এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > কলকাতা > দিদিকে বলো কর্মসূচিতে কড়া নজরদারি তৃনমূলের, জেনে নিন বিস্তারিত

দিদিকে বলো কর্মসূচিতে কড়া নজরদারি তৃনমূলের, জেনে নিন বিস্তারিত

 

মালদহ জেলা তৃণমূল নেতৃত্বদেরকে বেশ কয়েকদিন আগেই রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্বের তরফ থেকে কলকাতায় ডেকে রীতিমতো ধমক দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে একেবারে এলাকাভিত্তিক সাংগঠনিক কার্যক্রমে কি কি লাভ হয়েছে! তা নিয়ে প্রচন্ড পরিমানে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় মালদহ জেলা তৃণমূল নেতাদের।

বস্তুত, কলকাতার একটি বহুতল ভবনে আয়োজিত তৃণমূল কংগ্রেসের ওই দলীয় আলোচনা শিবিরে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সি থেকে শুরু করে উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের রাজনৈতিক রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোর। কার্যত এই বৈঠকের মাধ্যমে জেলা নেতৃত্বদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তাদের গতিবিধির উপরে এবং দলীয় কর্মসূচিগুলি বাস্তবায়নের উপরে কতটা নজর রয়েছে প্রশান্ত কিশোরের টিমের।

আর এবার রাজ্য নেতৃত্বদের কাছে দলীয় বিভিন্ন ব্যাপারে সমালোচিত হওয়ার পরেও প্রকৃত অর্থে জেলাতে ঠিকঠাক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে কিনা, সেদিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ নজর রাখতে শুরু করেছে টিম পিকে। এছাড়াও দিদিকে বলো কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে কোন নেতা কতখানি গাফিলতি করছেন, সেদিকেও নজর রয়েছে তাদের। এক্ষেত্রে শুধু মাঠে নেমে নয়, অন্যান্য মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়েও তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছ ওই টিম।

কাজেই দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের এবং নির্বাচনী রণনীতিকারের নজরদারির কাজে কোনো রকম ভাবেই গাফিলতি রাখার উপায় নেই জেলা নেতৃত্বদের। আর সেই কারণেই কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে মালদহ জেলা নেতৃত্বরা একে অপরের সঙ্গে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করে দিয়েছেন। পাশাপাশি যেভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ খবর রাজ্য স্তরের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে, তাতে করে ফাঁকি দেওয়ার যে কোনো রকম অবকাশ নেই, তাও টের পেয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। ইতিমধ্যেই সেই কারণে সমস্ত রকমের প্রস্তুতি গ্রহণ করে কর্মসূচি পালনের উদ্দেশ্যে মাঠে নামার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করে দিয়েছে জেলা তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা।

আমাদের নতুন ফেসবুক পেজ (Bloggers Park) লাইক ও ফলো করুন – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের টেলিগ্রাম গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে

আমাদের সিগন্যাল গ্রূপে জয়েন করতে – ক্লিক করুন এখানে



আপনার মতামত জানান -

এই বিষয়ে মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম নেতা তথা প্রাক্তন জেলা সভাপতি দুলাল সরকার ওরফে বাবলা সরকার বলেন, “প্রশান্ত কিশোরের লোকজন দিদিকে বলো কর্মসূচির ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে আমিও শুনেছি। দলের নির্দেশ মত সকলকে কাজ করা উচিত। দিদিকে বলো কর্মসূচি রূপায়নের ক্ষেত্রে গাফিলতি বরদাস্ত করবে না এই কথা কলকাতার বৈঠকে রাজ্য নেতৃত্ব স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন।”

অন্যদিকে আবার মালদহ জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি অম্লান ভাদুরি বলেন, দিদিকে বলো কর্মসূচি ঠিকঠাক পালন করা হচ্ছে কিনা, তা দেখার জন্য দল জেলা সভানেত্রীর পাশাপাশি আমাকেও দায়িত্ব দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে জেলায় রেকর্ড কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এত অল্প সময়ে এর আগে এত বেশি কর্মসূচি কখনও পালন করা হয়নি। আগামী 18 জানুয়ারি থেকে আমরা ব্লক স্তরের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করব। প্রতিটি জায়গায় গিয়ে বৈঠক করা হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন মালদহ জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেস সভাপতি।

