্ক কেউ নেয় ? তাই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম, প্রপোজ করলাম, তবে আমি সিরিয়াসলি খুঁজে ছিলাম তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা ? শ্রাবণীদির ব্যাপারটা জানতাম না , তোমাদের বাড়ি থেকে বলেছে তোমার দিদি মারা গেছে। আমার বাড়িতেও সেটাই জানে। আমি কিছু বলিনি এই নিয়ে।

দীপশিখা – কিন্তু আমাকে সত্যি বলতে কি হচ্ছিলো ?

অভ্র – তুমি প্রথম থেকে আমাকে ভাও দিচ্ছিলে? আর আমি সেই ছেলেটা বললে তুমি কি কথা বলতে ?আমার ডাক্তার পছন্দ নয় বলে যদি সাথে সাথে রিজেক্ট করে দাও , কেউ কি জেনে বুঝে এসব রিস্ক নেয়?

দীপশিখা – সেদিন যখন বললাম তুমি ব্রাম্ভন কিনা? মিথ্যা বললে কেন?

আবারো –   মিথ্যা বলিনি, শুধু বলেছি আমি হিন্দু, আরে ব্রাম্ভন বাড়িতে জন্মেছি, তাই জন্মসূত্রে ব্রাম্ভন, ছোটবেলায় পৈতে হয়েছে, কিন্তু আমি ওসব গলায় ঝুলিয়ে ঘুরিনা, একটা মন্ত্রও বলতে পারবো না।

 

দীপশিখা – আর কি কি লুকিয়েছো তুমি আমার থেকে?

অভ্র – কি আবার লুকাবো ?

দীপশিখা -সেটাই জানতে চাইছি

অভ্র – কিছুই নেই আমার লুকানোর, যাই হোক এবার তো বলো বিয়ে করবে

দীপশিখা – উপায় নেই, বাড়িতে মানা করলে কেউ শুনবে না তাই নাহলে আমি তোমাকে কোনো মতে বিয়ে করতাম না।

অভ্র – তোমার জ্যেঠু জিন্দাবাদ, তোমার বাড়ির লোকজনকে অনেক অনেক মুচু।

কথা চলেছে ইতিমধ্যে দুবার দেখা করেছে দুজনে। শ্রাবণীও জেনেছে ,না এত কান্ড নয়, শুধু অভ্রর বাড়ি থেকে এডভার্টাইসমেন্ট দিয়েছিলো, সেখানে দীপশিখাকে পাওয়া গেছে সেটুকুই।

এখনো অভ্রর বাড়ি থেকে জানে না যে শ্রাবনী দীপশিখার দিদি, সে বেঁচে আছে,নিজের মতে বিয়ে করেছে বলে এত কান্ড।

বিয়ের দিন উপস্থিত, শ্রাবনী আর অরিত্র দা অভ্রর বাড়িতে এসেছে, বিয়ে দিতে তারা যাবে না। এদিকে কারণ জেনেছে অভ্রর বাবা। তিনি রাগ করে ছেলের বিয়েই ক্যানসেল করে দিচ্ছিলেন, কিন্তু শ্রাবনী কান্নাকাটি করে মানিয়েছে, সে বলেছে অভ্র আর দীপশিখা একে অপরকে খুব ভালোবেসে ফেলেছে, দীপশিখার বিয়ে যদি ভেঙে যায়, জ্যেঠু এই লগ্নেই যার তার সাথে বিয়ে দিয়ে দেবে , ওর বোনের জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।

 

বিয়ের লগ্ন সন্ধেয় ছিল বর বরযাত্রী রওনা করিয়ে দিয়েছেন অভ্রর বাবা। বিয়ে মিটেছে, এর মধ্যে রেজিস্ট্রিও সম্পন্ন হয়ে গেছে। এমন সময় শ্রাবনী আর অরিত্রকে নিয়ে ঢুকলেন অভ্রর বাবা। বাড়ির সবাই অবাক, জ্যেঠু চিৎকার করে শ্রাবনীকে জানালেন যেন এই মুহূর্তে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় সে। অভ্রর বাবা জনালানে শ্রাবনী তাঁর অতিথি, তাঁদেরকে এইভাবে যেন অপমান না করা হয়। আর শ্রাবনীকে নিয়ে তাদেরকে ঠকানো হয়েছে , তাই শ্রাবনী ও অরিত্রকে না মেনে নিলে দীপশিখার সাথে অভ্রর বিয়ে তিনি মানবেন না। আর মানলেও দীপশিখা এই বাড়িতেই থাকবে ,তাকে তিনি নিজের ঘরে তুলবেন না। অভ্র অবাক হয়েছে বাবা এমন বলছে ? কিছু তো কেস কাছে , বোঝার চেষ্টা করছে। দীপশিখার মাথায় বাজ পড়েছে। অভ্র ইশারায় আস্বস্ত করলেও ভয় কাটেনি দীপশিখার তা বোঝাই যাচ্ছে।

অভ্রর বাবার সাথে কিছু তর্ক হলো জ্যাঠুর , কিন্তু অভ্রর বাবা যা উত্তর দিয়েছেন অভ্রও অবাক হয়ে গেছে, বাবা অনেকে কথার পর যা বলছে তা হলো – ব্রাম্ভন ব্রাম্ভন করছেন যার সাথে আপনার ছোট মেয়ের বিয়ে দিলেন সে ব্রাম্ভন কিনা জানেন?

