এখন পড়ছেন
হোম > রাজ্য > শিক্ষা দপ্তরে চিঠি, বিধায়ককে আবেদন – তবুও শিক্ষিকার দেখা নেই ফুরফুরার স্কুলে

শিক্ষা দপ্তরে চিঠি, বিধায়ককে আবেদন – তবুও শিক্ষিকার দেখা নেই ফুরফুরার স্কুলে

দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক সংকটে ভুগছে ফুরফুরার নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়। দেড় দশক ধরে শিক্ষক নিয়োগ হয় না ফুরফুরায়। পড়ুয়ার সংখ্যা পাঁচশোর বেশি অথচ শিক্ষিকার মাত্র পাঁচ জন। তাও তাঁর মধ্যে একজন পার্শ্বশিক্ষিকা এবং অন্যজন কর্মশিক্ষার শিক্ষিকা। অঙ্ক,বিজ্ঞান,ভূগোল সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে কোনো শিক্ষিকাই নেই। প্রায় দিন ফাঁকা ক্লাস কাটায় পড়ুয়ারা। রুটিনের কোনো বালাই নেই প্রধানা শিক্ষিকা মৃদুলা হালদার ছাত্রীদের বিভিন্ন প্রকল্প সামলানোর পর কখনো ইংরাজি আবার কখনো বিজ্ঞান ক্লাস নেন। তবে তাতেও অনিয়ম। এতোটাই বেহাল দশা যে একজন শিক্ষিকাকে পাশাপাশি দুটি ক্লাস নিতে হয়। এর মাঝে কোনো শিক্ষিকা ছুটি নিলে তো আর কথাই নেই। সমস্যা আরো বেশি হয়। এভাবেই পঠনপাঠন চলছে ফুরফুরায়। এর জেরে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে। এ বছর ক্লাসে পড়ার সুযোগ না পেয়েই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে পড়ুয়ারা। আগামী বছর এই স্কুলের ৮৫ জন ছাত্রী মাধ্যমিকে বসবে। স্কুলের শিক্ষক সমস্যা নিয়ে মিডিয়ার সামনে সরব হল স্কুল পড়ুয়ারাই। দশম শ্রেনীর ছাত্রী ফাহিমা জেসমিন সিদ্দিকি জানায়,আমার গৃহশিক্ষক নেই। স্কুলই ভরসা। কিন্তু দু’টো বা তিনটের বেশি ক্লাস হয় না। একটাও ক্লাস হল না, এমন দিনও গিয়েছে।’’একই অভিযোগ অষ্টম শ্রেণির সহেলি ধাড়া, সিমরন খাতুনদেরও।

প্রধান শিক্ষিকার তরফ থেকে জানা গিয়েছে,দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ার সমস্যার কথা জানিয়ে বহুবার শিক্ষা দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এলাকার বিধায়ক স্নেহাশিস চক্রবর্তীও এ ব্যাপারে বিশেষ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিয়োগের ব্যাপারে সরকারের এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। এর জেরে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে স্কুলের ছাত্রীরা। দফায় দফায় ক্ষোভ জানিয়েছে অভিভাবকেরারও। তাঁদের দাবী,ফুরফুরার উন্নয়ন নিয়ে রাজ্যসরকার অনেক বড় বড় কথা বলেছে একসময়। অথচ ফুরফুরা পঞ্চায়েতের একমাত্র মেয়েদের স্কুলে শিক্ষক নেই,সে ব্যাপারে কোনো খেয়াল নেই রাজ্য সরকারের। শিয়াখালা থেকে জঙ্গিপাড়ার মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকায় কোনো মেয়েদের স্কুল নেই। এলাকাটি পিছিয়ে আছে আর্থ সামাজিক দিক থেকেও। হিসাবে উঠে এসেছে, ছাত্রীদের মধ্যে ৪২% তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। সংখ্যালঘু মেয়েদের হারও একই। তফসিলি উপজাতির মধ্যে ৭.২৫% ওবিসি। সাধারণ জাতিভুক্ত ছাত্রী ৫.৬৮%। জানা গিয়েছে শেখ সাইফুদ্দিন স্কুলের গেটের সামনে ঝালমুড়ি বিক্রি করে। তাঁর তিন মেয়ে এই স্কুলে পড়ে। স্কুলে গ্রুপ ডি-র কর্মী না থাকায় স্কুলের কাজ তিনিই করে দেন। অভিযোগে তিনিও জানান,মেয়েকে মানুষ করতে স্কুলে পাঠিয়েছেন তিনি। অথচ স্কুলে ক্লাসই হয় না।

ফেসবুকের কিছু টেকনিকাল প্রবলেমের জন্য সব খবর আপনাদের কাছে পৌঁছেছে না। তাই আরো খবর পেতে চোখ রাখুন প্রিয়বন্ধু মিডিয়া-তে

এবার থেকে প্রিয় বন্ধুর খবর পড়া আরো সহজ, আমাদের সব খবর সারাদিন হাতের মুঠোয় পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটস্যাপ গ্রূপে – ক্লিক করুন এই লিঙ্কে

স্কুল সূত্রের খবর থেকে জানা গিয়েছে,কয়েক দশকের পুরানো এই স্কুলে প্রথমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ শ্রেণি ছিল। পরে সেটি জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয় হয়। ২০১১ সাল নাগাদ সেটি মাধ্যমিক স্কুলে পরিনত হয়। এই স্কুলে অঙ্কের শিক্ষক অবসর নিয়েছেন তাও প্রায় দু বছর হল। জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষিকা অবসর-রতা সাড়ে চার বছর ধরে। নবম দশম শ্রেণির ইতিহাস পড়ানোর জন্য কোনো শিক্ষিকা নেই। পার্শ্ব শিক্ষিকা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্তই পড়াতে পারেন। স্কুলের এরকম বেহাল দশার নিরিখে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের দফতরের তরফ পরিদর্শন করা হয়। আটটি পদে নিয়োগ করার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে জানায় বিদ্যালয় পরিদর্শকরা। কিন্তু ফুরফুরার স্কুলে শিক্ষিক নিয়োগের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নিতে দেখা যায়নি শিক্ষা দপ্তরকে। সদ্য জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের পদে যোগ দেওয়া সুব্রত কুমার সেন আশ্বাস দিয়ে বলেন,”সমস্যার সমাধান করতে নিশ্চয়ই উদ্যোগী হব।” এখন কতোদিনে ফুরফুরার নারায়ণী বালিকা বিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষিকা নিয়োগ হবে সেদিকেই তাকিয়ে পড়ুয়ারা। তবে ফুরফুরার স্কুলের শিক্ষিকা সংকট রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশারই প্রমাণ দিচ্ছে,এমনটাই মনে করছেন ওয়াকিবহালমহল।

আপনার মতামত জানান -

Top
error: Content is protected !!