পাশাপাশি তিনি এও জানান, প্রত্যেকটি বৈঠক করা হবে ব্লক ও অঞ্চলের বৈঠকে। তিনি নিজেই উপস্থিত থাকবেন। মালদহ জেলার তৃণমূল নেতার বক্তব্যের মাধ্যমে জেলায় দিদিকে বলো কর্মসূচি রূপায়নের ক্ষেত্রে কতটা শক্ত হাতে হাল ধরেছে রাজ্য নেতৃত্ব, যার কারণে একেবারে অঞ্চল, সমাবেশ পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে হচ্ছে জেলা নেতৃত্বদেরকে। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম নেতা এবং ইংরেজবাজার পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি ওরফে নন্দুবাবু জানিয়েছেন, “গত এক সপ্তাহে ইংরেজবাজার শহরের দুটি ওয়ার্ডে আমরা দিদিকে বলো কর্মসূচি রূপায়ণ করেছি। দলীয় নির্দেশ পালনে কোনো রকম খামতি রাখা হবে না। রাজ্য নেতৃত্বের কথামত আমরা চলব।”

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনে উত্তরবঙ্গে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, তাতে করে আগামী 2021 সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরবঙ্গ কিন্তু অনেকটাই রক্তচাপ বাড়িয়ে রেখেছে শাসকদলের। এক্ষেত্রে মালদহ জেলা এমন একটি জেলা, যা বারবারই প্রত্যাখ্যান করেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে।

বস্তুত, কংগ্রেসের আধিপত্য ছিল মালদহ জেলায়। কিন্তু এবার মালদহ জেলা কংগ্রেসের আধিপত্যে অর্ধেক থাবা বসিয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। মালদহের দুটি লোকসভা আসনের মধ্যে একটি আসনে জয়যুক্ত হয়েছে জাতীয় কংগ্রেস। অপর আসনে জয়যুক্ত হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তৃণমূল কংগ্রেসকে কিন্তু শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছে। তাই লোকসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জেলায় যেন তৃণমূল কংগ্রেস অধিকাংশ আসনে জয়যুক্ত হতে পারে।

রাজ্য নেতৃত্বের পাশাপাশি প্রশান্ত কিশোরের কাছেও সেটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সেই কারণেই দলীয় নেতৃত্বদেরকে নজরদারির মধ্যে দিয়ে এলাকায় কাজ করতে নির্দেশ দিতে দেখা যাচ্ছে দলকে। এক্ষেত্রে বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টির যেন নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এলাকা দখল না করতে পারে, তার দিকেও নজর রাখা হচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে। গোটা ব্যাপারে মালদহ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের একজন নেতৃত্ব মূলত দিদিকে বলো কর্মসূচি জনসংযোগের উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী মালদহ জেলার প্রত্যেকটি অঞ্চলে নেতা-নেত্রীদের যাওয়ার কথা রয়েছে।

জনসংযোগের কর্মসূচিকে সফলভাবে রূপায়ন করার জন্য এলাকার সুধী নাগরিকদের কাছে অর্থাৎ গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে শহর এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে যাওয়ার পাশাপাশি একেবারে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাদের বাড়ির উঠোনে গিয়ে দলের নেতাদেরকে নির্দেশ দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষ কি পরিস্থিতিতে রয়েছে, তাদের কি প্রয়োজন, সেই ব্যাপারে সম্যক ধারণা থাকা উচিত তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের।

রাজ্য নেতৃত্ব এবং নির্বাচনী রণনীতিকার প্রশান্ত কিশোরের মত অনুযায়ী, এতে করে এলাকার বাস্তবিক মানচিত্র গঠন করতে সুবিধা হবে দলের। কিন্তু রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মনে অন্য চিন্তার বিষয় হল, মালদহ জেলাতে বরাবরই গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জন্য অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে। আর সেই কারণেই আগামী দিনে দিদিকে বলো কর্মসূচিতে কতটা এক হয়ে কাজ করতে পারবে জেলা নেতৃত্ব! সেদিকে অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে বিশেষজ্ঞদের।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!