সবাই অবাক, অভ্র ও ,যা বাবা এই বয়সে শুনতে হবে নাকি সে ওর বাবা মায়ের ছেলে নয়, তুলে এনে মানুষ করেছে।

না তা নয়, তিনি যেটা বললেন তাতে বাবার প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা অনেক বেড়ে গেছে অভ্রর – তিনি বললেন, আমার দাদু বড় পন্ডিত ছিলেন ,তিনি বলতেন ব্রাম্ভন পরিবারে জন্মালেই কেউ ব্রাম্ভন হয় না, যার মধ্যে ব্রম্ভ জ্ঞান থাকে সেই প্রকৃত অর্থে ব্রাম্ভন, তা সে যে ধর্মেরই হোক না কেন? যে বর্ণেরই হোক না কেন?

আমার ছেলেকে আমি ব্রাম্ভন বলি না কেননা সে আজ অবধি পৈতে গলায় ঝোলায় না, তার ওয়ালেটে ভরা আছে, বাড়ি এলে আমাকে দেখিয়ে একদিন পরে আবার ওয়ালেটে রেখে দেয়, সে নিজেকে মনে করে বেশি চালাক, ভুলে যায় আমি ওর বাবা। যায় হোক আমার ভয় আছে তাই ওটা এখনো রেখে দিয়েছে নাহলে কোন কালে ফেলে দিতো, একটা মন্ত্র বলতে পারবে ও? কোন পুজোতে কি ফুল লাগে জিজ্ঞাসা করুন যদি বলতে পারে তাহলে কান কেটে ফেলে দেব।

মানে বাবা সব জানে। অভ্র মাথাটা নামালো

অভ্রর বাবা শেষে যা দাবি করলেন, এই মুহূর্তে শ্রাবনীকে মানতে হবে নাহলে তিনি পুলিশ ডাকবেন, এখনই শেষ নয়, দীপশিখার পিসির মেয়ে যাকে ভালোবাসতো তাকেও তার সাথে বিয়ে দিতে হবে, শ্রাবনীর কাছে জেনেছেন তিনি যে সেও এখনো বিয়ে করেনি।

বাড়ির আর লোকেদের তেমন অসুবিধা নেই মেনে নিতে , শুধু জ্যাঠুই ব্রাম্ভন ভ্ৰাম্ভন করে, অনেক বার বুঝিয়েছে দাদারা কাজ হয়নি, ভয়ে জ্যাঠিমা, মা চুপ করে থাকে,কিন্তু মনে মনে চায় যে শ্রাবনীকে মেনে নিক। তবে ছোট বৌদি সঙ্গে দে জ্যাঠুর, কেননা বড় বৌদিকে টেক্কা দিয়ে তাকে শ্বশুরের কাছে ভালো হয়ে, কাছের মানুষ হয়ে থাকতে হবে – যাতে শ্বশুর তাঁর স্বামীকেই শ্বশুরের এতবড় ব্যাবসার উত্তরাধিকারী করে যায়, তার হাতেই সব ক্ষমতা দেয়, বড় ভাসুর শুধু তার স্বামীর অধীনে কাজের লোক হয়ে থাকে। সবাই জানে একথা, হয়তো জ্যেঠুও। ছোট বৌদির প্রতিপত্তি বেশি এ বাড়িতে জানে দীপশিখা। জ্যেঠু মানবে কি? নাকি তাকেও এ বাড়িতে থাকতে হবে চিরকাল।

না দীপশিখার ভয় সত্যি হয়নি। অনেক কান্ড করে অবশেষে অনিচ্ছা স্বত্তেও মেনে নিয়েছেন শ্রাবনীর জ্যেঠু। যাই হোক, অবশেষে বিয়ে মিটেছে। বধূ আগমন, বৌভাত শেষ হয়েছে।

ফুলশয্যায় বিছানায় বসে আছে দীপশিখা , অভ্র – একটা কথা ছিল।

দীপশিখা – বলো

অভ্র – আমার দুটো বেবি, তোমার দুটো ,কত হয় ?

দীপশিখা – ২,

অভ্র – আচ্ছা ? এবার বলো বেবি কি করে হয় ?

দীপশিখা – কিছু না বলে উল্টে শুয়ে পড়লো , আবারো ওর পিঠে মাথা দিয়ে শুয়ে বললো – অ্যানসার প্লিজ

অ্যানসার প্লিজ – (লাভ স্টোরি) – কলমে অপরাজিতা-পর্ব ৯

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন – আবার অন্য গল্প নিয়ে খুব শীঘ্র ই আসছি।

 

আমাদের অন্য গল্প পড়তে ক্লিক করুন – গল্পে আড্ডায় ……....……..

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!