এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > পুরুলিয়া-ঝাড়গ্রাম-বাঁকুড়া > মুখ্যমন্ত্রী মিউটেশন ফী মকুব করলেও আধিকারিকরা নিয়েই যাচ্ছেন, অভিযোগ গেল খোদ কৃষিমন্ত্রীর কাছে

মুখ্যমন্ত্রী মিউটেশন ফী মকুব করলেও আধিকারিকরা নিয়েই যাচ্ছেন, অভিযোগ গেল খোদ কৃষিমন্ত্রীর কাছে


মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কৃষি জমির মিউটেশন ফি মুকুব করার পরেও কিছুতেই কমানো যাচ্ছে না দালাল এবং ভূমি দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বহর। সম্প্রতি বাঁকুড়ার রবীন্দ্রভবনে আয়োজিত এক সভায় চাষীদের মুখে ভুরি ভুরি অভিযোগ শুনে চোখ কপালে ওঠে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার এবং কৃষিমন্ত্রী আশিষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যদিও অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে কোনো মেলেনি কোনো সদুত্তর।

আর তাই এবার সরকারি নির্দেশ মতো চাষীদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ভূমি দপ্তরের অফিসে ফ্লেক্স টাঙানো হয়েছে কিনা প্রদীপবাবু জানতে চাইলে সভায় উপস্থিত জেলা প্রশাসনিক কর্তারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন। এরপর সভামঞ্চ থেকেই প্রদীপবাবু রাজ্য ভূমি দপ্তরের সচিবদের মোবাইলে মেসেজ করে বিষয়টির সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য দিতে বলেন। এরপর জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস আশ্বাস দেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যেই বাঁকুড়ায় লিফলেট এবং ফ্লেক্স ছাপিয়ে প্রচার করা হবে। অবিলম্বে শিবির করে জমির মিউটেশনের ব্যবস্থা করার জন্য কৃষিমন্ত্রী এদিন জেলাশাসককে নির্দেশ দেন।

এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী, বিধায়ক অরূপ খাঁ, শম্পা দরিপা প্রমুখরা। এদিন বাঁকুড়া জেলার প্রতিটি ব্লকের চাষীদের কাছ থেকে সরাসরি সমস্যা শোনার জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি সভার আয়োজন করা হয় রবীন্দ্র ভবনে। দুপুর ১২ টা নাগাদ শুরু করা হয় সভার আলোচনা। সভাতে অভিযোগের বাঁধ ভেঙে পড়ে চাষীদের।

আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

জঙ্গলমহলের রাইপুর, রানিবাঁধ প্রভৃতি ব্লকে বেশকিছু এলাকায় আরএলআই প্রকল্পে পাম্প বসানো হলেও তা এখনো চালু করা হয়নি, এমটাই অভিযোগে জানায় চাষিরা। সারেঙ্গা, সিমলাপাল প্রভৃতি ব্লকের বেশ কিছু চাষি কংসাবতী সেচখালের জল না পাওয়ার অভিযোগে সরব হন। সেচখালের শেষ অংশ পর্যন্ত জলাধার থেকে ছাড়া জল যাচ্ছে না বলে চাষিরা দাবি করেন। ওদিকে, পাশের ব্লকে মুকুটমণিপুর জলাধার থাকলেও হীড়বাঁধের চাষিরা তার সুবিধাই ভোগ করতে পারছেন না। জলের অভাবে চাষাবাস পন্ড হচ্ছে তাদের।

বিষয়টি নিয়ে খরাপ্রবণ ওই ব্লকের চাষিরা এদিন আধিকারিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এদিকে, ছাতনা ও শালতোড়া ব্লকে জোড়বাঁধে চেকড্যাম তৈরির দাবি তোলেন চাষিরা । খরাপ্রবণ ওই এলাকায় পুরনো পুকুর সংস্কারের পাশাপাশি নতুন জলাশয় তৈরির দাবিও করেন তারা। এদিকে, পাত্রসায়রের ডুমনি মৌজায় একটি বড় জলাশয় সংস্কারের মিথ্যে আশা দিয়ে বাম জামানায় অর্থ অপচয় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ চাষীদের। ওই জলাশয় থেকে বর্তমানে চাষিরা সেচের জন্য কোনো জলই পাচ্ছেন না। তাই ফের সেটির সংস্কারের প্রয়োজন বলে কৃষকরা জানান।

এছাড়া কিষাণ ক্রেডিট কার্ড থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি চাষিদের ঋণ দানে সহায়তা করছে না বলেও অভিযোগ ওঠে। সাবমার্সিবলের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা উদাসীন – এমনটাও অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, সূর্যমুখী এবং মাশরুম বাজারে পাঠানোর সুবিধা না থাকায় সেসব চাষে আগ্রহ কমছে চাষীদের বলে ক্ষোভ উগরে দেন চাষিরা। মিডডে মিলে যাতে মাশরুম রান্নার ব্যবস্থা করা হয় – সে আবেদনও এক চাষি জানান এদিন। তাঁর ওই পরামর্শ খতিয়ে দেখা হবে বলেও জেলাশাসক আশ্বাস দেন।

পাশাপাশি, খাতড়া মহকুমায় মাটি ও জল পরীক্ষাগার চালুর দাবি তোলেন চাষীরা। ওই মহকুমার স্কুল কলেজে কৃষিবিদ্যা বিষয় চালু করারও বিষয়েও দাবী তোলা হয়। সঙ্গে, গোবিন্দভোগ ধানের সহায়ক মূল্য ঘোষণার দাবিতেও চাষিরা সরব ছিলেন এদিন। খরা কবলিত বাঁকুড়ায় জলের অভাবে চাষের কাজ ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্থ হয় – অথচ ইন্দাসে ডিভিসির সেচখালের জল অপচয় হয়েই যাচ্ছে, আর সে ব্যাপারে নজর নেই প্রশাসনের – বলেও অভিযোগ ওঠে।

সব অভিযোগ শুনে কৃষিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে চাষিদের ঋণদান থেকে বঞ্চিত করছে। তাই সমবায়গুলিকে সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে। বাঁকুড়ায় সিড হাব তৈরির জন্য একটি কমিটিও গড়া হয়েছে। প্রতিটি সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে ধান ঝাড়াই বাছাইয়ের জন্য একটি করে মেশিন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

অন্যদিকে, প্রদীপবাবু বলেন, শস্যবিমার ক্ষেত্রে চাষিদের প্রিমিয়ামের টাকা সরকারের কাছ থেকেই পায়। বাঁকুড়ার কিছু সমবায় চাষিদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগে জানা গিয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে আধিকারিকদের। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের ক্ষেত্রে বিন্দু সেচ প্রকল্পের সব খরচ সরকার বহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কৃষিজমির মিউটেশন ফি মুকুবের জন্য গত জুনই মাসে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু কিছু মধ্যস্বত্তভোগী এখনো চাষিদের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!