এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > কেষ্ট গড়ের অসুখ সেরেও কি সারছে না ?দোলাচলে তৃণমূল

কেষ্ট গড়ের অসুখ সেরেও কি সারছে না ?দোলাচলে তৃণমূল


প্রকৃত অর্থে নিরাময় হয়েছে নাকি অমন মনে হচ্ছে! আসলে রোগ বাসা বেধেছে অস্থি মজ্জায়। যার কারণস্বরূপ বলা যায়, ক্রমান্বয়ে দেহের বিভিন্ন ভাগ প্রায় অসাড় হয়ে পড়ছে। বাংলার রাজনীতিতে বেশ কিছু মুখরোচক শব্দের জন্মস্থান বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে কেষ্টগর( বীরভূম)। যেমন, পাচন, ঢাকের চরাম চড়াম বোল, বিখ্যাত নকুলদানা, ইঁদুরের বাচ্চা ইত্যাদি। কিন্তু কোনো শব্দের মায়াজাল যেন স্পর্শ করতে পারছে না রোগীর ব্যারামকে। সারলেও ক্ষতস্থান পূর্ণ হতে চাইছে না। তাই স্বাভাবিকভাবেই চিকিত্সকরা যে মানসিক অস্বস্তিতে ভুগবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ক্রমাগত নিঃশব্দতা এবং রোগীকে শুধু নজরে রাখা সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। আর যার কারণে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে রোগীর আত্মীয় স্বজনদের কপালে। বিগত 2019 সালের লোকসভা ভোটে সারা বাংলা জুড়ে প্রবল উত্থান ঘটেছে বিজেপির। 2 টি আসন বিশিষ্ট ভারতীয় জনতা পার্টি এক ধাক্কায় তাদের আসন 18 তে পৌঁছে দিয়েছে। শুধু তাই নয়, সারা বাংলা জুড়ে অনেক লোকসভা কেন্দ্রতেই সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। যা আগামী দিনের নির্বাচনগুলিতে যা শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে অনেকটাই চিন্তার মুখে ফেলতে পারে।

কিন্তু বঙ্গ রাজনীতিতে কেষ্ট গড় হিসেবে পরিচিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রিয় বীরভূম এসে সেই ঝড় কিছুটা থমকে গেলেও থেমে যে যায়নি, তার প্রমাণ মিলেছে লোকসভা ভোটের বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে। বীরভূম জেলার 11 টি বিধানসভা আসনের মধ্যে 6 টিতে এগিয়ে তৃণমূল, কিন্তু রীতিমত রীতিমত শাসক দলকে চাপে ফেলে বিজেপির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে 5 টিতে। বিধানসভার নিরিখে যা শাসক দল থেকে মোটে একটি কম। এর মধ্যেও বোলপুর, সিউরি, দুবরাজপুর, সাঁইথিয়া, রামপুরহাটের পুর এলাকায় অনেক এগিয়ে রয়েছে গেরুয়া শিবির।

তৃণমূলের চিন্তা বাড়িয়ে গেরুয়া ঝড় থেকে রক্ষা পায়নি বাংলার দোদণ্ডপ্রতাপ বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ওয়ার্ড। অনুব্রত বাবুর খাস তালুকে এবার পদ্ম ফুটেছে। কিন্তু এলাকা দখলের কোনো খামতি তৃণমূল রাখেনি। ইলেকশন কমিশনের নজরদারি থাকা সত্ত্বেও ভোটের দিন কিন্তু স্বমহিমায় দেখা গিয়েছিল কেষ্টকে।

তার নিজের 15 নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর শিবনাথ রায় এলাকায় ঘরের লোক নামে পরিচিত। এলাকার মানুষের দরকার, প্রয়োজনে সর্বদা তাকে পাশে পাওয়া যায় বলেও খবর। সাইকেলে করে ঘাড়ে ব্যাগ নিয়ে তার মধ্যেই শংসাপত্র সহ যাবতীয় দরকারি কাগজপত্র রাখেন শিবনাথবাবু। যাতে সাধারণ মানুষের কোনো সমস্যা না হয়।

রাজনৈতিক কারণে যারা নিরাপত্তার প্রবল ঘেরাটোপে থাকা অনুব্রত বাবুর সঙ্গে দেখা করতে পারেন না, তাদের কাছে সমস্যার সমাধান করেন শিবনাথ। কিন্তু এত কিছুতেও শেষ রক্ষা হল না। তথাকথিত সেই 15 নম্বর ওয়ার্ডে এই পদ্ম শিবিরের কাছে পিছিয়ে পড়তে হল ঘাসফুল শিবিরকে। যা রীতিমতো বিগ দিচ্ছে শাসক দলকে। কোনো চিকিৎসা পদ্ধতিই এই রোগ সারিয়ে তুলতে পারছে না।

রাত্রিবেলা অতি সন্তর্পনে এলাকার সাধারণ মানুষের মধ্যে কান পাতলে শোনা যায় ফাঁকা বুলি আর ধমকানো চমকানি দিয়ে জনগণের রায়কে কী চেপে ধরে রাখা যায়! কেউ একজন এত বড় মাপের নেতা হয়ে গেছে যার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে ভয় হয় সাধারণ মানুষের। তাই মুখ না খুলতে পারলেও ভোটেই মানুষ জবাব দিয়েছে।

শাসক দলের কাছে এটা যে কোনো বৈদ্যুতিক ঝটকায় চেয়ে কম নয়, শাসক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একাধিক জায়গা থেকেই এরকম অসন্তোষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। যেটা 100 দিনের কাজ হোক, কিংবা বিভিন্ন সরকারি সুবিধা। গীতাঞ্জলি, অধিকার ইত্যাদি প্রকল্পের মতো গৃহ নির্মাণ প্রকল্প অথবা কাজের ঠিকা, সর্বত্রই একটা বিশেষ নেতৃত্ব শ্রেনীকে প্রসন্ন না করলে কারও কপালে যে শিকে ছিঁড়বে না, তা বলাই বাহুল্য। কমবেশি সব ক্ষেত্রেই শাসক দলের নেতাকর্মীরা এইরকম টুকিটাকি দুর্নীতির অভিযোগে রোষের পাত্র হয়েছে সাধারণ মানুষের।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

আর দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়া এই অসন্তোষের আগুনকে যে বিরোধীরা কাজে লাগাচ্ছে, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইসলামবাজার থেকে শুরু করে সিউড়ি, সাঁইথিয়া থেকে শুরু করে লাভপুর, মহম্মদ বাজার সর্বত্রই কাটমানি অভিযোগে জর্জরিত শাসক দল। বহিঃপ্রকাশ ঘটছে অসন্তোষের। যা প্রতিফলিত হচ্ছে নির্বাচনের বাক্সে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।

গ্রাম দখলের রাজনীতি থেকে শুরু করে পেশিশক্তির প্রবল আস্ফালন বীরভূমের রাজনীতিতে নতুন কিছু নয়। বাংলার মসনদে পটপরিবর্তন ঘটেছে। বামফ্রন্ট সরে গিয়ে তৃণমূল এসেছে। কিন্তু বদলায়নি বীরভূমের ছবি। সেদিনও মাঠের মধ্যে বন্দুক নিয়ে দাপাদাপি করতে দেখা যেত ক্যাডারদের, আজও তা দেখা যায়। শুধু পরিবর্তন হয়েছে রঙের। যা নিয়ে আলোচনা করতে দেখা যাচ্ছিল বীরভূমের একাধিক ক্ষুদ্র দোকানদার থেকে শুরু করে ছোট ব্যবসায়ীদের।

গত 2014 সালে বোলপুরে ডাকবাংলোর মাঠে জনসভা থেকে নিমাই দাস, শেখ রেজাউলের মত প্রায় 500 কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। পরে কয়েক বছর জ্বলতে শুরু করে পাড়ুই গ্রাম। আবার সেই ছবি পাল্টে যায়। সেই নেতারা শাসক দলে ফিরে আসে। তাই বিরোধী শূন্য পাড়ুই যে শাসকদলের কাছে মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠবে এবং সেখানে কোনো সংঘাতের আবহাওয়া থাকবে না, তা তো বলাই বাহুল্য।

কিন্তু বীরভূমের অন্য অংশ, যেখানে প্রায় প্রতিদিন শাসক-বিরোধী তরজা, বোম বন্দুকের লড়াই ওষ্ঠাগত করেছিল সাধারণ মানুষের প্রাণ, এবারের নির্বাচনের ভোটের ফল যে সেই আতঙ্কে থাকা দিনগুলির প্রতিফলন ইতিমধ্যেই বুঝতে শুরু করেছে সকলে। বাংলার রাজনীতির শক্তিপীঠ আজ শাসকের হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কায় প্রতিদিন ভুগছে। ওষুধ রয়েছে, কিন্তু কাজে দেবে কিনা তাই নিয়ে চিকিৎসকদের মনে প্রশ্ন সদাই উঠছে। এই প্রসঙ্গে বীরভূম বিজেপির নতুন জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মন্ডল বলেন, “ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলে এমন কাউকে নেওয়া উচিত নয়। তাই আগামীতে শুদ্ধিকরণের কথা মাথায় রেখেই বিজেপিতে নবাগতদের নিয়োগ করা হবে বলে।”

অন্যদিকে জেলা বিজেপির কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মন্ডল বলেন, “জেলা সভাপতি যা বলেছে তাই একদম ঠিক। কিন্তু তৃণমূল যে ভাষায় কথা বলবে আমরাও সেই ভাষায় উত্তর দেব।” এরই মধ্যে বীরভূম জেলায় যে ক্রমশ ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনৈতিক হাওয়া বইতে শুরু করেছে অজয়, ময়ূরাক্ষীর ধার ঘেঁষে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। রাঙ্গামাটিতে শান্তিনিকেতনের কাটুম কুটুমের জায়গা ক্রমশ বজরংবলী নিয়ে নিচ্ছে।

আর এই বিভাজনের হাওয়া যে ক্রমশ বাড়ছে তা নজর কেড়েছে সকলেরই। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা রোগটাকে আমল দিতে নারাজ হলেও ছোটখাটো ভাইরাল ফিভার বলে অবজ্ঞা করলেও, ভাইরাল ফিভার ক্রমশ যে প্রকৃতি নিয়ে নিচ্ছে তা মহামারীতে না পরিণত হয়ে যায় সেই আশঙ্কাতেই ভুগছেন চিকিৎসকেরা। তাই এখন সবকিছুকে মাথায় নিয়েও অবশেষে সমস্ত চিকিৎসকেরা হিন্দি সিনেমার ডায়লগের মত বলে ওঠেন কি না, যে “টেনশন লেনে কা নেহি, দেনে কা চিজ হে!” এখন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!